ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়ছেন সুনামগঞ্জের স্বপ্না, বাঁচতে চান সন্তানদের জন্য

এক সময় যার জীবন কাটত সংসারের ছোটখাটো ব্যস্ততায়, সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনায় আর স্বামীর ছোট ব্যবসায় পাশে দাঁড়িয়ে— আজ সেই স্বপ্না আচার্য্য মৃত্যুর মুখোমুখি। সুনামগঞ্জ পৌরশহরের পশ্চিম তেঘরিয়া এলাকার মধ্যবিত্ত পরিবারের এই গৃহবধূ বর্তমানে মরণব্যাধি ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছেন। তবে তার সবচেয়ে বড় লড়াই এখন জীবন নয়, চিকিৎসা ব্যয় বহন করার সংগ্রাম।
গলায় সামান্য ব্যথা থেকে শুরু, পরে খেতে গিয়ে অস্বস্তি, এমনকি কথা বলতে গেলেও যন্ত্রণা। এই অবস্থায় কয়েক মাস ধরে অসহ্য ব্যথা নিয়ে কষ্ট পেতে থাকেন স্বপ্না। প্রথমে ভেবেছিলেন, খাবারের সঙ্গে মাছের কাঁটা বিঁধেছে। সময় গেলে সেরে যাবে। কিন্তু ব্যথা না কমায় শুরু হয় চিকিৎসার জন্য ছুটোছুটি। সিলেটের বিভিন্ন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পরেও কোনো নিশ্চিত ফল না মেলায় পরে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। বায়োপসি রিপোর্টে নিশ্চিত হওয়া যায়, গলার ডান পাশে ক্যানসার বাসা বেঁধেছে।
এ বিষয়ে নাক, কান ও গলার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মো.আখতার-উজ-জামান আকন্দ ঢাকা পোস্টকে জানান, স্বপ্নার গলার ডান পাশে ক্যানসার হয়েছে। দীর্ঘদিন সঠিক চিকিৎসা না নেওয়ার কারণে এটি এখন অনেকটা ছড়িয়ে গেছে। ক্যানসারের অবস্থান থেকে টিস্যু সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল, সেখান থেকে ক্যানসার নিশ্চিত হয়েছে। বর্তমানে কেমোথেরাপি দেওয়া হচ্ছে। তিনি এখন যে পর্যায়ে আছেন, সেই অবস্থায় চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালানোর মতো সামর্থ্য নেই স্বপ্না আচার্য্যের পরিবারের। তার স্বামী নেপাল আচার্য্য পেশায় সামান্য পান বিক্রেতা। শহরের পুরাতন বাসস্টেশন এলাকায় টিনের দোকানে পান বিক্রি করেই পাঁচজনের সংসার চালান তিনি। দিনে যা আয় হয় তা দিয়েই কষ্টে চলে সংসার। সেখানে সাত থেকে আট লাখ টাকার চিকিৎসা ব্যয় বহন করা তার পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
নেপাল আচার্য্য কণ্ঠে অসহায়ত্ব নিয়ে ঢাকাপোস্টকে বলেন, “স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে প্রায় সাত লক্ষ টাকার প্রয়োজন। পান বিক্রি করে সংসারের খরচই ঠিকমতো চলেনা, সেখানে এতো টাকা জোগাড় করব কিভাবে? যদি সবাই একটু সাহায্য করতেন, তবে স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে পারতাম।”
স্বপ্না আচার্য্যের তিন মেয়ে ও এক ছেলে। দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে, ছেলে বাবার দোকানে সময় কাটায়। সন্তানদের কথা বলতে গিয়ে স্বপ্নার চোখ ভিজে ওঠে। তিনি বলেন, “বাঁচতে চাই শুধু ওদের জন্যই। ছোট মেয়েটা ও ছেলেকে নিয়ে থাকতে চাই। ওদের ভবিষ্যৎ দেখতে চাই।”
স্বপ্নার শাশুড়ি মালতি আচার্য্য বলেন, টাকাপয়সা নেই বলে চিকিৎসা ঠিকমতো করাতে পারছি না। ছেলে পাগলের মতো চেষ্টা করছে। সবাই যদি একটু সাহায্য করে তাহলে আমার বউটার চিকিৎসা শুরু হবে।
প্রতিবেশীদের মতে, পরিবারটি এখন সম্পূর্ণ অসহায় পরিস্থিতিতে। চিকিৎসা চালিয়ে যেতে না পারলে হয়তো স্বপ্না আচার্য্যের জীবনের আশা নিভে যাবে।
একজন মা বাঁচার আকুতি করছেন নিজের জন্য নয়, সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য। সমাজের সহমর্মিতা ও সহায়তা তাঁর জন্য হতে পারে নতুন জীবনের আলো।
তামিম রায়হান/এমটিআই