‘ভুয়া পুলিশ’ বলে চিৎকার, সত্যি মনে করে মারধর শুরু করেন মানুষ

যশোরে অভিযানে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) চার সদস্য। এদের মধ্যে শহিদুল ইসলাম নামে এক কনস্টেবলকে গুরুতর আহত অবস্থায় যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
গত বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় শহরের রাজারহাট মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ গতকাল বৃহস্পতিবার কয়েকজনকে আসামি করে পৃথক দুটি মামলা করেছে। যারমধ্যে একটি সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে, অন্যটি মাদক আইনে।
সিআইডি পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে এসআই হাবিব, এসআই তরিকুল ইসলাম, এএসআই মো. জাহিদ হোসেন এবং কনস্টেবল শহিদুল ইসলাম নিয়ে গঠিত একটি দল রাজারহাট এলাকায় অভিযান চালায়। এসময় তারা ওই এলাকার মাসুদ রানার ছেলে তুষারকে কাশ্মীরি বিরিয়ানি হাউজের ভেতরে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে তল্লাশি করে। একপর্যায়ে তার কাছ থেকে ২০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়া গেছে দাবি করে সিআইডি।
এ সময় তুষার সিআইডি সদস্যদের 'ভুয়া পুলিশ' বলে চিৎকার শুরু করেন। এতে স্থানীয় কয়েকজন সিআইডি পুলিশদের ওপর হামলা চালায়। পরবর্তীতে যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।
রাজারহাট এলাকার চা দোকানি মোতাহার হোসেন বলেন, 'কাশ্মীরি বিরিয়ানি হাউজের সামনে থেকে মারামারি করতে করতে আমার দোকানের সামনে চলে আসে। যারা সিআইডি পরিচয় দিয়েছেন তারা ছিলেন সাদা পোশাকে। তারা যখন তুষারকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে, ও তখন বলছিলো, আমার টাকা মোবাইল নিয়ে চলে যাচ্ছে, ভুয়া সিআইডি পরিচয়ে। আমাকে বাঁচাও। তখন কিছু লোক উত্তেজিত হয়ে তাদের ওপর হামলা শুরু করে। এসময় সিআইডির দুজন পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ আসলে ঘটনাস্থল স্বাভাবিক হয়।
স্থানীয় কয়েকজন জানায়, তুষারের নামে পূর্বে মাদকের কোন মামলা নেই। তবে মারামারিসহ কয়েকটি মামলা রয়েছে। সিআইডি সদস্যদের অফিসের পোশাক থাকলে তাহলে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটতো না।
এদিকে অভিযুক্ত তুষারের দাবি ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করায় মারামারি সূত্রপাত হয়। তাকে একটি মোবাইল ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, হঠাৎ দুই ব্যক্তি তাকে ধরে কেয়া হোটেলের ভেতর নিয়ে যায়। এরপর পকেটে কি জানতে চাইলে তিনি পকেটে থাকা দুটি ফোন ও নগদ ৫ হাজার টাকা বের করে দেন। একপর্যায়ে ওই দুই ব্যক্তির একজন মোবাইল ও টাকা নিয়ে চলে যেতে গেলে তিনি প্রতিবাদ করেন। এসময় একজন তার হাতে থাকা একটি পোটলা দেখিয়ে বলে তোর কাছে ইয়াবা পাওয়া গেছে।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসনাত জানান, সিআইডির একজন এসআই বাদী হয়ে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলা করেছেন। পাশাপাশি মাদক আইনে আরও একটি মামলা হয়েছে, যার আসামি তুষারসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজন। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি বলেও জানান তিনি।
এতিকে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিআইডি পুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার মোসা. সিদ্দিকা বেগম। তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যরা অভিযানে গেছে। তারা কাউকে অহেতুক ফাঁসাতে যাবে কেন। তুষারের বিরুদ্ধে মামলাও আছে।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকারি কাজে বাধা ও মাদক ব্যবসার অভিযোগে তুষারের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনের নামে মামলা হয়েছে। অভিযুক্তদের ধরতে যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশ কাজ করছে।
রেজওয়ান বাপ্পী/এমটিআই