স্ত্রীর বেহিসাবি জীবনযাপন দেখে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা

নাটোরে স্ত্রীর বেহিসাবি জীবনযাপনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন মিলন ইকবাল (৩৪)। একসময় আত্মীয়র বাড়িতে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে পরিকল্পনা অনুয়ায়ী পাটখেতের মধ্যে হাতুড়ি দিয়ে স্ত্রী রাখি খাতুনকে (২৬) হত্যা করেন তিনি। পুলিশের কাছে এভাবেই হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন অভিযুক্ত মিলন ইকবাল।
রোববার (৬ জুন) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা এই তথ্য জানান।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১ জুন) বিকেলে ঘটনাটি জানাজানি হয়। এ ঘটনায় নিহত রাখির ভাই মোরসালিন রাখির প্রথম স্বামী ইছারুল ও বর্তমান স্বামী মিলন ইকবালকে অভিযুক্ত করে গুরুদাসপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার (৫ জুন) তৃতীয় স্ত্রীর বাপের বাড়ি গোদাগাড়ির পাকড়ি গ্রাম থেকে মিলন ইকবালকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
রাখি খাতুন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার তালধারি গ্রামের মুসলেম উদ্দিনের মেয়ে এবং একই জেলার তানোর উপজেলার চান্দুরিয়া গ্রামের মিলন ইকবালের (৩৪) স্ত্রী। মিলন ওই গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে।
পুলিশ সুপার জানান, মিলন ইকবাল পেশায় একজন পোশাকশ্রমিক। তিনি ঢাকার ডিবিএল গার্মেন্টসে ১৪ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন। সেই সুবাদে স্বামী-স্ত্রী ঢাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। কিন্তু অবাধ্য স্ত্রী রাখি খাতুনকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না তিনি। স্ত্রী কারণে-অকারণে টাকা ব্যয় করতেন।
এ নিয়ে তাদের মধ্যে টানাপোড়েন চলছিল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইকবাল পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ৩১ মে সন্ধ্যার পর অফিস শেষে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে রাখিকে নিয়ে বাসযোগে নাটোরের উদ্দেশে রওনা দেন। রাত ১টার দিকে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার কাছিকাটা এলাকায় বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের ১০ নম্বর ব্রিজে নেমে পড়েন তারা।
এ সময় রাখিকে ইকবাল বলেন, সামনের মাঠ পার হলেই আত্মীয়ের বাড়ি। মাঠ দিয়ে যাওয়ার সময় হাতুড়ি দিয়ে রাখির মাথার পেছনে আঘাত করেন। এতে রাখির মৃত্যু হয়।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সিংড়া সার্কেল) জামিল আক্তার জানান, নিহত রাখি খাতুন মিলন ইকবালের দ্বিতীয় স্ত্রী। সন্তান জন্ম দিতে না পারায় প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে রাখি খাতুনকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু রাখি খাতুনও দীর্ঘদিন সংসার করে সন্তান জন্ম দিতে পারেননি। পরে মিলন গোদাগাড়ির পাকুড়িয়া গ্রামে তৃতীয় বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই দ্বিতীয় স্ত্রী রাখি বেহিসাবি হয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, রাখি খাতুনের বিলাসিতার কারণে তৃতীয় স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে পারতেন না মিলন। একপর্যায়ে ক্ষোভ থেকে ৩১ মে গুরুদাসপুরের কাছিকাটা মাঠের একটি পাটখেতে নিয়ে রাখিকে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করেন।
তাপস কুমার/এনএ