আফসানাকে আর শিক্ষকদের বকা শুনতে হবে না

ক্লাসে দেরি করে আসার কারণে আফসানা খাতুনকে আর শিক্ষকদের বকা শুনতে হবে না। বিদ্যালয় থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে তার বাড়ি হওয়ায় স্কুলে আসতে প্রায়ই দেরি হতো তার। সহপাঠীরা বাইসাইকেলে মাদরাসায় আসলেও তার নিজের সাইকেল ছিলে না। দরিদ্র হওয়ায় তার বাবার পক্ষে সাইকেল কেনাও সম্ভব হয়নি।
প্রতিদিন বাড়ি থেকে হেঁটে স্ট্যান্ডে এসে তারপর ভ্যানে করে আসতে হতো। আজ তার কষ্ট লাঘব হলো। করোনা সংক্রমণ কমে এলে স্কুল খুলে দিলে এবার সে বাই-সাইকেলে করে স্কুলে আসবে। আফসানা খাতুন বানিয়াবহু-কাওড়া কাদেরিয়া আলিম সিনিয়র মাদরাসার নবম শ্রেণির ছাত্রী।
মঙ্গলবার আফসানা নতুন চকচকে একটি বাইসাইকেল পেয়েছে। তাও আবার বিনামেূল্যে। শুধু আফসানা নয় বিকেলে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরে রাজা সীতারাম রায়ের কাছারি বাড়ি প্রাঙ্গণে উপজেলার আটটি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্কুলের ২০০ কিশোরী শিক্ষার্থীর মধ্যে মুজিব শতবর্ষে এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের আওতায় মেধাবী ছাত্রীদের মাঝে বাইসাইকেল বিতরণ করা হয়।
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা প্রশাসন সাইকেল বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
মেয়েরা বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে গেলে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে। তাদের বিচরণক্ষেত্র অনেক বড় হয়। জানা বোঝার পরিধিও বেড়ে যায়। এটাই নারীর ক্ষমতায়নের প্রথম ধাপ। এখন বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাওয়ার মধ্যে মেয়েদের লজ্জা বা ভয়ের কিছু নেই।বাইসাইকেল বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাগুরা জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহম্মদপুর উপজেলার চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবু আব্দুল্লাহেল কাফি। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) মো. কামরুজ্জামান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামানন্দ পাল ও শিকদার মিজানুর রহমান প্রমুখ।
বাইসাইকেল পেয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নুসরাত ও শামীমা খাতুন জানায়, স্কুল থেকে দুই কিলোমিটার দূরে অ্যাড়েন্দা গ্রামে তাদের বাড়ি। সেখান থেকে প্রতিদিন হেঁটে স্কুলে যাওয়া-আসা করতে হয়। রাস্তায় ভ্যান চলাচল করলেও প্রতিদিন ভাড়া দেওয়া দিনমজুর বাবার পক্ষে সম্ভব হয় না। এ কারণে বেশির ভাগ দিন হেঁটেই স্কুলে যাওয়া-আসা করতে হয়। এতে প্রতিদিন অন্তত দুই ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়। এ বাইসাইকেল পেয়ে সেই কষ্ট দূর হলো।
আয়োজকেরা জানান, নারী শিক্ষা এগিয়ে নেওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এলজিএসপি প্রকল্পের টাকা থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০টি বাইসাইকেল কিনে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির মেয়েদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
এমএএস