পঞ্চগড়ে তীব্র গরমে বাড়ছে নানা রোগ

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর এলাকার এনামুল ও ইতি দম্পতি তাদের ১১ মাস বয়সী ছেলে সাদকে নিয়ে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে বসে আছেন। সাদের স্যালাইন চলছিল, বাবা হাতপাখা দিয়ে বাতাস করে দিচ্ছেন আর মা তার হাতে বেলুন দিয়ে খেলা দেখাচ্ছেন। তাদের ছেলে সাদের ঈদের পরের দিন থেকে বমি ও ডায়েরিয়া।
প্রথম দিন সাদকে স্যালাইন, ওষুধ খাওয়ালেও অবস্থার উন্নতি নেই। তাই তাকে নিয়ে এসেছেন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে। সাদের মতো অনেক শিশুই গরমে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানান চিকিৎসকরা। তবে ভ্যাপসা গরমের কারণে শিশুদের পাশাপাশি বয়স্করাও ভুগছেন নানা রোগে।
বোদা উপজেলার কালিয়াগঞ্জ এলাকা থেকে নাতি কৌশিককে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন অশ্বিনী রায়। তিনি বলেন, রাত ৩টা থেকে হঠাৎ ডায়েরিয়া শুরু হয় কৌশিকের। ওষুধ, স্যালাইন খাওয়ার পরেও কমছে না, এজন্য হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। স্যালাইন চলছে, এখন একটু সুস্থ।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার মিরগর এলাকা থেকে সাত বছর বয়সী আরাফাতকে সদর হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন বোন বেলি আক্তার। তিনি বলেন, আমার ছোট ভাইয়ের চার-পাঁচ দিন ধরে জ্বর। পল্লী চিকিৎসকের কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে খাওয়াইছি কমেনি। গতকাল হাসপাতালে নিয়ে আসছি। এখন একটু জ্বর কমেছে।
তেঁতুলিয়া উপজেলার বুড়াবুড়ি এলাকা থেকে ১০ মাস বয়সী ছেলে ওবায়েদুল্লাহকে হাসপাতালে নিয়ে এলেছেন আঞ্জু বেগম। তিনি বলেন, গতকাল থেকে আমার ছেলের ডায়েরিয়া। কিছুতেই কমছে না। এজন্য হাসপাতালে নিয়ে আসছি, এখন মোটামুটি সুস্থ।
আরও পড়ুন
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৩ জন শিশু ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
বহির্বিভাগেও দেখা গেছে দীর্ঘ লাইন। রোগীদের মধ্যে অনেকেই ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি, মাথা ব্যথা বা পানিশূন্যতায় ভুগছেন। অনেকে ভর্তি না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু বিশেষজ্ঞ) ডা. মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গরম আবহাওয়ার কারণে সর্দিকাশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ডায়েরিয়া ধীরে ধীরে কমে আসছে। বর্তমানে আমাদের আউটডোরেও প্রায় ২শ রোগী আসেন। যারা অল্প অসুস্থ তারা চিকিৎসা নিয়ে চলে যান। যারা বেশি অসুস্থ তারা ইনডোরে ভর্তি হন। আমাদের ওষুধ সরবরাহ পর্যাপ্ত আছে। বর্তমানে যেহেতু গরম আবহাওয়া, তাই হাত ধুয়ে খাওয়া। বাশি খাবার না খাওয়া এবং খাবার ঢেকে রাখা। বিনা কারণে রোদে না যাওয়া। শরীরে বেশি ঘাম হলে পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং ঠান্ডা আবহাওয়ায় থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৩৭.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে, সোমবার একই সময়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৩৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণনাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ রায় বলেন, চলমান তাপপ্রবাহ আগামী ১৩ তারিখ পর্যন্ত থাকবে। এরপর বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
এএমকে