৩ শতাধিক বাংলাদেশিকে ভারতের কারাগার থেকে মুক্ত করেন অমলেন্দু 

ভারতের কারাগারে বন্দি ৩ শতাধিক বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশের কারাগারে বন্দি ১৯ ভারতীয়কে মুক্ত করে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মৌলভীবাজারের অমলেন্দু কুমার দাশ। স্বেচ্ছায় এবং নিজের বেতনের টাকা খরচ করে সব আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনি অসংখ্য কারাবন্দিকে মুক্ত করেছেন। 

গত ২৯ সেপ্টেম্বর ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানে হৃদয়ছোঁয়া মানবিক প্রতিবেদনে উঠে আসে অমলেন্দুর এই মহৎ কাজ। ‘ইত্যাদি’র এবারের পর্ব ধারণ করা হয় নৈসর্গিক শোভার লীলাভূমি নেত্রকোণায়। 

অমলেন্দু কুমার দাশ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার দক্ষিণ বাড়ন্তি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সদর উপজেলার সহকারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। সরকারি চাকরির পাশাপাশি তিনি মানবিক কাজ, লোক সাহিত্য ও গবেষণাধর্মী লেখালেখিসহ লোকজ সংস্কৃতি রক্ষায় কাজ করে চলেছেন।

অমলেন্দু কুমার দাশ জানান, ২০১৭ সাল থেকে অদ্যাবধি ৩ শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিককে ভারতের বিভিন্ন কারাগার থেকে মুক্ত করে তাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। তার এই মানবিক কাজের পিছনে রয়েছে এক বৃদ্ধা মায়ের চোখের জল, অনেক বন্দীর করুণ কাহিনী ও নীরব চাহনি। 

তিনি বলেন, ভারতের আসামের পাথারকান্দির জয়ন্তী বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তি তার ছেলেকে নিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে মৌলভীবাজার কারাগারে বন্দী হন। আদালত তাদেরকে ১ মাসের জেল প্রদান করেন। কিন্তু সাজার মেয়াদ শেষ হলেও নানান প্রশাসনিক জটিলতায় তারা নিজ দেশে যেতে পারছিলেন না। ১৪ মাস পর আসামের এমএলএ কৃষ্ণেন্দু পালের অনুরোধে আমি প্রায় দুই মাস সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দৌঁড়ঝাপ করে তাদের মুক্তির আদেশ হাতে পাই। অবশেষে ১৬ মাসের বন্দী জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে মা-ছেলেকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে নিজ দেশে ফিরিয়ে দেই। তাদের কান্নাতে সেদিন বর্ডার এলাকার পরিবেশ অন্যরকম হয়েছিল। 

মা-ছেলের ঘরে ফেরার এই আনন্দ দেখার পর থেকে অমলেন্দু বাবুর এ কাজে উৎসাহ বেড়ে যায়। পরবর্তীতে তিনি মৌলভীবাজার জেলা কারাগারের সব ভারতীয় বন্দী এবং সিলেট জেলা কারাগারের কয়েকজন বন্দীকে ভারতে নিজ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেন। এই বন্দীদের অনেকেই ১৪ থেকে ১৯ বছর পর্যন্ত বাংলাদেশের কারাগারে মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দী হিসেবে ছিলেন।

অমলেন্দু বাবুর এ মহৎ কাজ মিডিয়াতে প্রচার হলে ভারতীয় কয়েকজন সংবাদকর্মী ও সমাজসেবক অমলেন্দু বাবুকে জানান আসামের বিভিন্ন কারাগারে অনেক বাংলাদেশি নাগরিক বন্দী রয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ থেকে এ পর্যন্ত উভয় দেশের আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতা নিরসন করে আসাম ও মেঘালয় রাজ্যের বিভিন্ন কারাগারের বন্দীর পরিবারকে খুঁজে ৩ শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিককে নিজ দেশে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, পুরো কাজটি স্বেচ্ছাশ্রমের মানসিকতা থেকে করছেন। অমলেন্দু বাবু তার বেতনের একটা অংশ এই কাজে ব্যয় করে থাকেন। অসহায় বন্দীদের মুক্ত করা তার নেশায় পরিণত হয়েছে। বন্দীদের মুক্ত করার আনন্দে তিনি সমস্ত কষ্ট ও যন্ত্রণা ভুলে যান। ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছে অমলেন্দু দাশ একজন মহামানব। সাধারণ মানুষের কাছে তিনি মুক্তির ফেরিওয়ালা হিসেবে পরিচিত। 

ওমর ফারুক নাঈম/আরকে