হাজারো শহীদের রক্তে মুক্ত হয় নেত্রকোনা

আজ ৯ ডিসেম্বর, বুধবার। নেত্রকোনা হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে তুমুল যুদ্ধে পাকসেনাদের পরাজিত করে নেত্রকোনায় স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা ওড়ান মুক্তিযোদ্ধারা।
মহান মুক্তিযুদ্ধে নেত্রকোনা ১১ নম্বর সেক্টরের আওতায় ছিল। এ জেলার তিন হাজার মুক্তিকামী মানুষ সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। শহীদ হন ৬০জন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় এক হাজার মানুষ।
পাক হানাদাররা ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল প্রথম নেত্রকোনায় প্রবেশ করে। এরপর স্থানীয় রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে তারা মেতে ওঠে বর্বর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞে। সাধারণ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়া ব্রিজ ও থানার পাশে মগড়া নদীর তীরে, চন্দ্রনাথ স্কুলের পাশে নদীর তীরে এবং চল্লিশা রেল ব্রিজে ফেলে রাখে।
এর মধ্যে পাকসেনা মুক্ত হয় জেলার মদন, কেন্দুয়া, দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, আটপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা। নেত্রকোনাকে মুক্ত করার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধারা ৮ ডিসেম্বর শহরের তিনদিক থেকে পাকসেনাদের সঙ্গে লাগাতার যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে। এ অবস্থায় ৯ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা শহরের কৃষিফার্ম এলাকায় অ্যাম্বোস পেতে পাক হানাদারদের ওপর আক্রমণ করে। এ সময় সরাসরি যুদ্ধে শহীদ হন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার, আব্দুর রশিদ ও আব্দুর সাত্তার। এই যুদ্ধে বহু পাকসেনা এবং রাজাকারও নিহত হন।
অবশেষে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণে টিকতে না পেরে ময়মনসিংহের দিকে পালিয়ে যায় পাকসেনারা। মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় মিছিল করে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান এবং ৯ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় নেত্রকোনা। বর্তমানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে ওই যুদ্ধস্থানটিকে ‘প্রজন্ম ৭১’ নামকরণ করা হয়েছে।
প্রতি বছর মুক্ত দিবস উপলক্ষে বিজয় মিছিলসহ নানা আয়োজন থাকে। তবে এবার করোনাভাইরাসের কারণে শহীদদের শুধু ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক কাজি আবদুর রহমানের সভাপতিত্বে সীমিত পরিসরে দিবসটির তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এসপি