নরসিংদীতে দরগাকান্দি-বথুয়াদীর ৩ কিমি সড়ক যেন মরণফাঁদ

প্রায় এক যুগেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি নরসিংদী সদরের মহিষাশুড়া ইউনিয়নের দরগাকান্দি-বথুয়াদীর প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কে। লরি, ইটভর্তি ট্রাক, টাক্টর ইত্যাদি যানবাহনের অবাধ যাতায়াত চারাঞ্চলসহ প্রায় ১৫টিরও বেশি গ্রামের একমাত্র এই রাস্তাকে পরিণত করেছে মরণফাঁদে। প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। এমনকি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণও দিয়েছেন কেউ কেউ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্বাচন সামনে রেখে জনপ্রতিনিধিরা বারবার ইতিবাচক আশ্বাস দিলেও নির্বাচনের পর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে এই রাস্তার বেশির ভাগ অংশ পানিতে তলীয়ে গেলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর।
এলাকাসী সূত্রে জানা যায়, নরসিংদী সদরসহ হাটবাজার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যেতে হলে একমাত্র ভরসা এই রাস্তা। বতুয়াদি, কাজিরগা, কালী ভৈরবপুর, চেংগাতলী, ছগুরহাটি, আলীপুরা দিলালপুর, নজরপুরসহ প্রায় ১০ থেকে ১৫টি গ্রামের মানুষ এই রাস্তা দিয়ে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করে। ফলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যাসহ দুর্ঘটনায় পড়ছেন এখানকার মানুষেরা। তা ছাড়া ব্যবসায়িক কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে এই রাস্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক কাউন্সিলর বলেন, স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে কিছুদিন পরপর মাপজোক করা হয়। তারপর আবার কোনো খোঁজ থাকে না। এমন করে বিভিন্ন সময় মাপজোক করে গেলেও এখনো সংস্কারের কাজ শুরু হয়নি।
ষাটোর্ধ্ব আব্বাস মিয়া নামে স্থানীয় এক এলাকাবাসী জানান, কিছুদিন পরপর এখানে দুর্ঘটনা ঘটে। কিছুদিন আগেও অটোরিকশা উল্টে মারা যায় একজন। তা ছাড়া এক ঘণ্টার রাস্তা যেতে সময় লাগে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। উঁচুনিচু হওয়ায় বয়স্ক লোকেরা অটো কিংবা সিএনজি অটোতে উঠতেই চায় না।
এই রাস্তার রেগুলার অটোচালক বাদশা মিয়া জানান, এই রাস্তার সমস্যা দীর্ঘদিনের। নির্বাচন এলে মেম্বার-চেয়ারম্যানরা বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচনের পর তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। এই পর্যন্ত অটো ড্রাইভার মারা গেছেন দুজন। অনেক যাত্রীকে বরণ করতে হয়েছে পঙ্গুত্ব। আমরা অনেকেই কিস্তিতে ও বিপুল পরিমাণ সুদে টাকা নিয়ে রিকশা বা অটো কিনি। রাস্তার সমস্যার কারণে আমরা ঠিকমতো ভাড়াও পাচ্ছি না।
আবদুল হালিম খন্দকার নামের আরেকজনের অভিযোগ, রাস্তার এমন দুরবস্থার কারণে এই এলাকায় কেউ বিয়ে করতেও আগ্রহী হয় না। ইমার্জেন্সি রোগী হাসপাতালে আনা-নেওয়ায় সমস্যা দেখা দেয়।
এ বিষয়ে মহিশাশুড়া ইউপি চেয়ারম্যান ডা. এনামুল হক শাহীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই রাস্তার বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে বারবার জানানোর পরও কী কারণে কাজ হচ্ছে না, তা আমার জানা নেই। তবে নরসিংদী-১ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম হীরুকে আমরা বিষয়টি অবগত করার পর তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। অচিরেই এই রাস্তার মেরামত ও অসম্পূর্ণ কাজসহ পুরোপুরি কাজ করা হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু জাকির সিকান্দার জানান, প্রায় তিন কিলোমিটার এ সড়কটির এক কিলোমিটার ইতিমধ্যে টেন্ডার হয়ে গেছে। বাকি প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কের দ্রুত এস্টিমেট করে স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরে পাঠানো হবে।
রাকিবুল ইসলাম/এনএ