ভেঙে ফেলা হয়েছে বিদ্যালয়, ছাউনির নিচে চলছে পাঠদান

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে যমুনা নদীর ভাঙন আতঙ্কে ভেঙে ফেলা হয়েছে চর ডাকাতিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি। এখন ফসলি মাঠের মধ্যে টিনের ছাউনি তুলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এতে ওই অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
ভেঙে ফেলা চর ডাকাতিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বিভিন্ন নির্বাচনে চিকাজানী ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
জানা গেছে, চলতি বছরের মে মাসের দিকে যমুনায় তীব্র ভাঙনের ফলে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানী ইউনিয়নের চর ডাকাতিয়াপাড়া গ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরে ভাঙন আতঙ্কে চর ডাকাতিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিকে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে বিদ্যালয়ের ক্লাস ও অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ভেঙে ফেলা বিদ্যালয়ের স্থান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে একই ইউনিয়নের ফারাজি গ্রামের ব্যক্তি মালিকানা জমিতে খোলা আকাশের নিচে টিনের ছাউনি দিয়ে পাঠদান দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যালয়ে চলতি বছরের গত জুন মাসের ২৫ তারিখ থেকে খোলা আকাশের নিচে এভাবেই পাঠদান চলছে।
এদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি চর ডাকাতিয়াপাড়া গ্রাম থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ফারাজি গ্রামে স্থানান্তর করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ডাকাতিয়াপাড়া গ্রামের মানুষ। তাদের দাবি বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করে এক কিলোমিটার দূরে ফারাজি গ্রামে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করায় এ গ্রামের অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না।
চর ডাকাতিয়া পাড়া গ্রামের সালমান মিয়া বলেন, বিদ্যালয়টি অর্থ, শ্রম ও মেধা দিয়ে আমাদের চর ডাকাতিয়াপাড়ার পূর্ব পুরুষরা প্রতিষ্ঠা করেছে। বিদ্যালয়টি চর ডাকাতিয়াপাড়াতেই পুনরায় স্থাপিত করা হোক।
সামিউল ইসলাম নামে আরেকজন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে প্রাইমারি স্কুলটি চিকাজানী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ভোট কেন্দ্র। যেখানে স্কুলটি স্থানান্তর করা হয়েছে সেটি পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে। পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে স্কুল নিয়ে গেলে ভোট দিতে আমাদের অনেক সমস্যা হবে।
বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মিশাদ মিয়া বলে, ভাঙার আগে স্কুলটি আমাদের বাড়ির কাছে ছিল। এখন স্কুল দূরে নিয়ে যাওয়ায় যাতায়াত অনেক কষ্ট হয়। আবার টিনের ছাউনির নিচে ক্লাস করতে গরম লাগে।
প্রধান শিক্ষক ফাতেমা সিদ্দিকা বলেন, শিক্ষার্থীদের পাঠদানই আমাদের মূল লক্ষ্য। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে স্থানে স্কুলটি স্থাপন করবেন শিক্ষকরা সেখানেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাবে। বিদ্যালয় পুনরায় স্থাপনের জায়গা নিয়ে আমাদের শিক্ষকদের কোনো আপত্তি নেই।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আতাউর রহমান বলেন, চর ডাকাতিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্বের দাতাগণ যে স্থান দিতে চান সেটি নদী থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে, তাই সেখানে বিদ্যালয়টি স্থাপন বিধি সম্মত নয়। চর ডাকাতিয়াপাড়া স্কুলের জায়গা নির্ধারণ নিয়ে ইতোপূর্বে শিক্ষক-অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এজন্য বিদ্যালয়টি নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে এক কিলোমিটার দূরের একটি জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চর ডাকাতিয়াপাড়া গ্রামে ১৯৯৭ সালে স্থাপিত হয় চর ডাকাতিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। ওই গ্রামের স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মতিউর রহমান বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার জন্য ৩৩ শতক জমি প্রদান করেন। টিনসেড ঘর থেকে ২০১১ সালে সরকারি অর্থায়নে দ্বিতল পাকা ভবন নির্মিত হয়। চলতি বছরের মে মাসের দিকে যমুনার ভাঙনের ফলে বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার উপক্রম হলে দ্বিতল ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়।
মুত্তাছিম বিল্লাহ/আরকে