প্রতিবন্ধকতা জয় করে মানসীর স্নাতক পাস

মাত্র ৩ ফুট উচ্চতা—শারীরিক এই সীমাবদ্ধতা থামিয়ে রাখতে পারেনি মানসী দাসকে। জন্মগত প্রতিবন্ধকতা সঙ্গী হলেও আজ তিনি সফলভাবে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। প্রতিটি ধাপে যুদ্ধ করে এগিয়ে যাওয়া মানসী এখন সরকারি চাকরি পেতে নতুন লড়াইয়ে নেমেছেন।
নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চর আমান উল্লাহ ইউনিয়নের কালীচরণ গ্রামের পোদ্দার বাড়ির শশাঙ্ক দাসের মেয়ে মানসী দাস।
মানসীর দৈনন্দিন জীবন ছিল সংগ্রামে ভরা। সামান্য বৃষ্টি হলেই কাদা-পানিতে ভরা পথ পাড়ি দিতে তার কষ্ট হতো কয়েকগুণ বেশি। যে পথ অন্যরা ১০ মিনিটে পার হতো, সেই পথ মানসীর লাগত পুরো এক ঘণ্টা। একটানা হাঁটতে পারতেন না—৫ মিনিট হাঁটলে ৫ মিনিট বিশ্রাম নিতে হতো তাকে। এমন কঠিন বাস্তবতাকে সাথী করেই এগিয়ে গেছে তার শিক্ষা জীবন।

প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক, তারপর উচ্চ মাধ্যমিক এবং অবশেষে স্নাতক—প্রতিটা স্তরেই অসাধারণ সফলতা দেখিয়েছেন মানসী দাস। সম্প্রতি সৈকত সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন তিনি। তার সাফল্যে খুশি শিক্ষক ও সহপাঠী সবাই।
জানা যায়, স্কুলে যাতায়াতে প্রতিদিনই মানসীকে বাবার সাহায্য নিতে হতো। তবুও কখনো হতাশ না হয়ে পড়াশোনাকে ধরে রেখেছেন শক্ত হাতে। তার ভালো ফলাফল ও ধৈর্য তাকে পুরো এলাকার মানুষের কাছে অনুপ্রেরণার প্রতীক বানিয়েছে।
মানসীর চাচা প্রতাপ চন্দ্র দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানসী সীমাহীন কষ্ট করেছে। তার কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। মানসীর সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প প্রমাণ করে—শারীরিক সীমাবদ্ধতা নয়, মানবিক ইচ্ছাশক্তিই মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
মানসীর মা স্বপ্না দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানসীর দৃঢ়তা, অধ্যবসায় এবং নিজের ওপর অগাধ বিশ্বাসই তাকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষা নিয়ে সমাজের অবহেলিত ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন তিনি।

মানসীর বাবা শশাঙ্ক দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছোটবেলা থেকেই মানসী ছিল খুব সাহসী। শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও কখনো হাল ছাড়েনি। প্রতিদিন কত কষ্ট করে স্কুল-কলেজে গেছে—আমরা নিজের চোখে দেখেছি। আজ মেয়েটা স্নাতক হয়েছে, এর চেয়ে আনন্দ আর কিছু নেই। যদি সরকারের সহায়তায় একটা চাকরি পায়, তাহলে সে নিজেও দাঁড়াতে পারবে, আর আমাদের মতো কৃষক বাবা-মায়ের কাঁধও হালকা হবে।
মানসী দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিবন্ধকতা আমার স্বপ্নকে আটকে রাখতে পারেনি। আমি বিশ্বাস করি, সুযোগ দিলে আমরাও সমাজে সমানভাবে অবদান রাখতে পারি। এখন আমি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। নিয়মিত পড়াশোনা করছি। যদি সুযোগ হয় তাহলে আমি আমার যোগ্যতা প্রমাণ করবো। আমি বোঝা হয়ে নয়, স্বাবলম্বী হয়ে আমার কৃষক বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়াতে পারবো।
সৈকত সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ আতাউল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানসীর এই সাফল্য আমাদের জন্য গর্বের। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও সে নিজের চেষ্টা ও মেধায় স্নাতক সম্পন্ন করেছে—এটি সমাজের জন্য ইতিবাচক বার্তা। তার অর্জন অন্য প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদেরও পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত করবে বলে আমি মনে করি। আমরা তার সফলতা কামনা করছি।
হাসিব আল আমিন/এএমকে