ফুটবল খেলে মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিক সহায়তা করতেন বজলুর রহমান

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধাদের অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করতেন বরগুনার মীর বজলুর রহমান। সেই সময়ে বিভিন্ন এলাকায় ফুটবল খেলেছেন তিনি। টিমের আয়ের সব টাকা মুক্তিযোদ্ধাদের দিলেও বজলুর রহমানের এমন অবদানে মেলেনি কোনো স্বীকৃতি।
বিজয়ের ৫৪ বছর পার হয়ে গেছে। সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মীর বজলুর রহমানের নাম তালিকায় না থাকলেও দেশরক্ষা বিভাগ থেকে তাকে দেওয়া হয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র। মোহম্মদ আতাউল গনি ওসমানীর স্বাক্ষরিত ওই সনদপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সৈনিক মীর বজলুর রহমান। তিনি ৯ নম্বর সেক্টরে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তার অবদান চির উজ্জ্বল হয়ে রইবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের বিষয়ে জানতে চাইলে মীর বজলুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফুটবল খেলার সময় আমার বড় ভাইয়ের মৃত্যু হয়। এরপর আমার বাবা আমাকে বরিশাল আসমত আলী খান ইনস্টিটিউটে ভর্তি করেন। সেখানে গিয়ে পুলিশ লাইনে ফুটবল খেলা শিখেছি। পরবর্তীতে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে আমি সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও দলগতভাবে বরিশাল, হিজলা, মুলাদি, ঝালকাঠি আগৈলঝড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ফুটবল খেলেছি। আর ওই খেলা থেকে যে টাকা পেয়েছি তা স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা লিডারদের হাতে তুলে দিয়েছি। আমার তখন উঠতি বয়স, কেবল কলেজে উঠেছি, তখন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু, তার সঙ্গী মেজর হাফিজ উদ্দিনের সঙ্গে বরিশাল জেলা দলের হয়ে ফুটবল খেলে ভালো টাকা আয় করে মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়েছি।
বজলুর রহমান বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ঢাকা থেকে আমার নাম অন্তর্ভুক্ত করে তালিকা এসেছে। পরবর্তীতে জেলা মুক্তিযোদ্ধা অফিসে যোগাযোগ করলে আমাকে বলা হয়েছে, আমি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করিনি। তাই মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রাখা যাবে না। তাদের এমন সিদ্ধান্তের পর আমি আমার অবদানের স্বীকৃতি চেয়ে আর কোথাও যোগাযোগ করিনি। তবে স্বাধীনতা যুদ্ধে সহায়তা করেছেন এমন অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় নাম আসলেও আমাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তবে বর্তমান সরকার যদি আবারও উদ্যোগ নেয় এবং আমাদেরকে ডাকে তাহলে আমিসহ যাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান আছে প্রমাণসহ কাগজপত্র জমা দেব।

খোঁজ নিয়ে মীর বজলুর রহমান সম্পর্কে জানা যায়, ১৯৭১ সালে ফুটবল খেলার পাশাপাশি ১৯৭২ সালে বজলুর রহমান বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বিকম পাশ করেন। ওই সময়ে তিনি নজরুল পাঠাগার এন্ড ক্লাব এবং মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবসহ বরিশাল জেলা দলের হয়ে টানা ২০ বছর ফুটবল ও ভলিবল খেলেন। পরবর্তীকালে ফায়ার সার্ভিস, সাধারণ বীমা, শান্তিনগর স্পোর্টিং ক্লাব, ওয়ারী ক্লাব এবং বিআরটিসিসহ অনেক ক্লাবের পেশাদার ফুটবলার হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন মাঠ দাপিয়ে বেড়ান। বর্তমানে তিনি বরগুনা পৌরসভার ব্রাঞ্চ রোড নামক এলাকায় বসবাস করেন।
পরবর্তিতে খেলা থেকে অবসরে গিয়ে নিজের চরম দারিদ্র্য আর একাকীত্বের মাঝে মীর বজলুর রহমান অবৈতনিক ফুটবল কোচ হিসেবে দুঃস্থ ও বিভিন্ন বয়সী শিশু-কিশোরদের ফুটবল খেলা শেখাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার শিশু-কিশোরকে তিনি হাতে ধরে খেলা শিখিয়েছেন। যাদের মধ্যে বর্তমানে অনেকেই ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের ক্লাবে ফুটবল খেলছেন।
মীর বজলুর রহমানের বিষয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক বরগুনা জেলা ইউনিট কমান্ডার মো. ইউসুফ আলী মৃধা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন তালিকা হয়েছে। বিশেষ করে যখন যে সরকার ছিল তখন যে তালিকা হয়েছে তখন ওই সরকারের রাজনৈতিক দলের অনেকে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। যদিও তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিলো না। আমরা এ বিষয়টি নিয়ে সুরাহা করতেই এখন হিমসিম খেতে হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় সহযোগীদের তালিকাও হয়েছে। তবে যদি কেউ সে তালিকা থেকে বাদ পরেন, তাহলে আমি মনে করি তার অসহযোগিতার কারণেই তিনি বাদ পরেছেন। তবে চার থেকে পাঁচটি তালিকা হয়েছে অন্তত একটা দুইটা তালিকায়ও যদি নাম আসে তাহলে তাকে নিয়ে যাচাই-বাছাই করা সম্ভব। কিন্তু যদি একটা তালিকায়ও নাম না থাকে তাহলে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব না। এ ছাড়া, সরকারি নীতিমালা আছে সে অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয় কে কোন পার্যায়ে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন।
মো. আব্দুল আলীম/এএমকে