ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করেন বাবা, প্রচার হয় আত্মহত্যা

রংপুরের বদরগঞ্জে পল্লিচিকিৎসক আতিকুর রহমানের (৩৭) মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। অশালীন মন্তব্যের জের ধরে তাকে পিটিয়ে হত্যা করেন তার বাবা ইউপি সদস্য ফজলুল হক ও ছোট ভাই আশরাফুল। পরে আত্মহত্যার ঘটনা সাজাতে মরদেহের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘরের ভেতর ঝুলিয়ে রাখেন তারা।
এ ঘটনায় ফজলুল হক, আশরাফুল, আশরাফুলের স্ত্রী ও ফজলুল হকের বোন আদুরী বেগমকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে পারিবারিক সালিস বৈঠকে আতিকুরকে পিটিয়ে হত্যা করার কথা জানান।
সোমবার (৯ আগস্ট) বিকেলে ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান।
এর আগে শুক্রবার (৬ আগস্ট) সকালে উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কিসামত বসন্তপুর গ্রাম থেকে আতিকুর রহমানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আতিকুর রহমানের শ্বশুর আব্দুল মতিন বাদী হয়ে ওইদিনই আসামি অজ্ঞাত উল্লেখ করে থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় আটকদের হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, রংপুর সদর উপজেলার বৈকণ্ঠপুর এলাকার আব্দুল মতিনের মেয়ে মমতাজ বেগম ফেন্সির (৩২) সঙ্গে প্রায় ১৬-১৭ বছর আগে বদরগঞ্জের আতিকুর রহমানের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। আশিকুর পেশায় পল্লিচিকিৎসক ছিলেন। সম্প্রতি বিভিন্ন কারণে তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। প্রায়ই মাদক সেবন করে এসে স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে পারিবারিকভাবে একাধিকবার সালিস বৈঠক হয়।
ঘটনার আগের দিন বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) সন্ধ্যার পর একই বিষয় নিয়ে সালিশ বৈঠকে বসেন পরিবারের লোকজন। সেই বৈঠকে আতিকুর তার বাবা ও স্ত্রীকে জড়িয়ে অশালীন মন্তব্য করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন তার ইউপি সদস্য বাবা ফজলুল হক ও ছোট ভাই আশরাফুল। একপর্যায়ে তারা আতিকুরকে বেধড়ক মারপিট শুরু করলে তিনি গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে ফজলুল হক, আশরাফুল ও তার স্ত্রী হাসমত আরা বেগম আহত আতিকুরকে মাটি থেকে তুলে ঘরের ভেতরে নিয়ে যান। সেখানে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মরদেহ ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন। পরদিন শুক্রবার প্রচার করা হয় আতিকুর রহমান তার বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে আত্মহত্যা করেছেন।
ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, শুক্রবার সকালে খবর পেয়ে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। ওই দিন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আতিকুর রহমানের বাবা ফজলুল হক, ছোট ভাই আশরাফুল, আশরাফুলের স্ত্রী ও ফজলুল হকের বোন আদুরী বেগমকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে আদুরী বেগম ও মামলার সাক্ষী ফজলুল হকের আরেক বোন রাজিয়া বেগম প্রকৃত ঘটনার কথা স্বাীকার করেন।
ওসি আরও জানান, শনিবার আটকদের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কেএম হাফিজুর রহমানের আদালতে নেওয়া হয়। সেখানে তারা হত্যাকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরে তাদেরকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর