চাঁপাইনবাবগঞ্জে ডায়রিয়ায় ৪৭ জন হাসপাতালে

উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত কয়েক দিনে শীতের প্রভাবে ডায়রিয়া রোগী বেড়েছে। আক্রান্তদের প্রায় ৮০ শতাংশই শিশু। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে পর্যাপ্ত শয্যার অভাবে প্রায় ৭৫ শতাংশ রোগী মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪৭ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি রয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩৯ জনই শিশু। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বরাদ্দ ১২টি বেডে ছাড়া বাকিরা মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৮ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। সুস্থ হয়েছেন ২৭ জন। চার-পাঁচদিন ধরে হঠাৎ করেই ডায়রিয়া রোগী বেড়েছে।
হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সিনিয়র নার্স রাশেদা খাতুন জানান, ভর্তি রোগীর বেশির ভাগই শিশু। ডায়রিয়া ওয়ার্ডের বাইরে অন্যরা মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ অবস্থায় সেবা দিতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। কয়েক দিন ধরে ডায়রিয়া রোগী বেড়েছে বলেও জানান তিনি।
সদর উপজেলার রানিহাটি ইউনিয়নের চকআলমপুর গ্রামের খাতিজা বেগম বলেন, আমার দুই বছরের ছেলে জাহিদ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। দুই দিন ধরে সে হাসপাতালে ভর্তি। বেড ফাঁকা না থাকায় মেঝেতে চলছে চিকিৎসা। তীব্র শীতের মধ্যে মেঝেতে গাদাগাদি করে থাকতে গিয়ে নানা ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনে মেঝের দুদিকেই রোগী ভর্তি থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে।
হাসপাতালে পর্যাপ্ত স্যালাইন ও ওষুধের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে ডায়রিয়াসহ শিশুদের শীতকালীন নানা রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে বাড়তি যত্ন নিতে হবে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায়ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে যথাযথ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে
জাহিদ নজরুল চৌধুরী, জেলা সিভিল সার্জন
এ বিষয়ে শামসুল আলম বলেন, ডায়রিয়া ওয়ার্ডটি হাসপাতালের প্রবেশমুখেই। সবাইকে এ ওয়ার্ডের সামনে দিয়েই যেতে হয়। কিন্তু বেড না থাকায় মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকেই। তাতে একদিকে যেমন চলাচলের রাস্তা ছোট হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে করোনাভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কাও প্রবল।
অনেক কষ্টে এক দিন মেঝেতে থাকার পর বেডে জায়গা পেয়েছেন জেলা শহরের নামোশংকরবাটি এলাকার রাজমিস্ত্রি সাকিল আলী। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিন দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি জানিয়ে সাকিল বলেন, প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা ও ভিড় বাড়ছে। ঢাকা থেকে বাড়িতে এসেছি। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেই হয়তো ডায়রিয়া হতে পারে। তবে নার্সের সেবা ও হাসপাতালের দেয়া স্যালাইন নিয়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেন তিনি।
হাসপাতালের সামনের একজন ফার্মেসির মালিক আবুল হাসনাত বলেন, হাসপাতাল থেকেই পর্যাপ্ত স্যালাইন ও ওষুধপত্র সরবরাহ করা হচ্ছে, তাই কেউ ফার্মেসিতে স্যালাইন ও ওষুধ নিতে আসছে না। তবে আগের মতো দু-একজন প্রতিদিন আসছে।
হাসপাতাল থেকে সকালে ডায়রিয়ার পথ্য হিসেবে ডাব ও চিড়া দেয়া হলেও হাসপাতাল গেটের সামনের ডাব বিক্রেতা জুলমত আলী জানান, ডায়রিয়া রোগী বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে অনেকেই ডাব নিচ্ছেন। তাই আগের তুলনায় বেশি ডাব বিক্রি হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান, প্রচণ্ড শীতের কারণে শিশুদের বিভিন্ন রোগবালাই বাড়ছে। তবে শীতের প্রকোপে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
হাসপাতালে সীমিত শয্যার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, হাসপাতালে পর্যাপ্ত স্যালাইন ও ওষুধের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে ডায়রিয়াসহ শিশুদের শীতকালীন নানা রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে বাড়তি যত্ন নিতে হবে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায়ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে যথাযথ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এনএ