৫ বছর ধরে তোলা চাল বিক্রির টাকায় রাস্তা নির্মাণ করছেন এলাকাবাসী

স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হয়ে গেলেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি টাঙ্গাইলের দুই গ্রামে। গ্রাম দুটিতে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। রাস্তা নিচু হওয়ায় প্রতি বছর বন্যা কবলিত হয় গ্রামের মানুষ। বৃষ্টি হলেই রাস্তা দিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। হাজারো মানুষ চলাচল করে ভোগান্তি নিয়ে। ভোগান্তি দূর করতে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর-দেলদুয়ার উপজেলার দুই গ্রামের বাসিন্দারা সাপ্তাহিক মুষ্টি চাল তুলছেন গত ৫ বছর ধরে। সেই চাল বিক্রির টাকায় এক কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করছেন তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুই গ্রামের বাসিন্দারা মাটি কাটার কাজ করছেন। সব বয়সী মানুষ রাস্তা দিয়ে মাটি ফেলছেন। কেউ কেউ বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুষ্টির চাল তুলছেন। রাস্তার উন্নয়নের জন্য দুই গ্রামের মানুষ মিলে ৫ বছর ধরে মুষ্টির চাল তুলছেন বলে জানান এলাকাবাসী।
এলাকাবাসীরা বলেন, মির্জাপুর-দেলদুয়ার উপজেলার শেষ প্রান্তে দুইটি গ্রাম গবড়া ও ডুবাইল গ্রাম। স্বাধীনতার পর আমাদের এলাকার কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া দেখিনি। পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাই। ৪ থেকে ৫ মাস রাস্তায় পানি থাকে। ছেলে-মেয়েদের স্কুল-কলেজ ও অসুস্থদের হাসপাতালে নিতে কষ্ট হয়। এই রাস্তায় কোনো সরকারি অনুদান আসেনি। আমরা এলাকাবাসীরা নিজেদের উদ্যোগে রাস্তা নির্মাণ করছি। পাঁচ বছর ধরে সাপ্তাহিক মুষ্টির চাল তোলা হচ্ছে। সেগুলো বিক্রির জমানো টাকায় দুই মাস যাবৎ এক কিলোমিটার রাস্তার কাজ চলছে। রাস্তাটির কাজ সম্পূর্ণ করতে প্রশাসন ও সরকারের প্রতি সুদৃষ্টি কামনা করেছে দুই উপজেলার দুই গ্রামের বাসিন্দারা।
দেলদুয়ার উপজেলার ডুবাইল গ্রামের সুজাত আলী বলেন, আমাদের গ্রাম দেলদুয়ারের শেষ প্রান্তে হওয়ায় এই এলাকায় উন্নয়ন হয় না। বিভিন্ন মানুষের কাছে আমরা ঘুরেছি। কোনো কাজ হয়নি। তাই আমরা নিজ উদ্যোগে সবাই মুষ্টি ফান্ড ও বিভিন্নভাবে টাকা সংগ্রহ করে এক কিলোমিটার রাস্তায় মাটি ফেলেছি। যদি সরকারি সহযোগিতা পাই আমাদের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করতে পারব। প্রশাসন ও সরকারের দায়িত্বে যারা আছেন তারা আমাদের রাস্তার বিষয়ে সুদৃষ্টি দেবেন।
মির্জাপুর উপজেলার গবড়া গ্রামের আতিক মিয়া বলেন, গবড়া ও ডুবাইল গ্রাম মাঝামাঝি হওয়াতে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া পাচ্ছি না। আমরা কারও কাছে সহযোগিতা না পেয়ে যুব সমাজ ও মুরুব্বিরা মিলে নিজেদের রাস্তা নির্মাণ কিছুটা করতে পারছি। নিজেরাই মাটি কেটে রাস্তায় ফেলছি। বর্তমানে আমাদের মুষ্টির ফান্ড রয়েছে। মুষ্টির ফান্ডের টাকা ও গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় রাস্তা কিছুটা সম্পূর্ণ করতে পেরেছি। কাজ করতে গিয়ে যে টাকা ছিল তা শেষ হয়ে গেছে। টাকা শেষ হওয়ার কারণে বাকি কাজ সম্পূর্ণ করতে পারছি না। মির্জাপুর-দেলদুয়ার প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনারা আমাদের গ্রামের দিকে নজর দেবেন।
দেলদুয়ার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রওশন করিম বলেন, চাল তুলে তা বিক্রি করে গ্রামবাসী রাস্তা নির্মাণ করছে এ বিষয়টি আমার জানা নেই। কখনো রাস্তার বিষয়ে কারও কাছে কেউ আসেনি। রাস্তার বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে তারপর বলতে পারব।
আরিফুল ইসলাম/আরকে