স্কুলছাত্রের সঙ্গে এ কেমন বর্বরতা

সকালে আলু সিদ্ধ দিয়ে ভাত খেয়ে বের হয়েছিল সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী অনিক চন্দ্র ব্রহ্ম। সেই বের হওয়াই শেষ বের হওয়া ছিল অনিকের। দুর্বৃত্তরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
নিহত অনিক চন্দ্র ব্রহ্ম তাহিরপুর উপজেলার তেলিগাঁও গ্রামের প্রদীপ ব্রহ্মের ছেলে।
প্রদীপ ব্রহ্ম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ছেলেকে খুব নির্যাতন করে মেরেছে। আমরা তার শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পেয়েছি। তার বুকের বাম পাশে আগুনের পোড়া দাগ। পায়ের আঙুলও আগুনে পোড়ানো। হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে মাথায় আঘাত করেছে। আঘাতের অংশ দেবে গেছে। যাতে চিৎকার করতে না পারে সেজন্য হাত-পা ও মুখ বেঁধেছে।
তিনি বলেন, আমার ছেলে কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে কেউ বলতে পারবে না। সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। আমিও জীবনে কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করিনি। তবে কেন আমার ছেলের সঙ্গে এমন বর্বরতা?
ছেলের মরদেহ যখন শ্মশান ঘাটে তখন তার মা শহরের নতুনপাড়ার বাসায় শোকে বিলাপ করছিলেন। পাশে বসা আত্মীয়-স্বজনরা তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। কিছুক্ষণ পরপর জ্ঞান হারিয়ে বিছানায় পড়ে যাচ্ছেন অনিকের মা।
অনিকের মা অঞ্জনা রানী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ছেলে বাসা থেকে বের হয় না। সারাদিন বাসায় পড়াশুনা করে। গতকাল বলল, মা আসি। ফোন রেখে বের হয়ে গেল। আর আসেনি। সারাদিন বাসায় না ফেরায় ভাবলাম হয়তো দোল পূর্ণিমার কোনো আয়োজনে কোথাও গেছে। কিন্তু রাতে না ফেরায় খোঁজ করেছি আত্মীয়-স্বজনের বাসায়। পাইনি। সকালে খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার ছেলে- এই বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন অঞ্জনা রানী।
সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফয়েজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনিক আমাদের স্কুলের খুবই মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। স্কুলে নম্র-ভদ্র ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিল। কখনও কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করেনি। আমরাও তাকে নিয়ে অনেক আশাবাদী ছিলাম। তার এ রকম মর্মান্তিক মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। হাসপাতালে তার মরদেহ দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি। অনিক চন্দ্র ব্রহ্মের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। আমরা তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পেয়েছি।
অনিকের বাবার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগুনে পোড়ানো হয়েছে কিনা রিপোর্ট প্রকাশের আগ পর্যন্ত তা বলা যাবে না। আমরা যখন রিপোর্ট প্রকাশ করবো তখন আপনারা জানতে পারবেন।
সুনামগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোববার বিকেলে অজ্ঞাত পরিচয় ওই কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। আজ তার পরিচয় মিলেছে। সে সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তার মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশ।
সাইদুর রহমান আসাদ/আরএআর