কানাডা হাইকমিশনের হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার পুরস্কার পেলেন দুই নারী

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে শ্রমিক নেতা কল্পনা আক্তার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা সম্প্রদায়ের অধিকার নিয়ে কাজ করা রানী ইয়ান ইয়ানকে হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার পুরস্কার দিয়েছে ঢাকায় কানাডিয়ান হাইকমিশন।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) ঢাকায় নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিং তাদের হাতে এ সম্মাননা তুলে দেন।
হাইকমিশনার অজিত সিং বলেন, মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার মধ্য দিয়ে আমরা আরও ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমৃদ্ধশালী সমাজ গঠন করতে পারি। যারা মানবাধিকারের জন্য নিরলস ও সাহসীভাবে কাজ করে, তাদের কাজকে স্বীকৃতি দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
কানাডিয়ান হাইকমিশন জানায়, কল্পনা আক্তার এবং রানী ইয়ান ইয়ানের গল্পগুলো সমাজে ন্যায়, অন্তর্ভুক্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য তাদের শক্তি, স্থিতিস্থাপকতা এবং আজীবন প্রতিশ্রুতিকে প্রতিফলিত করে।
কল্পনা আক্তার দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে গার্মেন্টস শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা ও উন্নয়নে কাজ করছেন। ১২ বছর বয়সে পরিবারকে সাহায্য করার জন্য স্কুল ছেড়ে তিনি ঢাকার গার্মেন্টস শিল্পে প্রবেশ করেন। যা শুরুতে কেবল জীবিকা নির্বাহের জন্য হলেও পরে এটি তার জীবনের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির (বিসিডাব্লিউএস) প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কারস ফেডারেশনের (বিজিআইডাব্লিউএফ) নির্বাচিত সভাপতি। তার নেতৃত্বে শ্রমিকদের কণ্ঠস্বর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে এবং তিনি রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর শ্রম সংস্কারের প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৬ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর ‘অ্যালিসন ডেস ফোর্জেস অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সট্রা অর্থিনারি অ্যাক্টিভিজম’ অর্জন করেছেন।
রানী ইয়ান ইয়ান চাকমা সম্প্রদায়ের উপদেষ্টা এবং আদিবাসী ও নারীর অধিকার রক্ষায় সক্রিয়। তিনি স্থানীয় সম্প্রদায়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয় ও নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেন।
তার উদ্যোগে আদিবাসী নারীদের জন্য প্রথাগত প্রশাসনিক সংস্থায় প্রথমবারের মতো নারী নিয়োগ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাদের কণ্ঠস্বর সম্প্রসারিত হয়েছে। তিনি যুবক কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও অধিকার সংরক্ষকের নেতৃত্ব প্রদানে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
তার সাহসী কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতিতে তিনি ২০২৩ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ‘গ্লোবাল অ্যান্টি-রেসিজম চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড’ এবং ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অব পিসের ‘উমেন বিল্ডিং পিস অ্যাওয়ার্ড’ এর জন্য মনোনীত হন।
কানাডিয়ান হাইকমিশন এই পুরস্কারের মাধ্যমে কল্পনা আক্তার ও রানী ইয়ান ইয়ানের মানবাধিকার রক্ষায় অসাধারণ অবদান, সাহসিকতা এবং প্রতিশ্রুতিকে স্বীকৃতি জানিয়েছে এবং তাদের উদাহরণে সমাজে মানবাধিকারের সংস্কৃতি বিস্তার করার আহ্বান জানিয়েছে।
এনআই/এসএম