যক্ষ্মা আক্রান্ত বাবা, চা বিক্রি করে সংসার চালায় শিশু সুমাইয়া
বাবা অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন হলো শয্যাশায়ী। নেই কোনো ভাই। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে, তিনি গার্মেন্টস শ্রমিক স্বামী ও সন্তান নিয়ে ঢাকায় থাকেন। মেজ বোন মারা গেছেন। আরেক বোন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাই যে বয়সে বই খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, সেই বয়সে খাতা কলম ফেলে পরিবারের খরচ ও বাবার চিকিৎসার তাগিদে গত প্রায় এক বছর ধরে চা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছে ১৩ বছরের মেয়ে সুমাইয়া।
সুমাইয়া সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের গাড়াদহ পূর্ব হাটখোলা এলাকার যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত মো. সায়েম আলী ফকিরের (৬৫) ৪র্থ মেয়ে। সে পাশের ব্র্যাক স্কুলে ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। এখন গাড়াদহ ইউনিয়নের পুরাতন হাটখোলা বাজারে অবস্থিত বাবার ছোট্ট চা’র দোকানে চা বিক্রি করে।
স্থানীয়রা জানান, গত ১ বছর ধরে যক্ষ্মা রোগে আক্রন্ত হয়ে মো. সায়েম আলী ফকির শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছেন। তার ৪ মেয়ে। তার কোনও পুত্র সন্তান নেই। এরমধ্যে বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। সে গার্মেন্টস শ্রমিক স্বামী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় থাকেন। মেঝ মেয়ে মারা গেছে। ৩য় মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী। ৪র্থ মেয়ে সুমাইয়া পাশের ব্র্যাক স্কুলে ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। ৫ম শ্রেণিতে ওঠার পর গত ১ বছর আগে বাবা সায়েম আলী ফকির কঠিন অসুখে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। অনেক চিকিৎসা করেও ভাল হয়নি। সংসারে আয় উপার্জনের আর কোনো পুরুষ মানুষ না থাকায় সুমাইয়া স্কুল ছেড়ে তার বাবার চায়ের দোকানে চা বিক্রি করে সংসার চালানো শুরু করে। গত ৩ মাস আগে তার বাবার যক্ষা রোগ শনাক্ত হয়। শেষ সময়ে রোগ ধরা পড়ায় চিকিৎসা খরচ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে সুমাইয়া ও তার পরিবার।
সুমাইয়ার বাবা মো. সায়েম আলী ফকির বলেন, আমার কোনও বাড়িঘর নেই। সরকারি খাস জায়গায় এলাকাবাসী দানের টাকায় একটি দোচালা ঘর তুলে স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকি। এর উপর মরণঘাতী যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুণছি। সংসার চালানোর মত আর কোনও উপায় না থাকায় শিশু মেয়ে সুমাইয়াকে চা বিক্রি করে সংসার চালাতে হচ্ছে। তিনি এ সময় হৃদয়বাদনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে অনুরোধ করেন।
শিশু সুমাইয়া বলে, চা বিক্রি না করলে খাব কী। বাবার ওষুধ কিনব কিভাবে। তাই স্কুল ছেড়ে চায়ের দোকানে চা বিক্রি করি। সারাদিনে ১৫০ থেকে ২০০ কাপ চা বিক্রি করে ২/৩শ টাকা আয় হয়। এ দিয়ে চাল-ডাল কেনার পর অবশিষ্ট টাকা দিয়ে বাবার ওষুধ কিনি। এভাবেই গত ১ বছর ধরে চলছে আমাদের অতি কষ্টের জীবন। সে আরও বলে, আমি আবার স্কুলে যেতে চাই। পড়ালেখা করতে চাই। তাই আমাকে বিত্তবানরা আর্থিক সহযোগিতা করলে আমি আবার স্কুলে যেতে পারতাম। পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারতাম।
গাড়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি বিষয়টি জানি না, মেম্বাররাও কেউ আমাকে বিষয়টি জানায়নি। তবে আমি খোঁজ নিয়ে দেখব। আমি তাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু পারি সহযোগিতা করব এবং মাসে এক হাজার করে টাকা দেব। এছাড়া যেহেতু তাদের জায়গা ও বাড়িও নেই বলছেন তাই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটা বাড়ির ব্যবস্থা করা দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমাদের তরফ থেকে সরকারিভাবে যতটুকু সম্ভব শিশু সুমাইয়াকে সহযোগিতা করা হবে। বাড়িঘর না থাকলে বাড়িঘরের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া সুমাইয়াকে আবারও স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
শুভ কুমার ঘোষ/আরকে