গ্রামে পৌঁছেছে শহীদ শামীমের মরদেহ, স্বজনদের আহাজারি

সুদানের আবেই শহরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত ড্রোন হামলায় শাহাদাত বরণকারী সেনা সদস্য শামীম রেজার (২৮) মরদেহ তার নিজ গ্রাম কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হোগলাডাঙ্গীতে পৌঁছেছে।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর পৌনে ২টায় সামরিক বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে মরদেহটি ঢাকা থেকে কালুখালীর মিনি স্টেডিয়ামে অবতরণ করে। পরে সেখান থেকে সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে দুপুর ২টা ১০ মিনিটে মরদেহটি তার গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়। এ সময় কান্না ও আহাজারিতে পুরো এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।
শামীম রেজার মরদেহ বাড়িতে আনা হবে- এই খবর শুনে সকাল থেকেই আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু ও প্রতিবেশীরা তার বাড়িতে জড়ো হতে থাকেন। দুপুর ২টা ১০ মিনিটে মরদেহ পৌঁছালে সেখানে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। শামীমের বাবা, মা, স্ত্রী, বোন ও ভাইরা বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। শেষবারের মতো প্রিয় শামীমের মরদেহ দেখতে প্রতিবেশী ও সহপাঠীরাও সেখানে উপস্থিত হন।
এর আগে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৫ মিনিটের দিকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায় নিহত ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মরদেহ। সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শহীদদের মরদেহ গ্রহণ করেন।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় সেনা মসজিদ প্রাঙ্গণে তাদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁনসহ সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নিহত শামীম রেজা মৃগী ইউনিয়নের হোগলাডাঙ্গী গ্রামের আলমগীর ফকিরের বড় ছেলে। গত ৭ নভেম্বর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি সুদানের আবেইতে যান।
কালুখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, সুদানের আবেইতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত ড্রোন হামলায় নিহত শামীম রেজার মরদেহ তার নিজ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেছে। দ্বিতীয় জানাজা শেষে সামরিক মর্যাদায় তার মরদেহ দাফন করা হবে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শামীম রেজা স্থানীয় হোগলাডাঙ্গী কামিল মাদরাসার ছাত্র ছিলেন। সেখান থেকে তিনি দাখিল ও আলিম পাস করেন। পরে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগ দেন। সর্বশেষ তিনি বগুড়া সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। চার ভাই-বোনের মধ্যে শামীম ছিলেন সবার বড়। তার মেজ ভাই সোহেল ফকির সৌদি আরব প্রবাসী, সেজ ভাই সোহান বেকার অবস্থায় বাড়িতেই রয়েছেন এবং একমাত্র বোন মরিয়ম খাতুন হাফেজিয়া মাদরাসায় পড়াশোনা করেন। তার বাবা স্থানীয় একটি মসজিদের মোয়াজ্জেম এবং মা গৃহিণী। প্রায় দেড় বছর আগে শামীম বিয়ে করেন। প্রায় আট বছর ধরে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনের স্বপ্ন নিয়ে বাবা, মা, স্ত্রী ও ছোট ভাই-বোনদের রেখে গত ৭ নভেম্বর তিনি সুদানে যান।
উল্লেখ্য, গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই শহরে সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী শহীদ হন এবং আরও নয়জন শান্তিরক্ষী আহত হন। আহতদের মধ্যে আটজন কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে অবস্থিত আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে (লেভেল-৩ হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বর্তমানে সবাই শঙ্কামুক্ত রয়েছেন।
মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/এআরবি