মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন প্রান্তি, খরচ নিয়ে চিন্তায় মা

ফরিদপুরের হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে প্রান্তি বিশ্বাস (১৮)। এসএসসিতে পেয়েছেন গোল্ডেন জিপিএ-৫, এইচএসসিতে জিপিএ-৫। এবার ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন প্রান্তি। এ খবরে যতটা খুশি হওয়ার কথা, তার পরিবারটি ততটা খুশি হতে পারছে না। কারণ পিছে তাড়া করে ফিরছে মেডিকেল কলেজে পড়াশোনার খরচের চিন্তা।
প্রান্তি বিশ্বাস ফরিদপুর সদরের কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের হাটগোবিন্দপুর উত্তরপাড়া গ্রামের রমেন কুমার বিশ্বাস ও চঞ্চলা রানী বিশ্বাস দম্পতির মেয়ে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে প্রান্তি ছোট। তার ভাই রাহুল বিশ্বাস একটি বেসরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ডিপ্লোমা পাস করে এখন বেকার অবস্থায় রয়েছেন।
বাবা রমেন কুমার বিশ্বাস দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। মা চঞ্চলা বিশ্বাস মুড়ি ভেজে ফরিদপুর শহরের বিভিন্ন দোকানে দোকানে বিক্রি করেন।
কানাইপুর-খলিলপুর গ্রামীণ সড়কের হাট গোপালপুর বাজার এলাকার পূর্বপাশে প্রাপ্তিদের বাড়িটি অবস্থিত আনুমানিক দুই শতাংশ জমির ওপর। বাড়িটি জরাজীর্ণ। প্রান্তির নানার টাকায় ইটের তৈরি বাড়ির কাজে হাত দেওয়া হয়। তবে নানার আকস্মিক মৃত্যু হওয়ায় বাড়ির কাজ শেষ হয়নি। পলেস্তারা ছাড়া ঘরে ঢোকার জন্য কাঠ দিয়ে একটি দরজা করা হয়েছে। বাকি একটি দরজা ও জানালাগুলোয় কাঠও দেওয়ার টাকা নেই। শীতের হিম বাতাস ঠেকাতে পাটখড়ি দিয়ে আটকানো হয়েছে। এভাবে অসমাপ্ত এই ঘরে বসবাস করছেন পরিবারের সদস্যরা।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রান্তি জানান, বাড়ির কাছাকাছি কানাইপুরের বেগম রোকেয়া কিশলয় বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাস করেন ২০২২ সালে। ২০২৪ সালে ফরিদপুর সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন।
তিনি বলেন, আমি মেডিকেলে চান্স পাওয়ার জন্য ফরিদপুরের একটি কোচিং সেন্টারে কোচিং করেছি। আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি পড়াশোনা করতে। সৃষ্টিকর্তা আমার দিনরাত শ্রমের ফলাফল দিয়েছেন। আমার একটা সময় মনে হতো ইঞ্জিনিয়ার হবো। তবে কোচিং করার শুরুতে সিদ্ধান্ত পাল্টে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বদলে মেডিকেলের প্রস্তুতিই নিয়েছিলাম।
প্রান্তি বলেন, এত কিছুর পর আমার জন্যে সুখের খবর হচ্ছে আমি আমার জেলার মেডিকেল কলেজ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজেই পড়ার সুযোগ পেয়েছি।
মা চঞ্চলা বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা তেমন নেই। মেয়ে যখন জানাইলো মেডিকেলে চান্স হইছে ডাক্তার হবো। তখন যে কি কি আনন্দ লাগছে বইলা বোঝানো যাবে না। এরপর সাংবাদিকরা ফোন করেছে। বাড়ির আশপাশের লোকজন বাড়িতে আইসা মেয়ের জন্যে দোয়া করতেছে, নতুন কইরা দেখতেছে। মনে হইতেছে আমার মেয়ে নতুন কইরা আমাগো সম্মানের সাগরে নিয়া আইছে।
আরও পড়ুন
তবে এসবের ভিড়ে প্রান্তির মায়ের এখন মেয়ের ভর্তিসহ পড়ালেখার খরচ জোগানের চিন্তা। তিনি বলেন, চান্স পাওয়ার পর এইসব খরচের ব্যাপার নিয়ে যাদের অভিজ্ঞতা আছে তাদের কাছে শুনতেছি কেমন কী খরচ হবে। ১৫ থেকে ২০ হাজারের কথাই বলতেছে সবাই। এই টাকা আমাদের জন্য অনেক টাকা। তবে আপনাদের দোয়ায় আমার মেয়ে যে অভাব জয় কইরা এতদূরে আইছে সামনেও ও পারবে আগাইয়া যাইতে।
প্রান্তির ভাই রাহুল বিশ্বাস বলেন, আমার ছোটবোন মেডিকেলে চান্স পাইছে- এই খবর শুনে আমার বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজনরা বাড়িতে আসছে, শুভেচ্ছা জানাচ্ছে বোনকে। বোনের এই অর্জন শুধু বোনের না আমাদের সমগ্র পরিবারের ইজ্জত বাড়িয়ে দিয়েছে।
সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মনজুরুল ইসলাম বলেন, প্রান্তি আমাদের কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। দারিদ্র্যকে জয় করেই সে এই পর্যন্ত এসেছে। মেধা থাকলে তাকে যে আর্থিক সংকটসহ কোনো সংকটই দমাতে পারে না তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত প্রান্তি। তবে প্রান্তিদের এখন গড়ে তোলার সময়। সমাজের বিত্তবানদের কাছে আমি আহ্বান জানাবো প্রান্তিদের মতো ফুল যেন অর্থের অভাবে কোনোভাবেই ঝড়ে না পড়ে সেদিকে তাদের সুদৃষ্টি দিতে হবে।
জহির হোসেন/আরএআর