আড়াই মাস পর দেশে ফিরলো সাগরের মরদেহ

আমার ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল ছোট বোনটাকে ভার্সিটিতে পড়িয়ে একজন আইনজীবী বানানো। কিন্তু এখন তো আমার ভাই নেই এই স্বপ্ন পূরণ করবে কে? যেভাবে আমাদের পরিবার থেকে আমার ভাইকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে, সেভাবেই সেই খুনিও যেন তার পরিবার থেকে দূরে যায়, যেন আর মায়ের কোলে ফিরতে না পারে। আমরা তার কঠোর শাস্তি চাই। সরকারের কাছে দাবি, আমার মা-বাবা যেন বাঁচতে পারেন এবং আমার ভাইয়ের রেখে যাওয়া স্বপ্ন পূরণের ব্যবস্থা করেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেন ইতালিতে নৃশংসভাবে খুন হওয়া মাদারীপুরের যুবক সাগর বালার বড় বোন কাকলি বালা। শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে প্রায় আড়াই মাস পর ইতালি থেকে সাগরের মরদেহ পৌঁছায় মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম ইউনিয়নের পাখুল্লা গ্রামে। মরদেহ আসার সাথে সাথেই গ্রামজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন, বৃদ্ধ মা-বাবা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত সাগর বালা (২১) রাজৈর উপজেলার পাখুল্লা গ্রামের কৃষক কুমোদ বালার একমাত্র ছেলে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন মেজো। ছোট বোনকে আইনজীবী বানানোর স্বপ্ন ছিল তার। প্রায় আড়াই বছর আগে ১৮ লাখ টাকা ধারদেন করে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি পৌঁছান। সেখানে গত দুই বছর ধরে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন। কাজের সুবাদে ইউক্রেনের নাগরিক দুমিত্রে সুরাইনের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। পরে দুমিত্রে সাগরের কাছ থেকে ১০০ ইউরো ধার নেন। সাগর টাকা ফেরত চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে দুমিত্রে তাকে খুন করে।
এরপর সাগরের মরদেহ ২৬ টুকরো করে একটি কালো ব্যাগে ভরে ইতালির পিরুগিয়া শহরের স্পোলেটো এলাকায় রেললাইনের পাশে ফেলে দেন তিনি। এদিকে ১৮ সেপ্টেম্বর সাগর নিখোঁজ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। ২৩ সেপ্টেম্বর ইতালিয়ান পুলিশ তার খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে এবং একই দিনে হত্যাকারী দুমিত্রেকে গ্রেপ্তার করে। পরে মরদেহ দেশে আনার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতালিয়ান দূতাবাসে চিঠি পাঠায়। প্রায় তিন মাস পর ইতালি সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় শুক্রবার বিকেলে মরদেহ সাগরের বাড়িতে পৌঁছে। সন্ধ্যায় বাড়ির উঠোনেই তার শেষকৃতি সম্পন্ন করা হয়। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও স্থানীয়রা।
নিহত সাগরের ছোট মামা সুরেশ চন্দ্র মণ্ডল ঢাকা পোস্টকে বলেন, খুনি ইউক্রেনের নাগরিককে ইতালির পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে এবং সরকারবাদী মামলা চলছে। তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। আমার ভাগিনাই সংসারের সব খরচ চালাতো। এখন সব শেষ হয়ে গেছে। তাদের কিছু দেনাও আছে, যা পরিশোধ করার সামর্থ্য পরিবারের নেই। তাই সরকারের সহযোগিতা চাই।
সাগরের চাচা দীনেশ চন্দ্র বালা বলেন, যাকে হত্যা করা হয়েছে, তার পরিবারের হাল ধরার মতো আর কেউ নেই। সাগরই ছিল একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাই ইতালি সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার ও অসহায় পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হোক।
এ বিষয়ে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইতালিতে খুন হওয়া সাগরের মরদেহ দেশে আসার বিষয়ে আমি জানি না, আমাকে কেউ জানায়নি। তবে পরিবার যদি সহযোগিতা চায়, তাহলে তার কর্মরত কোম্পানিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিঠি দেওয়া হবে। যদি কোনো ক্ষতিপূরণ পাওয়ার মতো পরিস্থিতি থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে তার ব্যবস্থা করা হবে।
আকাশ আহম্মেদ সোহেল/এআরবি