‘আমি বুঝতে পারিনি, পরবর্তীতে আর এমন ভিডিও করবো না’

নেত্রকোণায় কনটেন্ট তৈরি করতে গিয়ে এক মেয়ের পায়জামা ধরে টান দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়াতে তোলপাড় চলছে। ঘটনাটি ঘটেছে নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার নারায়ণডহর ইউনিয়নে।
গতকাল বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা যায়, একটি ছেলে ভ্যান গাড়ির পেছনে স্কেটিং করতে করতে যাচ্ছে এবং ভ্যানের পেছনে বসে থাকা একটি মেয়েকে উত্ত্যক্ত করছে। একপর্যায়ে মেয়েটি তার হাতে থাকা ব্যাগ দিয়ে ছেলেটির মাথায় বাড়ি দেয়। এর জেরে ছেলেটি মেয়েটির পায়জামা দরে টান দেয়।
মূলত ভিডিওটি গত ১৫ ডিসেম্বর ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আপলোড করা হয়। ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। বিভিন্ন পেজ এবং গ্রুপে ভিডিওটি শেয়ার দিয়ে ওই ছেলেটিকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন অনেকে। পাশাপাশি অনেকেই নিজেই আইন হাতে তুলে নিয়ে ওই ছেলেকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, স্কেটিং করা ছেলেটির নাম রাকিব হাসান (২০)। ভ্যান গাড়িতে থাকা মেয়েটি মূলত ছেলে, তার নাম হানিফ (২০)। ভিডিও ধারণ করেন রোমান মিয়া। হানিফ ও রোমান সম্পর্কে আপন দুই ভাই। তারা দুজন পূর্বধলা উপজেলার নারায়ণডহর গ্রামের ওয়াসিম মিয়ার ছেলে বলে জানা গেছে। তারা দুই ভাই দীর্ঘদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ফানি ভিডিও’ তৈরি করে আসছিলেন। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর অনেকেই এ ধরনের ভিডিও নির্মাণকে সমাজের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে রাকিব ও তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের বাড়িতে পাওয়া যায়নি।
ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর রাকিব নামের ওই ছেলেটি আরেকটি ভিডিও পোস্ট করেন। যেখানে তিনি ওই ভিডিওর বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, যার পায়জামা টান দিয়ে খোলা হয়েছে সে আসলে মেয়ে না, সে ছেলে। ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে কনটেন্ট তৈরি করা হয়েছে।
নিজের ভুল তুলে ধরে একটি ভিডিওতে রাকিব বলেন, আমার একটি পেইজে একটি ভিডিও রিসেন্টলি ভাইরাল হয়েছে। যে ভিডিওটি আমি মূলত বিনোদনের জন্য বানিয়েছিলাম। ভিডিওতে যে মেয়েটিকে আপনারা দেখেছেন সে আসলে ছেলে। আপনারা ভিডিওতে খেয়াল করলে দেখতে পারবেন ছেলেটা হাঁটু পর্যন্ত শার্ট প্যান্ট পরা ছিল। ভিডিওটা এভাবে আসলে করা উচিত হয়নি আমার, আমি বুঝতে পারিনি। আর ভিডিওটি আপলোড দেওয়ার সময় আমি কমেন্ট বক্সে লিখে দিয়েছিলাম, ভিডিওটি মূলত বিনোদনের জন্য এবং যে মেয়েটি দেখতে পাচ্ছেন সে আসলে ছেলে, আপনারা হয়তো বুঝতে পারেননি। আর আমারও এমন কনটেন্ট বানানো উচিত হয়নি। ভিডিওটি আমি আমার পেজ থেকে সম্পূর্ণভাবে ডিলিট করে দিয়েছি। এমন ঘটনার জন্য আমি দুঃখিত। আপনারা সবাই আমাকে ছোট ভাই হিসেবে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি পরবর্তীতে আর এমন ভিডিও করবো না।
এ বিষয়ে পূর্বধলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম জানান, ভিডিওটি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি ভিডিওটিতে একটি ছেলেকে মেয়ে হিসেবে সাজিয়ে কনটেন্ট তৈরি করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আমরা রাকিবের সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। ইতোমধ্যে সে একটি ভিডিও আপলোড করেছে, যেখানে সে নিজের ভুল স্বীকার করেছে। বলেছে ভবিষ্যতে আর এ রকম কনটেন্ট তৈরি করবে না। রাকিবের বাড়িতে আমরা পুলিশ পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু রাকিব এখন আত্মগোপনে রয়েছে। বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে, আমরা তদন্ত করছি।
চয়ন দেবনাথ মুন্না/আরএআর