পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার পথে বখাটেদের গণধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থী

শরীয়তপুর পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার পথে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে এক শিক্ষার্থী। এ সময় তার সঙ্গে থাকা আরেক সহপাঠীকে আটকে রেখে মারধর করে আহত করে অভিযুক্ত বখাটেরা।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জেলা শহরের বনবিভাগের কার্যালয়ের পাশে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে ওই শিক্ষার্থীকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তিনি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। মঙ্গলবার বিকালে পরীক্ষা শেষে গাড়ির অপেক্ষা করতে করতে আরেক ছেলে বন্ধুর সঙ্গে তিনি হাঁটছিলেন। এ সময় তারা বনবিভাগের সামনের সড়কে আসলে তাদের গতিরোধ করে কয়েকজন যুবক। একপর্যায়ে তাদের বনবিভাগের মধ্যে নিয়ে ওই ছেলে শিক্ষার্থীকে মারধর করে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। অন্যদিকে তিন বখাটে যুবক পালাক্রমে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে দীর্ঘ ২ ঘন্টা আটকে রাখার পর তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে সড়কে ছেড়ে দেয় অভিযুক্ত যুবকরা। এসময় স্থানীয়দের বিষয়টি খুলে বললে তারা তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, “আমাকে প্রথমে অনেক মারধর করা হয়। ওরা কমপক্ষে ১০ জন ছিলো। তাদের মধ্যে তিনজন আমার সঙ্গে খারাপ কাজ করেছে। আমি অনেক কান্নাকাটি করেছি, ওরা আমাকে ছাড়েনি। আমার সঙ্গে যেই অন্যায় হয়েছে তার বিচার চাই।”
তার সঙ্গে ওই ছেলে শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা একসঙ্গে পড়াশোনা করি। আজ (মঙ্গলবার) আমাদের শেষ পরিক্ষা ছিলো। পরীক্ষা শেষে আমরা সবাই মিলে আড্ডা দিতে দিতে বিকাল হয়ে যায়। পরে আমি আর আমার ওই বন্ধু (ভুক্তভোগী মেয়ে) কিছুক্ষণ বাসের জন্য অপেক্ষা করি। বাস না পেয়ে সামনে হাঁটা শুরু করি। পরে বনবিভাগের সামনে আসলে দুজন ছেলে আমাদের থামিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে বনবিভাগে নিয়ে যায়। আমাকে আটকে রেখে মোবাইল নিয়ে গিয়ে অনেক মারধর করে টাকা দাবি করে। আর আমার ওই বান্ধবীকে জোর করে একটি ঝোপের দিকে টেনে নিয়ে যায়। কমপক্ষে ২ ঘন্টা আমাদের আটকে রাখা হয়।”
ঘটনার পর প্রথম তাদের দেখা শাহাবুদ্দিন নামের এক স্থানীয় বলেন, “আমি বাসায় ফিরছিলাম। হঠাৎ দেখি কয়েকজন ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে বনবিভাগের দিক থেকে আসছে। এলাকাটি নির্জন হওয়ায় মেয়েটিকে প্রশ্ন করলে সে উত্তর দিতে ভয় পাচ্ছিলো। পরে তার সঙ্গে থাকা একটি ছেলে আমাকে ইশারা করলে তাদের সমস্যায় পড়ার বিষয়টি বুঝতে পারি। তখন পাশে থাকা অন্য যুবকের পরিচয় জিজ্ঞেস করা মাত্রই তারা দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। আমি তাদের ধরার চেষ্টা করলেও পারিনি। পরে মেয়েটি কান্নাকাটি করে আমাদের সব খুলে বলে।”
সৈয়দ রাব্বি নামের আরেক স্থানীয় বলেন, “আমাকে দেখে মেয়েটি পায়ে পড়ে সাহায্য চায়। আমি দ্রুত তাকে একটি দোকানে নিয়ে বসাই। পরে সে অসুস্থ হওয়ায় লোকজন নিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি ও পুলিশকে খবর দেই। ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তির দাবি জানাই।”
সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক খন্দকার রাশেদ আহম্মেদ বলেন, “মেয়েটি আমাদের কাছে জানিয়েছে তাকে শারীরিকভাবে মারধর ও যৌন নিপীড়ন করা হয়েছে। আমাদের নারী চিকিৎসক আসার পর তার পরিক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।”
এ ব্যাপারে পালং মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক হাফিজুর রহমান বলেন, “মেয়েটি অসুস্থ হওয়ায় এখন পর্যন্ত বিস্তারিত কথা বলতে পারিনি। তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চলছে। তাদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।”
নয়ন দাস/এমটিআই