রায় হয়েছে, কিন্তু শান্তি পাব ফাঁসি কার্যকর হলে : শহীদ শাহরিয়ারের মা

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায়ে খুশি হলেও, ফাঁসি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত সন্তুষ্ট নন বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার প্রথম শহীদ প্রকৌশলী শাহরিয়ার শুভর মা চম্পা খাতুন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলে আমাদের মতো শহীদ পরিবারগুলো প্রকৃত শান্তি পাবে।
চম্পা খাতুন বলেন, পলাতক শেখ হাসিনাসহ অন্যদের দ্রুত দেশে এনে রায় কার্যকর করা হোক। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে রাজসাক্ষী হওয়ার কারণে। পাঁচ বছর খুব কম সময়। যারা আমাদের মতো সন্তানহারা, তারা জানে এই দুঃখ কত বড়। আমার ছেলেকে ফিরে পাব না জানি, কিন্তু অন্তত বিচারটা যেন সম্পূর্ণ দেখি।
ছেলের ছবি বুকে চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে চম্পা খাতুন আরও বলেন, অনেক কষ্ট করে চার সন্তানকে মানুষ করেছি। সংসারে একটু স্বস্তি এসেছিল, ঠিক তখনই শাহরিয়ারের মৃত্যু সবকিছু ভেঙে দিল। দেড় বছর হয়ে গেল, আমরা এখনও সন্তানহারা শোকে দিন কাটাচ্ছি। পিতৃহারা শিশু মুহিন এখন কী করবে? যে সরকারই আসুক, তার ভবিষ্যতের দায়িত্ব যেন নেয়।
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ঢাকার মিরপুরে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন প্রকৌশলী শাহরিয়ার শুভ। চার দিন পর ২৩ জুলাই রাতে ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। রাতেই মরদেহ চুয়াডাঙ্গায় নেওয়া হয় এবং পরদিন গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। কৃষক পরিবারের সন্তান শুভ ঢাকার একটি লিফট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। এই ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পাশাপাশি এই মামলার অন্য আসামি হলেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক।
এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া একমাত্র আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের পাঁচ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন।
এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে মারণাস্ত্র ব্যবহার করে নিরীহ, নিরস্ত্র দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা এবং ৩০ হাজার মানুষকে আহত করা হয়েছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই পাঁচ অভিযোগ হলো, উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।
কোটা বিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড়ে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হন। ১৭ জুলাই পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুরে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয় তাকে। আবু সাঈদকে প্রকাশ্যে গুলি করার দৃশ্য দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হলে সারাদেশে আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের।
আফজালুল হক/এমএএস