স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গুমের ৯ বছর পর মামলা, হানিফসহ আসামি ১২
কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজ গুম হওয়ার ৯ বছর পরে মামলা করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ, তার চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতাসহ আওয়ামী লীগের ১২ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও বেশ কয়েকজনকে।
সোমবার (০৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সবুজের ভাই আরিফুল হোসেন সজিব কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন। কুষ্টিয়া মডেল থানাকে মামলাটি গ্রহণ করে আসামিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি আক্তারুজ্জামান লাবু, কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিজ, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতার ছোট ভাই আতিকুর রহমান আতিক, শহর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিজের ছোট ভাই হাফিজুর রহমান হাফিজ, কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হালিমুজ্জামান হালিম, কুষ্টিয়া শহরের কুঠিপাড়া এলাকার আবু তাহের, কুষ্টিয়া শহরের পেয়ারাতলা এলাকার রমজান হোসেন ও কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার চক হরিপুর গ্রামের শেখ আফাজ উদ্দিনের ছেলে রবিউল হোসেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সবুজ কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। ২০১৫ সালের ১৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মজমপুর গেটস্থ বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল শ্রদ্ধা জানাতে যান। ওই সময় কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিজের নেতৃত্বে একটি সশস্ত্র এবং উসকানিমূলক মহড়ার কারণে উপস্থিত অন্যান্য ত্যাগী নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। সেখানে মোমিজের সঙ্গে তারা বিরোধে জড়িয়ে পড়লে কুষ্টিয়া পৌর এলাকার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সবুজ নামে অপর এক যুবক নিহত হন।
ঘটনার দিন দুপুর ২টার দিকে মামলার ১ নম্বর আসামি জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৎকালীন সভাপতি আক্তারুজ্জামান লাবু, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতার ছোট ভাই আতিকুর রহমান আতিক, শহর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিজের ছোট ভাই হাফিজুর রহমান হাফিজ, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের তৎকালীন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হালিমুজ্জামান হালিম, কুঠিপাড়া এলাকার আবু তাহের, পেয়ারাতলা এলাকার রমজান হোসেন এবং খোকসা উপজেলার রবিউল হোসেন সবুজের বাড়িতে যান এবং রাগান্বিত হয়ে সবুজকে বলে তোমাকে এখনই নেতার (হানিফের) বাড়িতে যেতে হবে।
এ সময় সবুজ তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জিনিয়াকে সঙ্গে নিয়ে হানিফের বাড়িতে যান। এ সময় হানিফ সবুজকে বলেন, যদি বাঁচতে চাও তাহলে আমার কথামতো চলতে হবে। আর র্যালিতে নিহত সবুজের পরিবার তোমার বিরুদ্ধে মামলা করবে। তুমি লাবুর (১ নম্বর আসামি) সঙ্গে গাজীপুরের ড্রিম স্কয়ার রিসোর্টে চলে যাও। আমি রিসোর্টের মালিককে বলে দিচ্ছি, সেখানে তুমি নিরাপদে থাকতে পারবে। হানিফের কথা মতো অন্যান্য আসামিদের মদদে রিসোর্টে ওঠেন সবুজ। সেখানে অবস্থানকালে অন্যান্য আসামিদের মদদ ও যোগসাজশে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ১০/১২ জন সাদা পোশাকধারী সবুজকে রিসোর্ট থেকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান।
মামলার বিষয়ে সবুজের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জিনিয়া বলেন, আমার স্বামী অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা হয়ে উঠেছিলেন। কুষ্টিয়া পৌর মেয়র পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। সেই লক্ষ্যে পৌরবাসীর সঙ্গে তিনি ভালো সখ্যতা গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাজী রবিউল ইসলামসহ হানিফ, আতা, সদর খান কেউই বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। আর সে কারণেই আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণের পর গুম করা হয়। স্বামী ছাড়া সন্তানদের নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছি। হানিফসহ অন্যান্য সব আসামিদের গ্রেপ্তার করা হলে অবশ্যই আমার স্বামীর হদিস পাওয়া যাবে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নিখোঁজের ৯ বছর পর গুমের অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে কুষ্টিয়া আদালত পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম ও কুষ্টিয়া সদর থানার আদালত পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইস্কান্দার হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।
রাজু আহমেদ/এফআরএস