ছোটমণি নিবাসে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করা হয় শিশু নাবিলকে

সিলেটে অসহায় শিশুদের সরকারি আশ্রয়স্থল ছোটমণি নিবাসে আড়াই মাস বয়সী এক শিশুকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ওই ভবনে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
সেই ফুটেজে দেখা যায়, কর্তব্যরত আয়া সুলতানা ফেরদৌসী সিদ্দিকা শিশুটিকে আছাড় দিয়ে ফেলে পরে বালিশচাপা দেন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) রাতে আয়াকে আটক করেছে পুলিশ।
আয়া সুলতানা ফেরদৌসী সিদ্দিকা সমাজসেবা অধিদফতরের আওতাধীন ছোটমণি নিবাসে অস্থায়ী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ এলাকায়।
নিহত শিশুর নাম নাবিল। জন্মের কয়েক দিন পরই তাকে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা থেকে ছোটমণি নিবাসে আনা হয়। পরে এখানে তার নাম রাখা হয় নাবিল।
ঘটনার তিন দিন পর গত ২৬ জুলাই সমাজসেবা অদিফতরের ছোটমণি নিবাসের উপতত্ত্বাবধায়ক (অ. দা.) রুপন দেব ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছিলেন, ২২ জুলাই রাতে অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল শিশু নাবিল। তাদের দেখাশুনার দায়িত্বে ছিলেন আয়া সুলতানা। সকালে ঘুম থেকে উঠে শিশু নাবিলকে দুধ খাওয়াতে চাইলে নড়াচড়া না পাওয়ায় বিষয়টি আমাদের জানান। তাৎক্ষণিক তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তের পর নাবিলের মরদেহ দাফন করা হয়। এ ঘটনায় ২৪ জুলাই কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা (নম্বর-৪৫) দায়ের করা হয়। এরপর বিষয়টি আড়ালেই থেকে যায়।
এদিকে ঘটনার সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এমন বক্তব্য দিলেও পুলিশের চোখে শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি খটকা লাগে। বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) রাতে সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কোতোয়ালি থানা পরিদর্শনে আসেন উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ। এ সময় শিশু নাবিলের অপমৃত্যুর মামলা তার নজরে আসে।
বিষয়টি তার কাছে সন্দেহজনক মনে হওয়ায় রাত ১১টায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আবু ফরহাদ এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মাহবুবসহ পুলিশ ফোর্স নিয়ে বাগানবাড়ির ছোটমণি নিবাসে ছুটে যান পুলিশ কর্মকর্তা আজবাহার আলী শেখ। সেখানে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে শিশু নাবিলকে হত্যার প্রমাণ পান তিনি। পরে তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত আয়া সুলতানাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আবু ফরহাদ শুক্রবার বিকেলে বলেন, অপমৃত্যুর মামলা তদন্ত করতে গিয়ে বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হয়েছে, আয়া সুলতানা শিশু নাবিলকে প্রথমে আছাড় মারে। পরে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বৃহস্পতিবার রাতে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। তদন্তে অন্যান্যদের সংশ্লিষ্টতা পেলে তাদের বিরুদ্ধেও মামলা হবে।
এ ঘটনায় সমাজসেবা অধিদফতর সিলেটের উপপরিচালক নিবাস রঞ্জন দাসের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্ঠা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। এ ছাড়া ছোটমণি নিবাসের উপতত্ত্বাবধায়ক (অ: দা:) রুপন দেবের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্ঠা করলে তাকেও পাওয়া যায়নি।
তুহিন আহমদ/এসপি