গ্রাহকের বিমাদাবি পরিশোধে সম্পদ বিক্রি করবে সানলাইফ

Mahfuzul Islam

২৯ মার্চ ২০২৩, ০৩:২৮ পিএম


গ্রাহকের বিমাদাবি পরিশোধে সম্পদ বিক্রি করবে সানলাইফ

মেয়াদ পূর্তি হয়েছে তিন বছর। কিন্তু এখনও বিমার টাকার জন্য ঘুরছেন জামালপুরের হালিমা বেগম। কষ্টে উপার্জিত নিম্ন আয়ের এ নারীর বিমার অর্থের পরিমাণ মাত্র ১২ হাজার টাকা। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে প্রথমে এজেন্ট, তারপর শাখা অফিসের কর্মকর্তা এবং সর্বশেষ প্রধান অফিসের কর্মকর্তাদের পেছনে ঘুরতে ঘুরতে তার খরচ হয়েছে আরও চার হাজার টাকা। এখনও বিমার টাকা বুঝে পাননি তিনি।

হালিমা বেগমের মতো তিন বছর ধরে ১০ বছর মেয়াদি বিমা করে কোম্পানি ও কর্মকর্তাদের পেছনে ঘুরছেন রেহানা বেগম। তিনিও বিমার টাকা পাননি। কবে পাবেন, তারও কোনো আশ্বাস মেলেনি।

হালিমা ও রেহানার মতো জামালপুরে হতদরিদ্র ২৫ জন, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের ২০৩ জন এবং ময়মনসিংহের ৩৪০ জনসহ সারাদেশের হাজার হাজার গ্রাহকের বিমাদাবির অর্থ পরিশোধ করেনি সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।

গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা পোস্টে ‘বিমার টাকা দিচ্ছে না সানলাইফ, চেয়ারম্যান-এমডির বিরুদ্ধে পরোয়ানা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে কর্তৃপক্ষ।

এখন সানলাইফ বলছে, নগদ টাকার অভাবে গ্রাহকদের বিমার অর্থ পরিশোধ করা যাচ্ছে না। গ্রাহকদের টাকা পরিশোধে প্রতিষ্ঠানটির খুলনায় অবস্থিত কেডিএ এভিনিউ’র ৫৬নং প্লটটি বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সানলাইফ পর্ষদ। ৫ দশমিক ৪৮ কাঠার বাণিজ্যিক প্লটটি বিক্রির পাশাপাশি বনানীর বিটিএ টাওয়ারের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার সাত হাজার ৫২৭ দশমিক ৬৯ বর্গফুটের দুটি ফ্লোরও বিক্রি করা হবে।

পর্ষদ সভার এমন সিদ্ধান্তের আলোকে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে সম্প্রতি মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্বাক্ষরিত একটি আবেদন বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) বরাবর পাঠানো হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি যাচাই করছে। তারা অনুমোদন দিলে জমি ও ফ্ল্যাট বিক্রি করে গ্রাহকদের বিমাদাবির অর্থ পরিশোধ করা হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আবেদনে বলা হয়েছে, ডিসেম্বর ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির মোট অনিষ্পন্ন বিমাদাবির পরিমাণ ৪১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। জমি বিক্রির টাকায় গ্রাহকের বিমাদাবি পরিশোধ করা হবে। অনিষ্পন্ন বিমাদাবির মধ্যে মৃত্যু, মেয়াদোত্তীর্ণ এবং অন্যান্য বিমাদাবি রয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে সানলাইফ’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক রুবিনা হামিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, দ্রুত গ্রাহকদের বিমাদাবির অর্থ পরিশোধ করতে কাজ করছি। এ বিষয়ে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আইডিআরএ চেয়ারম্যান জয়নুল বারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে শত শত গ্রাহকের বিমাদাবির অর্থ পরিশোধ না করার অভিযোগ আছে। কর্তৃপক্ষ যাতে দ্রুত গ্রাহকদের দাবি পরিশোধ করে সেজন্য প্রথমে সিইওকে ডেকেছি। তারপর চেয়ারম্যানসসহ বোর্ডকে ডেকেছি। তারা গ্রাহকদের বিমাদাবির অর্থ পরিশোধের বিষয়ে পরিকল্পনা জানিয়েছেন। জমি বিক্রির জন্য আবেদন করছেন। এসব সম্পদ বিক্রিতে পর্ষদ কিংবা কোম্পানির ব্যক্তিদের কোনো স্বার্থ আছে কি না, তা দেখা হচ্ছে।

‘সাধারণত কোম্পানি যখন কোনো জমি কেনে, তখন বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে কেনে। আবার যখন বিক্রি করে, বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি করে। এখানে যদি সেই সংশ্লিষ্টতা না পাওয়া যায় তবে অনুমোদন দিতে আপত্তি নেই।’

প্রতিষ্ঠানটির ২০২২ সালের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে এর লাইফ ফান্ডের পরিমাণ ৯০ কোটি ৪৭ লাখ ৪৪ হাজার ১৩১ টাকা। এতে গ্রাহকদের বিনিয়োগযোগ্য তহবিলের বিনিয়োগ থেকে আয় দুই কোটি ৮৯ লাখ ৪৪ হাজার ১৪১ টাকা।

জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ সমাপ্ত বছরে প্রতিষ্ঠানটির মোট সম্পদের বিনিয়োগ ১২৩ কোটি ৫৯ লাখ ৯১ হাজার ৪১৫ টাকা। এর মধ্যে সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ রয়েছে ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ব্যাংকের আমানত রয়েছে ৩২ কোটি ১১ লাখ ৯৪ হাজার ৮২১ টাকা। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ রয়েছে ৫৫ কোটি ৩৮ লাখ ৫৭ হাজার ৬৩৪ টাকা এবং জমি ও বিল্ডিংয়ে বিনিয়োগ রয়েছে ৩১ কোটি ৩৪ লাখ ৩৮ হাজার ৯৬০ টাকা।

২০১৩ সালে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালে শেয়ারহোল্ডারদের সর্বশেষ ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। ২০২১ সালে তারা কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। বর্তমানে প্রতি মোট শেয়ারের সংখ্যা তিন কোটি ৫৭ লাখ ৬০ হাজার ৬৯০টি।

বিমার টাকা না দেওয়ায় সানলাইফের চেয়ারম্যান ও এমডির বিরুদ্ধে গত বছর পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগীরা। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

এমআই/এমএআর/ 

 

Link copied