দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত শিশু আজানের পাশে নারায়ণগঞ্জের ডিসি

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার কোতালের বাগ এলাকার অসহায় গৃহবধূ বীথি আক্তার। তার স্বামী মো. কমল ব্যাপারী পেশায় দিনমজুর। চার সদস্যের পরিবারের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে তাদের আদরের চার বছরের একমাত্র ছেলে আজান ইসলাম দীর্ঘদিন যাবত শারীরিকভাবে অসুস্থ। দিন দিন তার মাথার বাম পাশের হাড় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়াও শিশু আজানের চোখের সাদা অংশ ফুলে গিয়ে বাইরে বের হয়ে আসছে।
এ অবস্থায় আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতদের কাছে ধারকর্জ করে এক বুক আশা নিয়ে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় শিশু আজানকে। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান দুরারোগ্য এই রোগের চিকিৎসা করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। এ কথা শুনে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে বিথী-কমল দম্পতির।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সচ্ছল ব্যক্তিদের ধারে ধারে ঘুরলেও কেউ সাহায্যের হাত বাড়াননি। এ অবস্থায় আজানের দিন দিন মৃত্যুর দিকে ধাবিত হওয়া মেনে নিতে পারেননি অসহায় গৃহবধূ বীথি। এমন সময় এলাকাবাসীর কাছ থেকে শুনেন নারায়ণগঞ্জে একজন মানবিক জেলা প্রশাসক যোগ দিয়েছেন। একপর্যায়ে গতকাল বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) আজানের চিকিৎসার জন্য সাহায্য চেয়ে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিয়ার কাছে লিখিত আবেদন করেন। আবেদনের এক দিনের মধ্যেই বিথীর আবেদনে সাড়া দিয়ে জেলা পরিষদের তহবিল থেকে ৩০ হাজার টাকা প্রদান করেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম। এমনকি আগামী ঈদে নিজের পরিবারের নতুন পোশাক না কিনে সেই টাকা আজানের জন্য দেওয়ার আশ্বাসও দেন মানবিক এই জেলা প্রশাসক।

এই বিষয়ে প্রতিবেদকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয় আজানের মা বীথির। তিনি বলেন, প্রতিমাসে আজানের ওষুধ কিনতেই ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা লাগে। এ ছাড়া আমার মেয়ে রোজা ইসলামের বয়স ৫ বছর। তার শিশুখাদ্যের পেছনে টাকা খরচ হয়। আমার স্বামী বিভিন্ন গার্মেন্টসে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। কাজ পেলে প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় করেন। কাজ না পেলে বেকার থাকেন। তাই আমাদের পক্ষে ছেলের চিকিৎসা ব্যয় বহন করা আর সম্ভব হচ্ছে না।
বীথি আরও বলেন, আমার ছেলেকে বাঁচাতে আর্থিক সাহায্য চেয়ে গতকাল বুধবার ডিসি স্যারের কাছে আবেদন করেছিলাম। একদিন পরেই ডিসি স্যার প্রাথমিকভাবে আমাকে নগদ ৩০ হাজার টাকা দিয়েছেন। একইসঙ্গে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে দ্রুত অপারেশনের ব্যবস্থাও করবেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া পরবর্তীতে ব্যক্তিগতভাবেও সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। ডিসি স্যার এভাবে একদিনের মাথায় আমার সন্তান আজানের পাশে দাঁড়াবেন স্বপ্নেও ভাবিনি, কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন গৃহবধূ বীথি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মানবিক সাহায্যের যেকোনো আবেদন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম। এর ফলে প্রতিদিনই এমন অসংখ্য অসহায় মানুষের ভিড় লেগেই থাকে ডিসির কার্যালয়ে। সাহায্যপ্রার্থীদের সঙ্গে জেলা প্রশাসক নিজে কথা বলেন। তাদের যথাসাধ্য আপ্যায়ন করতেও ভুলেন না। শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন, তাদেরকে সান্ত্বনা দেন।
এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম বলেন, মানুষের সেবা করার জন্যই প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিয়েছিলাম। আমি সব সময় চেষ্টা করি মানবিক সাহায্যের আবেদন দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি করার জন্য। কেননা তাদের জরুরি আর্থিক সাহায্য দরকার বলেই তো আমার কাছে আবেদন করেছেন।
এমজেইউ