সমতলে আনারকলি চাষে সফল ঝিনাইদহের স্টালিন

সাধারণত ‘আনারকলি’ বা ‘ট্যাং ফল’ নামে পরিচিত বিদেশি ফল প্যাশন ফ্রুট, যা এতদিন কেবল পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ে চাষ হতো। এবার সেই ফলের বাণিজ্যিক চাষ সফলভাবে করে দেখিয়েছেন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মাহমুদ হাসান স্টালিন।
তিনি মহেশপুর উপজেলার পান্তাপাড়া ইউনিয়নের ঘুঘরি গ্রামের বাসিন্দা। উদ্যম ও পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো সমতল ভূমিতে প্যাশন ফ্রুট বা আনারকলির বাণিজ্যিক চাষ শুরু করে এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তরুণ এই উদ্যোক্তা।
জানা যায়, হালকা টক-মিষ্টি স্বাদের আনারকলি বাংলাদেশে ট্যাং ফল নামে পরিচিত। তবে এর ইংরেজি নাম ‘প্যাশন ফ্রুট’। এই ফলটির জনপ্রিয়তাও দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে পর্যটন এলাকা কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় এই ফলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বাগান থেকে প্রতি পিস আনারকলি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে আনারকলি বা ট্যাং ফল চাষ করা যায়। ফলে উৎপাদন খরচও কম এবং এতে নেই কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি। স্বাদ ও গন্ধে অনন্য এই ফলের চাষে দেশের ফল উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, আনারকলি ফল বিদেশে ‘প্যাশন ফ্রুট’ নামে পরিচিত হলেও দেশে একে আনারকলি বা ট্যাং ফল বলা হয়ে থাকে। ভিটামিন সি, আয়রন, জিংক ও ভিটামিন এ-তে সমৃদ্ধ এই ফল।
তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মাহমুদ হাসান স্টালিনের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, প্রায় ৬-৭ বছর আগে তিনি কৃষিকাজ শুরু করেন। আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে কৃষিতে নতুনত্ব আনতে চেয়েছেন তিনি। প্রথম দিকে প্রায় ৬ বিঘা জমিতে ড্রাগন, মাল্টা, পেয়ারা ও আঙুরের চাষ শুরু করেন।
পরে ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় গণমাধ্যমে প্যাশন ফ্রুট নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেখে তিনি এই ফল চাষে আগ্রহী হন। ওই বছরই পরীক্ষামূলকভাবে দুই শতক জমিতে আনারকলি চাষ শুরু করেন। গত বছর বাগান থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকার ফল বিক্রি করেন। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ টাকার আনারকলি বিক্রি করেছেন। মাত্র দুই শতক জমিতে এই ফল চাষ করে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার ফল বিক্রি করেছেন তিনি। বর্তমানে আরও আড়াই বিঘা জমিতে আনারকলির চাষ শুরু করেছেন।

মহেশপুরের ঘুঘরি গ্রামের মানিক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্টালিন ভাইয়ের আনারকলি ফলের বাগান দেখতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে। মাত্র দুই শতক জমির বাগানে হাজার হাজার ফল ধরে। এই ফলের উৎপাদন অনেক বেশি। আনারকলি খেতেও দারুণ সুস্বাদু।
স্থানীয় কৃষক টিপু সুলতান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা আগে এই ফল চিনতাম না। স্টালিনের বাগান দেখে অনেকেই হাসাহাসি করত। কিন্তু ফল ধরার পর সবাই অবাক হয়ে গেছি। প্রতিটি গাছে হাজার হাজার ফল ধরে। এই ফল কিনতে চট্টগ্রাম, বরিশাল, নোয়াখালী, খুলনাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসছে।
তরুণ উদ্যোক্তা মাহমুদ হাসান স্টালিন বলেন, এক বিঘা জমিতে আনারকলি চাষ করে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকার ট্যাং ফল বিক্রি করা সম্ভব। এই ফল পিস হিসেবে বিক্রি হয়। উৎপাদন খরচ খুবই কম, কারণ এতে কোনো রাসায়নিক সার বা কীটনাশক লাগে না। আমি জৈব পদ্ধতিতে চাষ করি। এখন ফল উৎপাদনের পাশাপাশি চারা উৎপাদনও করছি। অনেকেই এসে চারা নিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, প্রথমে যখন আবাদ শুরু করি, তখন কেউ এই ফল চিনতো না। এখন ইউটিউব-ফেসবুক দেখে অনেকেই চিনতে পারছে। ফলে স্থানীয় বাজারেও এর চাহিদা বাড়ছে। প্রতি পিস আনারকলি পাইকারি ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করছি।
আরও জানান, দুই শতক জমিতে আনারকলির ফলন ভালো হয়েছে, তাই এখন আরও আড়াই বিঘা জমিতে চাষ বাড়িয়েছি। বছরে এক বিঘা জমিতে গড়ে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকার আনারকলি বিক্রি করা সম্ভব।
আরও পড়ুন
স্টালিন বলেন, আনারকলি গাছ লতার মতো। এটি মাচায় চাষ করতে হয়। প্রতিটি গাছের ডগায় ডগায় প্রচুর পরিমাণে ফল ধরে। এই ফলের চাহিদাও বাড়ছে, দামও ভালো। রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না, জৈব পদ্ধতিতে আবাদ করা যায়। ফলে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকিও নেই।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. কামরুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঝিনাইদহে নানা জাতের দেশি-বিদেশি ফল উৎপাদন হচ্ছে। মহেশপুরে এক উদ্যোক্তা বিদেশি প্যাশন ফ্রুট চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। জেলা কৃষি বিভাগ থেকে স্টালিনসহ সকল কৃষি উদ্যোক্তাকে সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।
আব্দুল্লাহ আল মামুন/এআরবি