প্রতারণায় আটকে গেছে শিশু মারিয়ার চিকিৎসা

বরিশালের হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান মারিয়া। তার চিকিৎসার জন্য জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হলে শাহজালাল নামে এক ব্যক্তি সাংবাদিক পরিচয়ে সেই টাকা তুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে তিন মাস ধরে বন্ধ রয়েছে মারিয়ার চিকিৎসা। চিকিৎসা না পাওয়ায় দিন দিন আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে মারিয়া।
ভুক্তভোগী মারিয়া বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২৪ নং ওয়ার্ডের হামিদ খান সড়কের বাসিন্দা জাফর মোল্লার মেয়ে। তার বাবা জাফর মোল্লা থ্রি-হুইলার চালক। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত শাহজালাল বরিশাল থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকের প্রধান ফটো সাংবাদিক পরিচয় দেন।
মারিয়া আক্তারের মা মাহিনুর বেগম বলেন, জন্ম থেকেই হার্টে ছিদ্র ছিল মারিয়ার। অনেক কষ্টে কিছু টাকা জোগার করে ঢাকায় ওর হার্টের সার্জারি করেছি। এর আগে মেয়ের চিকিৎসার জন্য সহায়তা চাইতে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর রেস্ট হাউজে গেলে সেখানে পরিচয় হয় শাহজালালের সঙ্গে। সে সময় সে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আমার মেয়ের চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা পাইয়ে দেবে বলে আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে শাহজালাল আমাকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের বরিশাল জেলা কার্যালয়ে আবেদন করতে বলেন। সেখানে আবেদন করলে তা মঞ্জুর হয় এবং ২১ মার্চ সমাজসেবা থেকে আমার ব্যাংক একাউন্টে ৫০ হাজার টাকা আসে।
মাহিনুর বেগম বলেন, খবর পেয়ে ওই দিনই আমার বাসায় গিয়ে টাকা উত্তোলনের জন্য চেক নেন শাহজালাল। সে সময় তিনি আমাকে বলেন, আপনার মেয়ের জন্য টাকা জুগিয়ে দিয়েছি। টাকা এসেছে, টাকা তুলে এনে দিচ্ছি। আমি বিশ্বাসের সঙ্গে তাকে চেক দিয়েছি। তাছাড়া আমার অসুস্থ মেয়েটা চোখের সামনে কত কষ্ট পায় তা সে দেখেছে। এরপর চেক নিয়ে ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা তুলে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান। টাকা তুলে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার মোবাইলে মেসেজও আসে। তখন শাহজালালকে বারবার কল করলেও রিসিভ করেনি।
মারিয়ার মা বলেন, কয়েকদিন পরে কল রিসিভ করলে অনেক কান্নাকাটি করায় আমার মোবাইলে ৪ হাজার টাকা পাঠান শাহজালাল। পরে একটি সাংবাদিক সংগঠনে গিয়ে নালিশ করলে আরও ৬ হাজার টাকা দেন। এরপর আর কোনো খোঁজ নেই। এদিকে আমার মেয়ের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। টাকা না থাকায় কিছুই করতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, প্রতারণার শিকার হয়ে শনিবার (২০ মে) রাতে শাহজালালের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।
স্থানীয় দৈনিকটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তালুকদার মো. সোহেল বলেন, শাহজালালের বিভিন্ন অপকর্মের কারণে তাকে প্রায় এক বছর আগে পত্রিকা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া আমিও পত্রিকাটি ছেড়েছি ৬ মাস হলো। তার বিরুদ্ধে আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে সমাজসেবা অধিদপ্তর বরিশাল জেলা কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকার অসহায়দের চিকিৎসার জন্য টাকা দিয়ে থাকে। সেই টাকা যদি কেউ প্রতারণা করে তুলে নিয়ে যায় তার বিরুদ্ধে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তিনি বলেন, এ অবস্থায় ভুক্তভোগী পরিবারের উচিত লিখিত অভিযোগ দায়ের করা।
এদিকে, অভিযুক্ত শাহজালালের মুঠোফোনে কল করে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। এখন তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এবিএস