হাসপাতালের অব্যবস্থাপনায় গর্ভে শিশুর মৃত্যু, পুলিশ হেফাজতে ৩

ময়মনসিংহ নগরীর হেলথ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার কারণে গর্ভের শিশু মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে ক্লিনিকের মালিক-ম্যানেজারসহ ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ অভিযান চালিয়েছে।
ক্লিনিক মালিক রঞ্জণ দে, মো. পাপ্পু এবং ম্যানেজার মো. মজিবুর রহমান বর্তমানে কোতায়ালি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
এর আগে গত ৩ আগস্ট সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ময়মনসিংহ নগরীর ২নং পুলিশ ফাঁড়ির এসআই লুৎফর হোসেনের স্ত্রী রোজিনা বেগমকে (৪৫) নগরীর ব্রাহ্মপল্লী রোডস্থ হেলথ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে নেওয়া হয়। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার কারণে গর্ভে শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো থানায় এ নিয়ে কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শিবিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গত ২ আগস্ট গর্ভবতী রোগীটিকে জামালপুর হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখান থেকে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। কিন্তু রোগী ময়মনসিংহ এলে মো. হান্নান নামের এক দালাল রোগীকে নগরীর হেলথ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে আসে। কিন্তু তখন ওই হাসপাতালে ডাক্তার না থাকার কারণে রোগী ও তার স্বজন প্রায় আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করে বেরিয়ে যেতে চায়। এ সময় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ লিফট বন্ধ করে দেয়। এরপর রোগীকে সিড়ি বেয়ে নামাতে গেলে পড়ে গিয়ে গর্ভবতী ওই নারী জরায়ুতে আঘাতপপ্রাপ্ত হন এবং মারাত্মক রক্তক্ষরণ হয়। পরবর্তীতে ওই হাসপাতালেই গর্ভে শিশুটি মারা যায়।
ওসি আরও জানান, হাসপাতালটিতে ব্যাপক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাছাড়া এই প্রতিষ্ঠানটি অবৈধ। এ কারণে ঘটনাটি জানার পর সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এটি বন্ধের নির্দেশনা জারি করেছেন। এ ঘটনায় আমরা হাসপাতালের মালিক-ম্যানেজারসহ ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে রেখেছি। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এখনো ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
তবে ক্লিনিক আয়া সুইটি আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোগীটি জামালপুর হাসপাতাল থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছিল। কিন্তু এই হাসপাতালের সাবেক ম্যানেজার মো. হান্নান রোগীটিকে এখানে নিয়ে আসে। তখন ডাক্তার ছিল না। এ সময় রোগীর মারাত্মক রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। পরে রোগীর স্বজনরা লিফট বন্ধ থাকার কারণে ২ তলা থেকে রোগীকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে সিড়ি দিয়ে নামাচ্ছিল। এ কাজে আমিও তাদের সহযোগিতা করেছি।
ভুক্তভোগী নারীর স্বামী লুৎফর হোসেন বলেন, আমি রোগীর কাছে ব্যস্ত আছি, পরে কথা বলব। এরপর আরও কয়েকবার তাকে ফোন করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। বতর্মানে তার স্ত্রী নগরীর পিপলস প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
তবে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও হাসপাতালটির মালিক পক্ষের কারো বক্তব্য জানা যায়নি। এমনকি সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়েও দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় হাসপাতাল বন্ধের নোটিশ জারি করেছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. সাইফুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে প্রতিষ্ঠানের নথিপত্র যাচাই বাছাই করা হয়েছে। এতে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের লাইসেন্স পাওয়া গেলেও অনেক ত্রুটি রয়েছে। অনেকদিন ধরে এই হাসপাতালটি নিয়মবহির্ভূতভাবে পরিচালিত হয়ে আসছিল। যা প্রাইভেট হাসপাতাল পরিচালনার পরিপন্থি। এদিকে এ ঘটনার অনুসন্ধানে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সিভিল সার্জন আরও বলেন, ঘটনাটি তদন্তের জন্য ইতোমধ্যে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত হেলথ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতাল বন্ধ রাখার জন্য নিদের্শ দেওয়া হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত কমিটির সদস্যদের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি।
আমান উল্লাহ/আরকে