৬ মাসেও অধরা ট্রিপল মার্ডারের দুই আসামি

চাঞ্চল্যকর আয়নাল হক দম্পতি ও তাদের একমাত্র শিশু কন্যা আশফিয়ার হত্যার ৬ মাস পার হলেও এনেও অধরা রয়েছে পলাতক দুই আসামি। এ নিয়ে মামলার বাদী ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ জুলাই ২০২০ রাতে উপজেলার ধানীসাফা গ্রামে একই পরিবারের তিনজনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে টাকা ও স্বর্ণ লুট করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পরের দিন নিহত আয়নালের শ্বশুর আবুল কালাম সর্দার অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
মামলার এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পার হলেও পুলিশ খুনের কোনো ক্লু বের করতে পারেনি। হত্যার রহস্য উদঘাটনে যৌথভাবে মাঠে নামে থানা, ডিবি, পিবিআই, সিআইডিসহ পুলিশের পাঁচটি বিভাগ। ৯ দিন পর বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) যৌথভাবে হত্যায় জড়িতদের শনাক্ত ও রহস্য উদঘাটন করে।
পিরোজপুরের পুলিশ সুপার হায়াতুল ইসলাম খাঁনের নির্দেশে থানা ও ডিবি পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে ৮ আগস্ট (২০২০) রাতে হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড অলি বিশ্বাসকে (৩৮) সাফা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। এরপর পুলিশ অলির দেয়া তথ্য অনুযায়ী সহযোগী রাকিবকে (২০) ওই রাতে ধানীসাফা গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে।
এদিকে, গ্রেপ্তারের পর আসামিরা পুলিশ ও আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তারা বলেন, মুখোশ পরে অলি বিশ্বাস, রাকিব, আলী ওরফে অলী ও তার এক সহযোগীসহ ৪ জন সিঁদ কেটে আয়নালের ঘরে প্রবেশ করে। ঘরে ঢুকে আয়নাল ও স্ত্রীকে মারধর করে নগদ টাকা, স্বর্ণসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে। এ সময় আয়নাল অটোচালক অলি ও আলীসহ তার সহযোগীদের চিনে ফেলে।
এ সময় আয়নাল অলিকে অনুনয় করে বলেন, অলি তুই মোরে মারিস না, টাহা পয়সা যা আছে লইয়া যা। এতে দস্যুরা ক্ষুব্ধ হয়। এরপর ৪ ঘাতক মিলে আয়নাল ও তার স্ত্রী খুকুকে হাত বেঁধে গলায় কাপড় পেছিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে পালিয়ে যায়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ৮ জুলাই ধানীসাফা গ্রামের রত্তন হাওলাদারের ছেলে অটোচালক আয়নাল স্থানীয় সাফা বন্দর কৃষি ব্যাংক থেকে ২০ হাজার টাকা তুলে বাড়ি ফিরছিল। এ সময় ঘাতক অলি তাকে দেখে। এছাড়া ঘাতক অলি জানতে পারে আয়নাল সম্প্রতি গরু বিক্রি করেছেন। তার স্ত্রী খুকু প্রতিবেশীর ঘরে রাখা কিছু স্বর্ণালংকার ঘরে এনে রেখেছেন। ওই টাকা ও স্বর্ণ লুট করার জন্য ৩০ জুলাই রাতে আয়নালের ঘরে ঘাতক অলি ও রাকিবসহ চারজন সিঁদ কেটে প্রবেশ করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
মামলার বাদী আবুল কালাম সর্দার জানান, তার মেয়ে, জামাই ও একমাত্র নাতনির হত্যাকারীরা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। পুলিশ খুনিদের গ্রেপ্তার করছি করছি বলেও দীর্ঘদিন পার হয়ে গেছে। কিন্তু গ্রেপ্তার করতে পারছেন না।
মঠবাড়িয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ জ ম মাসুদ্দুজামামন মিলু জানান, পলাতক দুই হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
পিরোজপুরের পুলিশ সুপার হায়াতুল ইসলাম খাঁন বলেন, ট্রিপল মার্ডরের দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করতে থানা পুলিশ ও পিরোজপুরের ডিবি পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করি খুব অল্প সময়ের মধ্যে পলাতক দু’আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারবো।
এসপি