নিউজ শেয়ার করায় ১০ শিক্ষককে শোকজ করল মাউশি

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করায় গত বৃহস্পতিবার ১০ শিক্ষককে শোকজ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। তাদেরকে সশরীরে অধিদফতরে এসে কারণ ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে।
এরপর ৪ মার্চ ও ৮ মার্চ এ ১০ শিক্ষক কারণ দর্শাতে শিক্ষা ভবনে এসে তাদের ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন। তবে যে অপরাধে এসব শিক্ষকদের অভিযুক্ত করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে, ঘটনাটি সম্পূর্ণই ভিন্ন।
এ বিষয়ে ওই ১০ শিক্ষকের মধ্যে একজন মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘আমি কর্তৃপক্ষকে লিখিত জবাব দিয়েছি। এ বিষয়ে তারা আমাকে যে প্রশ্ন করেছেন, তার উত্তরও দিয়েছি। আমিও জানতে চেয়েছিলাম যে আমাকে কেনো শোকজ করা হলো? এর উত্তরে কর্তৃপক্ষ আমাকে জানিয়েছেন, আপনি অনলাইন পত্রিকার দুটি খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন। এটাই শোকজ করার কারণ।’
তিনি আরও বলেন, যদিও পরিচালকের কক্ষে আমাদেরকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু পরিচালক মো. বেলাল হোসাইন ব্যস্ত থাকায় সহকারী পরিচালক (২) দূর্গা রানী শিকদারের কক্ষে উপপরিচালকসহ আরও কিছু শিক্ষা কর্মকর্তার উপস্থিতিতে আমাদের প্রশ্ন করা হয়।
আমি উত্তরে বলেছি, এ বিষয়ে সরকারি কোনো নীতিমালা বা বিধিমালা নেই। আমি তাদেরকে এটাও বলেছি যে যদি আমার কোনো সিনিয়র সহকর্মীও বলতেন যে এটা করা যাবে না, তবে আমি ফেসবুকে লিংক শেয়ার করতাম না।
শেয়ার করার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মন্তব্য ছিল। এ কারণে আমি এটি শেয়ার করেছি।
জানা যায়, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষক পদে ৭ হাজার ২৭৮ জনের খসড়া তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। শিক্ষকদের অভিযোগ, এরমধ্যে নিয়োগ বিধিমালা ও আইন অনুযায়ী সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষক রয়েছেন। আরও প্রায় দেড় হাজার শিক্ষক আছেন, যাদের বিএড জটিলতা আছে। অথচ যাদের পদোন্নতির জন্য যোগ্যতা রয়েছে তাদের ১০ জনকেই শোকজ করা হয়েছে।
এ ১০ শিক্ষকের কোনো শাস্তি হবে কি-না জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (মাধ্যমিক) মো. বেলাল হোসাইন বলেন, এ ১০ শিক্ষকের বিরুদ্ধে আমরা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। যদি কোনো শাস্তি দেওয়া হয়, তবে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার অধিদফতরের মাউশি ওয়েবসাইটে ১০ জন শিক্ষকের নোটিশের বিষয়টি প্রকাশ করা হয়। নোটিশে শিক্ষকদের সশরীরে উপস্থিত হয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতির খসড়া গ্রেডেশন তালিকা প্রকাশের পর গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর শেয়ার করা এবং ফেসবুকে নেতিবাচক মন্তব্য করায় এ নোটিশ দেওয়া হয় বলে জানানো হয়।
যে ১০ শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে তারা হলেন- খুলনার কেডিএ খানজাহান আলী সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (বাংলা) ওমর ফারুক, ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার খায়রুল্লাহ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান, বরিশালের শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) মো. আকতারুজ্জামান, বরগুনা জেলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক (বাংলা) হারুন অর রশিদ, সিরাজগঞ্জের বিএল গভ. হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক (গণিত) মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে সম্রাট সাইফুল, চাঁদপুর গভর্নমেন্ট টেকনিক্যাল হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক (বাংলা) মোহাম্মদ তৈয়ব আলী, পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার সরকারি কে জি ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (গণিত) আমিনুর রহমান, হবিগঞ্জের চুনারঘাট উপজেলার রাজার বাজার সরকারি হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক মো. আবু ইসহাক চৌধুরী, ঢাকার শেখ জামাল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (গণিত) ইলিয়াছ আহম্মেদ এবং নীলফামারী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. রেজওয়ানুল কবির।
এনএম/এমএইচএস