দেবর-ভাবির পরকীয়ায় খুন হন শাকিল

দীর্ঘদিন ধরে মীমের পরকীয়া সম্পর্ক চলছিল তার দেবর সাব্বিরের সঙ্গে। এ নিয়ে বারবার সমাধানের চেষ্টা করেও পারেনি পরিবার। একপর্যায়ে নিজের বাড়ি ছেড়ে স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় ওঠেন কাপড় ব্যবসায়ী শাকিল। সেখানে ওঠার ১০ দিনের মাথায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্ত্রী মীম (২০) দেবর সাব্বির (২৬) ও চাচাতো দেবর শান্তকে (২৫) পুলিশ থানা হেফাজতে রেখেছে। পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের মধ্যে আরও ৬ থেকে ৮ জনকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে থানা সূত্রে।
এর আগে শুক্রবার (২৮ মে) রাত ১২টার দিকে পাবনার ঈশ্বরদী শহরের সরকারি কলেজের সামনে রূপনগরের (মাহাতাব কলোনি) ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটে। রোববার (৩০ মে) দুপুরে নিহতের মামা কোরবান আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে উল্লেখ করে মামলা করেছেন।
শাকিলের পরিবারের দাবি, শাকিলকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, এ হত্যাকাণ্ডের এখনো কোনো কূলকিনারা পায়নি পুলিশ। এ নিয়ে অধিকতর তদন্ত চলছে।
নিহত শাকিল উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের প্রতিরাজপুরের দুবলিয়া গ্রামের ইব্রাহিম হোসেনের ছেলে ও ঈশ্বরদী বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শাকিলের স্ত্রী মীম খাতুনের (২০) সঙ্গে ছোট ভাই সাব্বিরের (২৬) পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ নিয়ে শাকিল ও তার স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়াবিবাদ লেগে থাকত। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। বিষয়টি স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদের পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল।
সূত্র জানায়, ঘরোয়াভাবে মীমাংসার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। একপর্যায়ে মীম বাবার বাড়িতে চলে যান। এরপর শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে বুঝিয়ে ১০ থেকে ১২ দিন আগে স্ত্রীকে নিয়ে শহরের কলেজ রোডে রূপনগরের কলোনিপাড়ার একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন শাকিল। সেখানেই খুন হন শাকিল।

তবে মীম খাতুন পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকা ও দেবরের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিন বলেছেন, আমিই যদি হত্যা করব তাহলে আমার হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ছিল কেন? তিনি জানান, পাঁচ-ছয়জন যুবক এসে আমার হাত-পা বেঁধে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যান।
নিহত শাকিলের মামা মুলাডুলি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য তারা মালিথা ঢাকা পোস্টকে বলেন, শাকিল প্রায় ১০ দিন আগে শহরের কলেজ রোডে দোতলা একটি ফ্ল্যাটে ওঠে স্ত্রীকে নিয়ে। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শাকিলের ফোন থেকে তার স্ত্রী ফোন করে আমাকে জানায়, শাকিল কী যেন খেয়েছে, কথা বলছে না।
তিনি বলেন, আমি দূরে থাকায় আত্মীয়স্বজনকে ঘটনাটি জানাই। তারা এসে দেখে মীম নিহত শাকিলের সামনে বসে আহাজারি করছে। এ সময় উপস্থিত লোকজন শাকিলের মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে মীম জানায়, চার-পাঁচজন এসে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে চলে গেছে।
নিহত শাকিলের বাবা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, আমার ছেলে নম্রভদ্র ছিল, কারও সঙ্গে কোনো দিন খারাপ আচরণ করেনি। কারও সঙ্গে বিরোধ ছিল না। আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের আসল রহস্য ও খুনিদের ধরতে পুলিশের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।
ঈশ্বরদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান আসাদ ঢাকা পোস্টকে জানান, এ ঘটনায় শাকিলের স্ত্রী মীম ও ছোট ভাই সাব্বির, চাচাতো ভাই শান্তকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পরিবারের আরও ছয়-সাতজনকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। লাশ ময়নাতদন্তের পর শনিবার দুপুরে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি জানান, এ ঘটনায় রোববার দুপুরে থানায় একটি মামলা হয়েছে। মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। কোনো ক্লু পেলে অপরাধীদের আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হবে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলেও জানান তিনি।
রাকিব হাসনাত/এনএ