একসঙ্গে মা-বোনসহ পাঁচ স্বজন হারিয়ে স্তব্ধ মুনির

ঢাকার একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিং কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার বাসিন্দা এনামুল হক পাটোয়ারীর পুত্র মুনিরুল হক পাটোয়ারী। বুধবার (৫ নভেম্বর) সকালটা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষার্থীর জীবনে নিয়ে এলো এক দুঃসহ অধ্যায়। সড়ক দুর্ঘটনায় হারালেন তিনি মা, বোনসহ পাঁচ প্রিয়জনকে।
কক্সবাজারের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী এলাকায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজারগামী একটি নোহা মাইক্রোবাসের সঙ্গে চট্টগ্রামগামী বেপরোয়া গতির ‘মারছা’ পরিবহনের একটি বাসের সংঘর্ষ হয়। মাইক্রোবাসে থাকা আট যাত্রীর মধ্যে পাঁচ নারী ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। নিহতরা সবাই মুনিরের পরিবারের সদস্য।
নিহতরা হলেন- মুনিরের মা রুমি বেগম (৬৫), বড় ভাইয়ের শাশুড়ি রিজওয়ানা মজুমদার শিল্পী (৫৫), ভাইয়ের স্ত্রী ফারজানা মজুমদার লিজা (২৮), মুনিরের ছোট বোন ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (এমবিএ) শিক্ষার্থী সাদিয়া পাটোয়ারী (২৩) এবং ভাইয়ের শ্যালিকা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ফারহানা মজুমদার (২৪)।
গুরুতর আহত অবস্থায় মুনিরের বড় ভাই আমিনুল হক পাটোয়ারী (৪৩), তার ছেলে সামাদ পাটোয়ারী এবং শ্যালক শাহেদ মজুমদার লিশান বর্তমানে চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বুধবার সন্ধ্যায় চকরিয়ায় পরিবারের সদস্যদের মরদেহ নিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মুনির।
তিনি ঢাকাপোস্টকে বলেন, রাতে মা ও বোনের সঙ্গে কথা হয়েছিল। মা বলেছিলেন, কুমিল্লায় আসলে গরুর মাংস খাওয়াবেন ওটাই ছিল আমাদের শেষ কথা। এই ট্যুরে আমার স্ত্রী ও সন্তানসহ যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সন্তান অসুস্থ থাকায় যেতে পারিনি।
আবেগাপ্লুত মুনির চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার সবচেয়ে প্রিয় রোডটা আজ অব্যবস্থাপনার কারণে জীবনের ট্রাজেডি হয়ে গেল। কিছুদিন আগেও আমি নিজে ড্রাইভ করে এখানে এসেছিলাম। লবণের গাড়ি আর বেপরোয়া গতির বাসের কারণে প্রতিনিয়ত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। দ্রুত সড়কের দুই পাশ সম্প্রসারণ করা না হলে আরও অনেককে স্বজন হারাতে হবে।
মুনিরের বন্ধু ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর শামীম আহমেদ (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মনা নামে পরিচিত) বলেন, এই করুণ পরিণতি মেনে নেওয়া যায় না। মারছা বাসের বেপরোয়া গতিই দুর্ঘটনার কারণ। দ্রুত এই বাস বন্ধ করা উচিত এবং সড়কের অব্যবস্থাপনা রোধে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া জরুরি।
একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে চৌদ্দগ্রামের ফাগুনকরা ও চান্দিশকরায় নেমে আসে শোকের ছায়া।
চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন পাটোয়ারী বলেন, এমন মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আল্লাহর কাছে নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
চকরিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহন দুটি জব্দ করা হয়েছে এবং এ ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়া চলছে। রাতে মরদেহ হস্তান্তরের পর কুমিল্লার উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার জানাজা শেষে গ্রামের বাড়িতে দাফন সম্পন্ন হবে বলে পরিবার জানিয়েছে।
ইফতিয়াজ নুর নিশান/এআরবি