শেরপুরে চিমনি গুঁড়িয়েও বন্ধ হচ্ছে না ইট পোড়ানো, ফের সক্রিয় ভাটা

শেরপুরে একের পর এক অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অবৈধ ইটভাটার চিমনি ভেঙে গুঁড়িয়ে হলেও তা বন্ধ রাখতে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। এখন আর লম্বা সিমেন্টের চিমনি নয়, টিনের ছোট পাইপ বসিয়ে ফের চলছে ইট পোড়ানোর কাজ। এসব দৃশ্য দেখা যাচ্ছে চিমনি গুঁড়িয়ে দেওয়া প্রায় প্রতিটি ভাটায়। দেখে বোঝার উপায় নেই মাত্র কিছুদিন আগেই পরিবেশ অধিদপ্তরের নেতৃত্বে এসব ভাটায় অভিযান চালানো হয়েছিল।
চলতি বছরের ২ মার্চ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত জেলার শেরপুর সদর, শ্রীবরদী ও নকলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের যৌথ অভিযানে অন্তত ২৫টি ইটভাটার চিমনি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। কোনো কোনো ভাটার মালিককে জরিমানাও করা হয়। অভিযান চলাকালে বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয় এসব ভাটার কার্যক্রমে। কিন্তু প্রশাসনের অভিযান শেষ হতে না হতেই বেশিরভাগ ভাটাই আবার সচল হয়ে ওঠে। টিনের ছোট পাইপ লাগিয়ে নতুনভাবে চালু করা হয় ইট পোড়ানো।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইন্দিলপুরের ফাতেমা ব্রিকস, যা বর্তমানে মা ব্রিকস নামে চলছে, মোবারকপুরের আল আমিন ব্রিকস এবং পশ্চিম ঝিনিয়ার সততা ব্রিকসসহ বেশিরভাগ চিমনিই ভাঙা। তবুও ভাটাতে আগুন জ্বলছে। ধোঁয়া উঠছে টিনের পাইপ বেয়ে। ছোট এই চিমনির কারণে আশপাশের ধানি জমি ও ফল গাছে ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে। আগুনের তাপে আধাপাকা ধান ঝলসে যাচ্ছে, আর ধোঁয়ার ঝরে পড়ছে আম ও লিচুর মুকুল।
কালিগঞ্জ ও মোবারকপুর এলাকার একাধিক কৃষক ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, আগে অন্তত চিমনি উঁচু থাকায় ধোঁয়া ওপরে যেত। এখন সেটি সরাসরি ফসলের ওপর পড়ে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। মালিকপক্ষকে বললেও কেউ শোনে না আর প্রশাসনও যেন দেখেও না দেখার ভান করছে। এমনকি তাদের ফসলের এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ারও কোনো উপায় নেই।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় যখন অভিযান হয় তখন ভাটাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ থাকে। কিন্তু অভিযানের ঠিক পরদিনই ভাটায় আবারও শুরু হয়ে যায় কার্যক্রম। প্রশাসনের নাকের ডগায় এভাবে অবৈধ ভাটা কিভাবে চালু থাকে সেটাই স্থানীয়দের বোধগম্য নয়। ধোঁয়ার কারণে ঘরে ভাত খাওয়া পর্যন্ত কষ্টকর হয়ে উঠেছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
ভাটার কয়েকজন শ্রমিক বলেন, অভিযানের সময় মূল ভাটা অক্ষত রেখে চিমনি ও পাশের ইটগুলো এলোমেলো করে দেওয়া হয়। আগুনে পানি ছিটিয়ে বন্ধ দেখানো হলেও কয়েক দিনের মধ্যেই মালিকপক্ষ নতুন করে ইট গেঁথে তার ওপর টিনের চিমনি বসিয়ে আবারও ইট পোড়ানো শুরু করে। এসব কার্যক্রমে প্রশাসনের কেউ এসে বাধা দিচ্ছে না।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের কঠোর নির্দেশনা উপেক্ষা করে কীভাবে এসব ভাটা আবার চালু হয় সে বিষয়ে ভাটা মালিকদের কেউ মুখ খুলতে চাননি।
এ নিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘সবুজ আন্দোলন’-এর চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার বলেন, ভাটাগুলো অবৈধভাবে চলছে। অথচ অভিযানও চলছে। অভিযান শেষ হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই আবার সেই ভাটায় টিনের চিমনি বসিয়ে ফের কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। এখন যেহেতু বর্ষা আসছে স্বাভাবিকভাবেই ভাটাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। তাই প্রশ্ন থেকে যায় এই লোক দেখানো অভিযানগুলোর প্রকৃত উপকারিতা কী? তিনি পরিবেশ রক্ষায় আইনের যথাযথ প্রয়োগ দাবি করেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. নূর কুতুবে আলম সিদ্দিক বলেন, অভিযানে কোনো কৌশল অবলম্বন করা হয়নি। জেলার অধিকাংশ ভাটার চিমনি ভেঙে দেওয়া হয়েছে এবং কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো ভাটায় আবারও কার্যক্রম শুরু হয়ে থাকে তাহলে তা গুরুত্বসহকারে দেখা হবে। অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া।
নাইমুর রহমান/আরকে