মুন্সীগঞ্জে দুই হাজার মিনি গার্মেন্টসে পোশাক তৈরির ধুম
ঈদকে সামনে রেখে মুন্সীগঞ্জের প্রায় দুই হাজার মিনি গার্মেন্টসে পোশাক তৈরির ধুম লেগেছে। রেডিমেড পোশাক পল্লী হিসেবে খ্যাত মুন্সীগঞ্জের গোয়ালঘুন্নি, তেলিরবিল, সুজানগর, সিপাহিপাড়া, বজ্রযোগিনী ও শাখারি বাজার এলাকা। এখানে রয়েছে প্রায় দুই হাজারেরও বেশি পোশাক তৈরির ক্ষুদ্র কারখানা। এ বছর রোজার ঈদকে কেন্দ্র করে ৩০০ কোটি টাকার পোশাক বিক্রির টার্গেট এই পল্লীতে। এ কারণে পোশাক তৈরিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে পল্লীর কারিগররা।
পোশাক তৈরির গ্রাম হিসেবে পরিচিত মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার শাঁখারি বাজার, সুজানগর, সিপাহিপাড়া, তেলের বিল, গোয়লঘূর্ণি এলাকার ঘরে ঘরে গড়ে উঠেছে প্রায় দুই হাজার মিনি গার্মেন্টস। এসব গার্মেন্টেসে কাজ করেন প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক। ঢাকার ইসলামপুর কাপড় কিনে এসে এসব গার্মেন্টেসে পোশাক তৈরি শেষে রাজধানীর বড় বড় বিপণিবিতানে সরবরাহ করা হয়। ঢাকার অদূরে মুন্সীগঞ্জের এ গ্রামগুলোর প্রতিটি বাড়ি যেন একটি করে মিনি গার্মেন্টস কারখানা। নিজ বসত বাড়ির ছোট ছোট ঘরেই রঙ-বেরঙয়ের পোশাক তৈরি হচ্ছে এসব গার্মেন্টেসে রাতদিন। এসব পণ্য দেশের বাইরে তেমন বিক্রি না হলেও এসব পণ্য তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে আধুনিক রপ্তানিকারক গার্মেন্টেসের সকল ধরনের মেশিন ও যন্ত্রপাতি। কম্পিউটারাইজড এমব্রয়ডারি মেশিন ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে চমৎকার সব ডিজাইন। এরপর কারিগরদের নিপুণ হাতে তৈরি হচ্ছে বাহারি পোশাক।
এখানকার তৈরি পোশাক ঢাকার সদরঘাট, কেরাণীগঞ্জের কালীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের বড় বড় পাইকারি মার্কেট হয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিপণিবিতানে।
এই পোশাক পল্লীতে আধুনিক প্রযুক্তির কম্পিউটারাইজড এমব্রয়ডারি মেশিনে করা হচ্ছে নানা রকম নান্দনিক কারুকাজ। পোশাককে বর্ণিল করতে কারিগররা নিপুণ হাতে যুক্ত করছেন রঙ-বেরঙের লেছ ও পুথি। কাপড় কাটা, সেলাই, ডিজাইনে এখন দিনরাত ব্যস্ত সময় পাড় করছেন কারিগররা।
শ্রমিক জিসান বলেন, ঈদকে সামনে রেখে মানুষ বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন দিয়ে যায়। আমরা কম্পিউটারের ডিজাইন করি। এছাড়া আমরা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে ডিজাইন নিয়ে এসে সেই অনুযায়ী কাপড় তৈরি করে সাপ্লাই দেই। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের আগের থেকে এই বছর ব্যবসা ভালো। ঈদকে সামনে রেখে দুই সিফটে সারা দিনরাত এখানে কাজ চলছে।
অপর শ্রমিক আরিফ হোসেন বলেন, আমি এই এলাকার তৈরি পোশাক ফ্যাক্টরিতে প্রোডাকশনের কাজ করি। প্রতিদিন ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা কাজ করতে পারি। এ পেশায় পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন ভালো আছি।
শেখ ব্রাদার্স এর মালিক মো. দুলাল হোসেন বলেন, সুতি জর্জেট সব ধরনের মাল এখানে আমরা সেলাই করি। জর্জেট সুতি দুইটা মালই এ বছর ভালো চলতেছে। তবে এ বছর মালের দামটা একটু বেশি। কাপড়ের দাম বেশি হওয়াতে মালের দাম বেশি পড়তেছে। বাধ্য হয়ে আমরা বেশি দামে বিক্রি করতেছি। আমরা মালগুলো ঢাকা নারায়ণগঞ্জে বিক্রি করি। ওখান থেকে সারা বাংলাদেশের খুচরা পাইকাররা এসে নিয়ে যায়। আমরা হোলসেল বিক্রি করি সারা বাংলাদেশে আমাদের মালটা যায়।
ব্যবসায়ী শরীফ হোসেন বলেন, আমাদের এই এলাকায় প্রতি বাড়িতে বাড়িতে গার্মেন্টস। মূলত স্বাধীনতার পর হতেই এই এলাকায় শুরু হয় এই গার্মেন্টস ব্যবসা। বাড়িতে বাড়িতে নিজেদের উদ্যোগে বিস্তার লাভ করতে থাকে ব্যবসাটি। আমরা মূলত প্রথমে ইসলামপুর থেকে কাপড় কিনে নিয়ে আসি। তারপরে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন সাইজ ও ধরনের থ্রি পিছ তৈরি করি। পরে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পাইকারদের কাছে গিয়ে বিক্রি করি। আমার ঢাকায় অনেক পাইকার রয়েছে। পোশাক তৈরি করার পরে বিভিন্ন মার্কেটে গিয়ে দিয়ে আসি।
তিনি আরও বলেন, করোনাকালীন এসব মিনি গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে দেশের বাইরে চলে গিয়েছিলেন। এখন আবার ব্যবসাটি প্রসার হচ্ছে।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ বিসিক কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল্লাহ জানালেন এই পোশাক পল্লীতে অত্যন্ত ৩০ হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। ধারাটি অব্যাহত থাকলে এক সময় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে।
ব.ম শামীম/এমএএস