নৌকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে মাথা কামাইয়া দিমু

বরগুনায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের মাথা ন্যাড়া ও হাত ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) জেলার দলীয় কার্যালয়ে বিশেষ সভায় এ হুমকি দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। সভায় বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ মো. ওয়ালি উল্লাহ অলি।
ওয়ালি উল্লাহ তার বক্তব্যে বলেন, এই মুহূর্তে একটাই মূল্য, শেখ হাসিনার সম্মান। শেখ হাসিনার নৌকার দিকে যারা ষড়যন্ত্রের হাত বাড়াবে; তাদের হাত ভেঙে দেওয়া হবে। আমরা এখানে যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছি; সেগুলো যদি সভাপতি অনুমোদন করেন, তাহলে সমাধান আসবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের দল কখনো হারে না। হারলেও দলীয় কোন্দলের কারণে। দলের কিছু নেতাকর্মী গ্রামগঞ্জে বলে বেড়ায়, এই নৌকা সেই নৌকা না। এই দল সেই দল না। কিন্তু এই নৌকা শেখ হাসিনার নৌকা। নৌকার নির্বাচন যারা না করবে; তাদের মাথায় চুনকালি দিয়ে কামাইয়া (ন্যাড়া) দিমু। ২৬ তারিখের পর আমরা তাদের বহিষ্কার করমু। তারা আর কোনোদিন আওয়ামী লীগ করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, যে যতই ষড়যন্ত্র করুক না যেকোনো বিনিময়ে বরগুনা সদর উপজেলার নয় ইউনিয়নে নৌকা জয়ী হবে। আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। আপনাদের মধ্যে যেন কোনো দোষ না থাকে। আমরা জাহাঙ্গীর (জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) এবং শম্ভু দা’র (জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য) সঙ্গে কথা বলে প্রশাসনকে ঠিক করব।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনও চায় বরগুনা সদরের সবগুলো ইউনিয়নে নৌকা জয়ী হোক। সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন নয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা।
তবে সন্ধ্যায় মুঠোফোনে সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিশেষ সভায় এমন কথা বলিনি। তবে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে কিছু কথা বলেছি।
সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ মো. ওয়ালি উল্লাহ অলি বলেন, ভিডিওতে কোথাও আমি এমন কথা বলিনি। আরেকজন কি বলেছেন; সেটি নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করা হলে বিব্রত হই। মাথা ন্যাড়া করা কিংবা হাত ভেঙে দেওয়ার কোনো বক্তব্য আমি দিলে তখন জবাব দিতাম।
আপনার পাশে বসে সভাপতি যেসব কথা বলেছেন তার ভিডিও আছে জানালে অ্যাডভোকেট শাহ মহাম্মদ ওয়ালি উল্লাহ অলি বলেন, যার বক্তব্য তার দায়। আমি এসব জানি না।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, সভায় আসলে কে কি বলেছেন, তা আমার জানা নেই। তাদের সঙ্গে কথা বলে পরে এ বিষয়ে জানাব।
বরগুনা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার হাওলাদার বলে, রোব ও সোমবার কয়েকটি উপজেলায় বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটেছে। এখন পুরো এলাকা স্বাভাবিক। নির্বাচনে কারও পক্ষে কাজ করার সুযোগ নেই। বরগুনার প্রত্যেক ইউনিয়নে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। দলীয় প্রচারণায় কেউ কিছু বললে তার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের নয়।
রোববার রাত ১০টায় সদর উপজেলার ৬ নম্বর ইউনিয়নের বুড়িরচর কামরাবাদ এলাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমানের সমর্থকদের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হুমায়ুন কবিবের সমর্থকদের সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। এতে প্রার্থীসহ দুজন আহত হন।
সোমবার দুপুরে আমতলী উপজেলায় মনোনয়নবঞ্চিতদের মানববন্ধনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। চাওড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান বাদল খানের মনোনয়ন বাতিল করার দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। তবে এতে কেউ আহত হয়নি।
দুপুরে বামনায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী চৌধুরী কামরুজ্জামান সগিরের সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তারিকুজ্জামান সোহাগের সংঘর্ষ হয়। এতে ছয়জন আহত হন।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এএম