‘আ.লীগ-ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন করতে মাঠে নেমেছে বিএনপি-ছাত্রদল’

জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের ক্ষত এখনো শুকায়নি। হাসপাতালে আহত আমাদের ভাইরা এখনো ব্যথায় কাতরাচ্ছে। কিন্তু ঠিক এই সময়ে একটি দল আবারও আওয়ামী ফ্যাসিবাদী কায়দায় ধর্ষণ, লুটপাট, চাঁদাবাজি ও দখলদারির পথে দেশকে ধ্বংস করার কাজ শুরু করেছে এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ। তিনি বলেন, যে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আমরা জীবন দিয়েছি, শহীদ ভাইয়েরা জীবন দিয়েছেন সেই রাষ্ট্রীয় কাঠামো ধ্বংসকারী আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকেই এখন বিএনপি ও ছাত্রদল পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় জয়পুরহাট জেলা শহরের শহীদ ডা. আবুল কাসেম ময়দানে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির জয়পুরহাট জেলা শাখা আয়োজিত জনশক্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে ১৩ জন ছাত্রলীগ পাওয়া যায়, পাবনা মেডিকেল কলেজে ১১ জন ছাত্রলীগ পাওয়া যায়, রাজশাহী মেডিকেলসহ দেশের প্রায় সব ক্যাম্পাসেই ছাত্রদল যখন কমিটি দেয়, সেখানে ছাত্রলীগকে আবারও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। এই সেই ছাত্রলীগ, যারা জুলাই অভ্যুত্থানে আমাদের ভাইদের ওপর সরাসরি গুলি চালিয়েছিল, আমাদের বোনদের ওপর নির্যাতন করেছিল, ক্যাম্পাস থেকে আমাদের বের করে দিয়েছিল। আর আজ আপনারা সেই ছাত্রলীগকেই পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন। মনে রাখবেন, ছাত্রলীগের যে পরিণতি হয়েছিল, আপনারা যদি সেদিক থেকে ফিরে না আসেন এর চেয়ে কঠিন পরিণতি আপনাদের ভোগ করতে হবে।
তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেব বলেছেন- আমরা বিএনপি বেঁচে থাকতে আওয়ামী লীগের গায়ে ফুলের টোকাও লাগতে দেব না। আবার তিনি বলেছেন- তারা ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের সব মামলা প্রত্যাহার করে নেবেন। শুধু তাই নয়, ঠাকুরগাঁও থেকে শুরু করে সারাদেশে বলেছেন- আমরা থাকতে আওয়ামী লীগের কোনো ভয় নেই। বিএনপিকে বলতে চাই, এ দেশ আপনাদের কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। এসব মামলা আপনারা করেননি, করেছে শহীদদের পরিবার, করেছে আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারী ভাইরা। রাষ্ট্রের কোন ম্যান্ডেটে আপনারা মামলা প্রত্যাহারের কথা বলছেন? যদি মনে করেন নতুন বাংলাদেশে এসে আপনারা শহীদদের বিরুদ্ধেই কাজ করবেন, জুলাই অভ্যুত্থানের বিপরীতে অবস্থান নেবেন, ভারতের দালালি করবেন, শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করবেন তাহলে মনে রাখবেন, ইসলামী ছাত্রশিবির চুপ করে বসে থাকবে না।
আজিজুর রহমান আজাদ বলেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ আমাদের ১০১ জন ভাইকে শহীদ করেছে, অসংখ্য ভাইকে আহত ও পঙ্গুত্ববরণে বাধ্য করেছে। জেল-জুলুম করেও তারা আমাদের দমাতে পারেনি। আপনাদের মতো সামান্য মাস্তানরা আমাদের থামাতে পারবে এ রকম স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন।
তিনি আরও বলেন, ইসলামী ছাত্রশিবির দেশে নতুন ধারার রাজনীতি গড়ে তুলতে চায় যেখানে থাকবে আদর্শ, নৈতিকতা ও শিক্ষার্থী-বান্ধব কার্যক্রম। গত এক বছরে ইসলামী ছাত্রশিবির যে পরিমাণ কাজ করেছে, বাংলাদেশের সব ছাত্র সংগঠনের কাজ একত্র করলেও তার দশভাগের এক ভাগও হবে না। খেয়াল করলে দেখবেন, ইসলামী ছাত্রশিবির এমন একটি সংগঠন যার শক্তিশালী বুদ্ধিবৃত্তিক কাঠামো ও গবেষণা সেল রয়েছে। আমাদের প্রতিবছর ১২টি পত্রিকা প্রকাশিত হয়- স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা বা ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থীরা কী পড়বে, বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্তরা কী পড়বে এসব বিবেচনায় পত্রিকা প্রকাশ করা হয়। ছাত্রশিবিরের সমৃদ্ধ প্রকাশনা ভান্ডারও রয়েছে।
জনশক্তি সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রশিবিরের জেলা সভাপতি তারেক হোসেন। জেলা সেক্রেটারি আশরাফুল ইসলামের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি ও ডাকসুর সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) মহিউদ্দীন খান, জয়পুরহাট-১ আসনের জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী ও জেলা জামায়াতের আমির ডা. ফজলুর রহমান সাঈদ, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি গোলাম কিবরিয়া, জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ, জয়পুরহাট-২ আসনের জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী ও জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি রাশেদুল ইসলাম সবুজ প্রমুখ।
চম্পক কুমার/এআরবি