যুবককে হত্যার পর সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিয়েছেন বন্ধুরা

শেরপুরে আবু সাঈদ (৩০) নামে এক যুবককে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বন্ধুদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে শেরপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নিহত আবু সাঈদের ছোট বোন তানজিলা আক্তার এ অভিযোগ করেন।
নিহত আবু সাঈদ শেরপুর সদর উপজেলার গাজীরখামার ইউনিয়নের শালচূড়া গ্রামের মো. নূর হোসেনের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তানজিলা আক্তার বলেন, আমার বড় ভাই সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তিনি এবার বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। পাশাপাশি আমার ভাই জেলা শহরের অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নবারুণ পাবলিক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। আমি এবং আমার মা স্বপ্ন দেখতাম আমার ভাইয়ের একদিন বড় পদে সরকারি চাকরি হবে। তখন আমাদের সব দুঃখ কষ্টের অবসান হবে। কিন্তু একটি ঘটনা আমাদের সব কেড়ে নিল।
তিনি আরও বলেন, শেরপুর সদর উপজেলার গাজীরখামার ইউনিয়নের শালচূড়া গ্রামের প্রতিবেশী মৃত কুদর আলীর মেয়ে শারমিন সুলতানা ডেইজীর (২৫) সঙ্গে আমার ভাইয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি শারমিনের আত্মীয়-স্বজনরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। এরপর তারা বিভিন্ন সময় আমার ভাই আবু সাঈদকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ জুন রাতে আমার ভাইকে আতিক মিয়া (৩০), জাকির (২৮), তরিকুল ইসলাম (৩০), ডা. সোয়েব (২৭), প্রেমিকা শারমিন সুলতানা ডেইজী (২৫), মোছা. জুলি (৩২), মো. আলিম মিয়াসহ (৪০) কয়েকজন কৌশলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত করে হত্যা করে।
পরে ওই হত্যাকাণ্ডকে তারা সুকৌশলে সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়। যেদিন ভাইয়ার আহত হওয়ার মিথ্যা ঘটনা তারা সাজায় সেদিন তারা জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি না করে তাকে অনেক বিলম্ব করে ময়মনসিংহ মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ভাইয়াকে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করলে তার বন্ধুরা ভাইয়ার মরদেহ বিনা ময়নাতদন্তে দাফনের জন্য তাড়াহুড়ো করে। তখন তারা আমাদের বলে- ময়নাতদন্ত করে কী লাভ? যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। ময়নাতদন্ত করলে লাখ খানেক টাকা খরচ হবে। এছাড়াও তাদের একেক জনের কথা ছিল একেক রকম। কেউ বলেছে অটোরিকশায়, কেউ বলেছে ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সাঈদ মারা গেছে। ঠিক তখনই আমাদের সন্দেহ হয়।
এরপর আমি বাদী হয়ে গত ২৭ জুন বিজ্ঞ সিআর আমলি আদালতে ওই চিহ্নিত হত্যকারীদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করি। পরে আদালতের নির্দেশে শেরপুর সদর থানায় ২২ আগস্ট ৭ জনকে চিহ্নিত এবং আরও ৪/৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে একটি হত্যা মামলা রুজু হয়।
তানজিলা আক্তার বলেন, মামলা দায়েরের পর থেকেই আসামিরা আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। এছাড়া আসামিরা এখনো প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে। আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলনে আসা নিহত আবু সাঈদের মা, ছোট ভাই ও দুই বোন উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে শেরপুর সদর থানার ওসি (তদন্ত) বন্দে আলী মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিহতের পরিবার এমনিতেই বিলম্বে মামলা করেছে। তবুও সেটা আদালতে। পরবর্তীতে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে নিয়মিত মামলা রুজু করার আদেশ দিলে আমরা তা করি। বর্তমানে মামলাটি এফআইআর হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি জানান, আদালতের নির্দেশে মরদেহ আগামীকাল ১ সেপ্টেম্বর কবর থেকে উঠানো হবে। তারপর ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে পেলে আমরা ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করতে পারব।
জাহিদুল খান সৌরভ/আরএআর