উত্তরবঙ্গের ঈদযাত্রায় আতঙ্কের আরেক নাম থ্রি হুইলার

উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জ জেলা। যমুনা সেতু হয়ে ২২ জেলার লাখো মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা সিরাজগঞ্জের মহাসড়ক। ঈদকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই এ সড়কে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ চোখে পড়ার মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এই ভিড়ের মধ্যেই যাত্রীদের জন্য নতুন আতঙ্ক হয়ে উঠেছে থ্রি হুইলার। মহাসড়কে অবাধে চলাচল করা এই যানবাহনগুলো যেমন দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে, তেমনি সৃষ্টি করছে বাড়তি ভোগান্তি।
সোমবার (২ জুন) সারাদিন সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-রাজশাহী ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসগুলো নিয়মিত এই থ্রি হুইলার যানগুলোর কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। হঠাৎ থেমে যাওয়া, উল্টোপথে প্রবেশ কিংবা অনিয়ন্ত্রিত গতিতে চলাচলের কারণে প্রায়ই সৃষ্টি হচ্ছে যানজট ও দুর্ঘটনা। আইন অনুযায়ী মহাসড়কে এই ধরনের ছোট বাহনের চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে না।
বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়ক, হাটিকুমরুল-বনপাড়া ও সিরাজগঞ্জ- বগুড়া, সিরাজগঞ্জ-পাবনা মহাসড়কে এসব যানবাহনের আধিক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফলে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা পড়ছেন উদ্বেগ ও হয়রানিতে। চালকরা বলছেন, মহাসড়কে নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে হলে থ্রি হুইলারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
বাসচালক সাইদুল ইসলাম বলেন, আমরা সিরাজগঞ্জ জেলা শহর থেকে সিরাজগঞ্জ রোড পর্যন্ত ৩০ টাকা ভাড়া নিয়ে থাকি। থ্রি হুইলারও একই ভাড়ায় চলে যাচ্ছে। মানুষ সময় বাঁচাতে এসব বেছে নিচ্ছে, কিন্তু জানে না কতটা বিপদ ডেকে আনছে।
ট্রাকচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, রাতে চলার সময় হঠাৎ সামনে থ্রি হুইলার চলে আসে, তখন বড় দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকে। এসব গাড়ি মহাসড়কে চলাচলের উপযোগী না, অথচ কেউ দেখেও দেখে না।
মিনিবাস চালক মজিবর রহমান বলেন, আমরা রুট পারমিট নিয়ে চলি, নিয়ম মেনে গাড়ি চালাই। অথচ রাস্তা দখল করে থাকে এসব অবৈধ থ্রি হুইলার। এতে আমাদের আয় কমছে, যাত্রী কমছে, ঝুঁকি বাড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে যাত্রীদের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। অনেকেই নিরাপদ গণপরিবহন বাদ দিয়ে থ্রি হুইলারকেই বেছে নিচ্ছেন। যাত্রী আরিফ হোসেন বলেন, বাসে বসে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়, আবার মাঝপথে থেমে থেমে চলে। কিন্তু থ্রি হুইলারে উঠলেই সরাসরি গন্তব্যে পৌঁছে যাই। ভাড়াও তো একই, তাই সময় বাঁচাতে এইটাই ভালো মনে হয়।
আরেক যাত্রী মান্না খান বলেন, ঝুঁকি তো আছেই, কিন্তু ঈদের সময় বাসের ভিড় ভালো লাগে না। তাই বাধ্য হয়েই থ্রি হুইলারে চড়ি।
অটোরিকশাচালক বাছেদ খান, শফিক আলী, রিয়াজ খানসহ অনেক থ্রি হুইলার চালকের সঙ্গে কথা বলে ঢাকা পোস্ট। তারা বলেন, মহাসড়কে যদি না উঠি তাহলে আর সংসার চালাতে হবে না। কিছু চালক নিয়ম না মেনে চালায়, তাদের জন্য সবাইকে দোষী করা যাবে না। আমরা মহাসড়কে উঠলে পাশের লেন দিয়ে গাড়ি চালাই। দুর্ঘটনা তো বলে আসে না, কপালে মৃত্যু থাকলে হবেই।
সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন চালক ও যাত্রীরা উভয়েই। তাদের মতে, ঈদের এই ব্যস্ত সময়ে যাতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে এবং মানুষ নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারে, সেজন্য অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ এখন সময়ের দাবি।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, অবৈধ থ্রি হুইলারের দৌরাত্ম্য কমাতে আমরা প্রতিদিন নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন রুটের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে অবৈধ থ্রি হুইলারগুলোকে আটক করা হচ্ছে। নানা অনিয়মের কারণে অনেক চালকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পুরো মে মাসে ৭৩টি থ্রি হুইলারকে বিভিন্ন পরিমাণে জরিমানা করা হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত রয়েছে, যাতে সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব হয়।
নাজমুল হাসান/আরকে