বাজেটের পর আরেক দফা বাড়ল নিত্যপণ্যের দাম

Dhaka Post Desk

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

০৭ জুন ২০২১, ০৯:৪০ এএম


বাজেটের পর আরেক দফা বাড়ল নিত্যপণ্যের দাম

মুদির দোকান

মহামারি করোনায় আয় কমেছে সাধারণ মানুষের। সবারই প্রত্যাশা ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবের পর অতিপ্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমবে। অস্বস্তিতে থাকা মানুষের মধ্যে একটু স্বস্তি ফিরবে। হলো ঠিক উল্টোটা।

গত বৃহস্পতিবার (৩ জুন) জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট উত্থাপন করেন। বাজেটে চাল, ডাল, তেলের ওপর নতুন করে কর আরোপ করেননি। কিন্তু বাজারে চাল-ডাল, আটা-ময়দা, পেঁয়াজ-রসুন এবং ডিমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে।

আজ সোমবার (৭ জুন) রাজধানীতে চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি দুই টাকা থেকে ৪ টাকা। আটা-ময়দার দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি দুই টাকা। পেঁয়াজ-রসুনের দাম বেড়েছে ৫-১০ টাকা কেজি। একইভাবে বেড়েছে গরুর মাংস, মাছ এবং মুরগির ডিমের দাম। 

Dhaka Post
রামপুরা বাজার মাছের বাজার

অন্যদিকে বাজেট ঘোষণার পর মুড়ি, সাবান, ব্রয়লার মুরগি, সিলিন্ডার গ্যাস ইত্যাদি পণ্যের দাম কমার কথা থাকলেও কোনো পণ্যের দাম কমেনি বলে জানিয়েন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এগুলো আগের কেনা। ফলে আগের দামেই বিক্রি করছি। নতুন দামে যখন  কিনব তখন নতুন দামে বিক্রি করব।

রাজধানীর মালিবাগ, শান্তিনগর এবং সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ভালো মানের নাজির শাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা থেকে ৬২ টাকা কেজিতে। বাজেটের আগে এই চাল বিক্রি হয়েছে ৫৮-৬০ টাকা কেজিতে। ভালো মানের মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৪-৬৫ টাকা কেজিতে। এই চালটিও বাজেটের আগে বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজিতে। একইভাবে ২৮ ও ২৯ ধানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকা কেজিতে। এই চাল ৫০-৫২ টাকা কেজি বিক্রি হতো। এছাড়াও ৪৬-৪৭ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া মোটা পাইজম চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা কেজিতে।

মধ্যবাড্ডার পাইকারি ব্যবসায়ী রকিক মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বস্তাপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। তবে কিছু কিছু বস্তায় ৭০-৮০ টাকাও বেড়েছে। 

Dhaka Post

তিনি বলেন, চালের দাম এবার খুব বেশি কমবে মনে হয় না, বরং আরও বাড়বে। আমদানি হচ্ছে না। পাশাপাশি পরিবহন খরচ আগের চেয়ে বেশি হওয়ায় এখন চালের দাম বেশি।

মালিবাগের খুচরা ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই সপ্তাহে মিনিকেট, নাজির এবং পাইজম চালের দাম বেড়েছে। 

কী কারণে বাড়লো জানতে চাইলে বলেন, মিল মালিকরা বলতে পারবে। আমরা ২৬শ টাকার বস্তা এখন ২৭শ টাকা দিয়ে আনছি। এই কারণে বিক্রি করছি বেশি দামে। 

Dhaka Post

চালের পাশাপাশি বেড়েছে আটা ও ময়দার দামও। বাজেট ঘোষণার নতুন করে কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা বেড়েছে। ফলে ৩২ কেজির খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৩৪ টাকা কেজিতে। প্যাকেট আটার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৭ টাকা, কোথাও কোথায় ৩৮ টাকা কেজি দরে। ৪০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া প্যাকেট ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকা থেকে ৪৬ টাকা কেজি দরে। খোলা সয়াবিন তেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩৮ টাকা থেকে ১৪০ টাকায়। পামওয়েল তেল বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা কেজিতে। আর লিটারপ্রতি বোতলের তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫২-১৫৩ টাকায়, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তেলের দাম।

পেঁয়াজের দাম আরেক দফা বেড়েছে। রাজধানীর বাজারে ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। এক সপ্তাহে আগে যা ছিল ৫৫-৬০ টাকা কেজি। পেঁয়াজের সঙ্গে কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়েছে রসুনের দাম। বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজিতে।

ডালের মধ্যে ভালো মানের মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকা কেজিতে। ১০৫ থেকে ১১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে মধ্যম মানের মসুর ডাল। আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা কেজিতে। 

এদিকে বৃষ্টির কারণে বেশির ভাগ সবজির দাম বেড়েছে। ফলে ৫৫-৬০ টাকার নিচে কোনো সবজির দেখা মিলছে না। গত সপ্তাহে ৪৪-৫০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া টমেটো, বেগুন, করলা, পটল, চিচিঙ্গা, ঝিঙা এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা কেজি দরে। একইভাবে কাঁচা পেঁপে ৫০ টাকা, গাজর (চায়না) ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, কচুর লতি ৬৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছের মধ্যে কেজি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৪শ থেকে ১৬শ টাকা দরে। ৮শ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১২শ টাকা কেজিতে। বড় চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৯শ টাকা কেজিতে। গলদা চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭শ থেকে ৮শ টাকা কেজিতে।

এছাড়াও প্রতিকেজি রুই মাছ ৩৩০-৩৬০ টাকা, কাতল ৩০০-৩৩০ টাকা, পাঙাশ ১৯০-২২০ টাকা, পাবদা ৫৫০-৬০০ টাকা, ছোট তেলাপিয়া ১৪০-১৫০ টাকা এবং বড় তেলাপিয়া ১৯০-২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

গরুর মাংস ৫৮০-৬০০ টাকা, খাসি ৮০০-১০০০ টাকা, ব্রয়লার ১৩০-১৩৫ টাকা, লেয়ার ২২০-২৩০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাংসের পাশাপাশি মুরগির ডিম হালিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩২-৩৫ টাকায়। আর ডজন বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকা থেকে ১১০ টাকায়।

মালিবাগ বাজারে আব্দুর রহিম নামের এক মুদির দোকানদার সবজি ও মাছ কিনতে এসে বেকায়দায় পড়েন। ৪০ টাকা কেজির সবজি, পটল-বেগুন কিনলেন ৬০ টাকায়। তিনি বলেন, কোনো জিনিসের দাম কমছে না। সব কিছুর দাম বাড়ছে। এভাবে কতদিন চলা যায়, সরকারের উচিৎ এসব পণ্যের দাম কমানো।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাজেটে তো নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হয়নি। বরং কৃষিপণ্য এবং খাদ্যপণ্যের বিষয়ে ছাড় দেওয়া হয়েছে। তারপরও কেন এসব পণ্যের দাম বাড়ছে তা সরকারের বাজার মনিটরিং টিমের খতিয়ে দেখা উচিৎ। মহামারির দুঃসময়ে সাধারণ মানুষের পাশে থাকা উচিৎ বলে জানান তিনি।

এমআই/এইচকে

Link copied