নোয়াখালীতে বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই গ্রামের সন্ত্রাসীদের মধ্যে সংঘর্ষ

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার নদনা বাজারে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের তরুণ সন্ত্রাসীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।
গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এবং গতকাল মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বাজারজুড়ে চলা এই সহিংসতায় ১৫–১৬টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট হয়।
সংঘর্ষের সময় একটি মোটরসাইকেল ও একটি ভ্যানগাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতেও হামলা চালানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। পরে সেনাসদস্যরা পৌঁছালে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তবে উভয় পক্ষের মধ্যে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, নদনা বাজারের উত্তরে উত্তর শাকতলা এবং দক্ষিণে দক্ষিণ শাকতলা গ্রাম অবস্থিত। দুই গ্রামের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কিশোর-তরুণ মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত এবং বাজার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। গতকাল সন্ধ্যায় সেই উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে। প্রথমে উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং পরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় বাজারে ইটপাটকেল ছোড়া ও দোকানে হামলার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, দুই দিনের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের সাত–আটজন আহত হয়েছেন। তাদের অনেকে আগে আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন, বর্তমানে বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হলেও স্থানীয়দের দাবি—এ সংঘর্ষ রাজনৈতিক নয়; কিশোর-তরুণেরা কারও কথা শোনে না এবং আধিপত্য দেখাতেই এ ধরনের সহিংসতায় জড়াচ্ছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সংঘর্ষের সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও ‘অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে’ দেখা গেছে।
সোমবারের পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আবারও দুই পক্ষ বাজারে মুখোমুখি হলে নতুন করে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপে পুরো বাজার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় আরও কয়েকটি দোকান লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাত আটটার দিকে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। টানা দুই দিনের সংঘর্ষে বাজারের তিন শতাধিক দোকানের ব্যবসা প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা রাজু হোসেন ঢাকাপোস্টকে বলেন, “আমরা তো প্রথমে ভেবেছি ছোটখাটো ঝামেলা। কিন্তু মিনিট দশেকের মধ্যে পুরো বিষয়টা ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টাইলে ছড়িয়ে পড়ে—ধাওয়া, পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল… সব মিলিয়ে বাজারটা এক মুহূর্তে রণক্ষেত্র হয়ে যায়। এমন তাণ্ডব নোয়াখালীতে খুব কমই দেখা যায়। ভয় পেয়ে অনেকেই দোকান-ঘর ছেড়ে দৌড়াতে থাকে।”
ব্যবসায়ী মো. রফিকুল ইসলাম ঢাকাপোস্টকে বলেন, “হঠাৎ সংঘর্ষ শুরুর পর দোকানের শাটার নামানোরই সুযোগ পাইনি। কিছু তরুণ এসে ইট ছোড়ে, এরপর দোকানের সামনে ভাঙচুর চালায়। আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের পুঁজি খুব সীমিত—এক রাতের তাণ্ডবে বহু লোকের বছরের পর বছরের পরিশ্রম নষ্ট হয়ে গেছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা শামসুল আলম বলেন, “সন্ধ্যার পর বাজারে বের হওয়ার সাহস পাই না এখন। দুই গ্রামের এই ঠেলাঠেলি আর আধিপত্য দেখানোতে সাধারণ মানুষের জীবন ও ব্যবসা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি আরও আগে কঠোর হতো, এত বড় ক্ষতি আর হতো না।”
নদনা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, একদল ছেলে আছে—ওরা বাজারে আধিপত্য নিয়ে সব সময় সমস্যা করে। কারও কথা শোনে না। সামান্য বিরোধ হলেই মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। আমাদের লোকজন থামাতে গেলে উল্টো ইটের আঘাতে আহত হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।
সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন ঢাকাপোস্টকে বলেন, “ঘটনার মূল কারণ বাজারকেন্দ্রিক আধিপত্য বিস্তার; এটি রাজনৈতিক কোনো ইস্যু নয়। দুষ্কৃতকারীরা মোটরসাইকেল ও ভ্যানগাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে, একাধিক দোকান ভাঙচুর করেছে এবং ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা করেছে। পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে পুলিশ কঠোরভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।”
হাসিব আল আমিন/এমটিআই