শখের বাগানে সম্ভাবনার চারা, নড়াইলে বাণিজ্যিকভাবে অ্যাভোকাডোর চাষ

বাড়িতে ঢুকতে চোখে পড়ে মাঝারি আঁকারের একটি গাছ। সামনে এগিয়ে গেলে আরও দু’টি গাছ। একটু দূরে যেতে ৪০ শতক জমিতে পাতাবাহারি গাছের মত সারি সারি গাছগুলো তাদের সবুজ সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে। বাড়ির সামনের গাছটিতে প্রতিটি ডালে ডালে ঝুলছে সবুজ বর্ণের ফল। দেখতে অনেকটা নাশপাতি ও পেয়ারা আকৃতির। তবে দেখতে পেয়ারার আকৃতির হলে এটি বিদেশি ফল অ্যাভোকাডো।
ফলটির ওজন ৩ থেকে ৪শ গ্রামের মতো। ফলের ভেতরে ডিম আকৃতির বীজ। মিষ্টতা কম, খেতে মাখনের মতো নরম। উপকারী এই ফল এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নড়াইলের স্থানীয় পর্যায়েও। বাজারে চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কাঁচা অথবা পাকা, ভর্তা, সালাত, জুস, শরবত করে ও খাওয়া যায় ফলটি।
নড়াইল সদর উপজেলার মাইজপাড়া ইউনিয়নের মাগুরা গ্রামের বাসিন্দা আশরাফুজ্জামান টিটোর স্বপ্নের এ ফল বাগান। শখের বসেই ২০১৪ সালে তার নিজ বাড়ি আঙ্গিনায় প্রাথমিকভাবে আফ্রিকা থেকে ৫টি বীজ এনে রোপণ করেন। ফলন ভালো ও দাম বেশি হওয়ায় তিনি পরে পর্যায়ক্রমে ৪০ শতক জমিতে গড়ে তুলেছেন অ্যাভোকাডো বাগান। বর্তমানে তার বাগানে ২৯টি ফল গাছ রয়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, বাগানটিতে পাতাবাহারি গাছের মত ২৯টি অ্যাভোকাডো গাছ সবুজ পাতার সৌন্দর্য ছড়িয়ে বাতাসে দুলছে। গাছের ডালে সবুজ পাতার আড়ালে থোঁকায় থোঁকায় ঝুলছে ফল।
একটি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে কথা হয় আশরাফুজ্জামান টিটোর সঙ্গে। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীতে চাকরি করার সময়ে আমি আফ্রিকায় মিশনে যাই৷ ওখানে প্রচুর পরিমাণে অ্যাভোকাডো ফলের চাষ হয়। ওই দেশ থেকে ফল আনতে দেয় না। আমি ৫টি বীজ কার্বন পেপার দিয়ে মুড়িয়ে দেশে এনেছিলাম। বাড়িতে এনে ৫টি বীজ রোপণ করি। ১৪ সালে গাছ লাগানোর পর আমার ৫টা গাছের ২টি গাছে ফল ধরে। তারপর থেকে আমি প্রতি বছর অল্প করে ফল বিক্রি করি। নিজে আরও কিছু গাছ তৈরি লাগিয়েছি। ঢাকার সুপার শপগুলোতে আমার ফল বিক্রি হয়েছে। এখন তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে ফল নিতে চায়। প্রতি বছর ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার ফল বিক্রি করি। এর সঙ্গে চারাও তৈরি করেছি এবং বিক্রি করেছি। এটা একটা লাভজনক ফল। প্রচুর দাম পাওয়া যায়। ঢাকার এ ফলের দাম ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা কেজি। পাইকারি ৪ থেকে ৫শ টাকা বিক্রি করি। তারপর আমি ৪০ শতক জমিতে ৪০টি গাছ রোপণ করি। এই বছর সেই ফল গাছগুলোতে ফুল এসেছে। বাণিজ্যিকভাবে গাছগুলো আমি চাষ করছি। আশা করি আগামী বছর ওই সব গাছের ফলও বিক্রি করতে পারব।

চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি চাষ করতে হলে প্রথমে চারা সংগ্রহ করতে হবে। দেড় ফুট বাই দেড় ফুট গর্ত করে কম পক্ষে সাত দিন রেখে দিতে হবে। তার ভিতর জৈব সার, হাঁড়ের গুড়া, গোবরের সার দিয়ে রেখে দিতে হবে। ১ সপ্তাহ পর চারা রোপণের আগে ছত্রাকনাশক ওষুধ ছিটিয়ে চারা রোপণ করতে হবে। ৩ থেকে ৪ বছর পর গাছে ফল আসবে।
বাগানের সৌন্দর্য আর আফ্রিকান এ ফলতে দেখতে, ফলের চারা কিনতে প্রতিদিন ছুটে আসে দর্শনার্থীরা। কেউ ছবি তোলেন, কেউ চারা কেনেন। ছোট ছোট গাছগুলো নজর কাড়ে দর্শনার্থীদের।
বাগান দেখতে আসা রিপন মন্ডল বলেন, অ্যাভোকাডো বাগান দেখতে এসেছি। এসে ভালো লেগেছে। আমারও এরকম একটা বাগান করার ইচ্ছে। কয়েকটি চারার জন্য অর্ডার করে গেলাম কিনে নিয়ে যাব।
বাগান পরিচর্যা কাজে ব্যস্ত থাকা মিজানুর রহমান বলেন,আমি এই ফলের বাগান পরিচর্যা করি। এই বাগান পরিচর্যার কাজ করে আমার সংসার চলে।এই বাগান মালিক এই কাজে আমাকে বেতন দেয়।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, সুপার ফুড হিসাবে খ্যাত অ্যাভোকাডো ফল বর্তমানে বাংলাদেশ চাষ হচ্ছে। নড়াইল সদর উপজেলায় ও এক জন উদ্যোক্তা তিনি তার বাড়ির আশপাশে চাষ শুরু করেছেন। উদ্যোক্তার তিন থেকে ৪টি গাছে ফল হয়েছে। বাকি যে গাছগুলো আছে তাতে এখনও ফল আসেনি। তবে ফল আসার উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে। অ্যাভোকাডো একটি পুষ্টিকর ফল। ভোক্তাদের কাছে এর চাহিদা রয়েছে। তাকে দেখে এখন উদ্যোক্তা তৈরি হবে। আমরা কৃষি অফিস থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করব। আশা করি এ ফল চাষ জেলায় দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্প্রসারিত হবে।
আরকে