বিনামূল্যের বই খোলাবাজারে, সন্দেহের তীর শিক্ষা অফিসারদের দিকে

বিনামূল্যের সব পাঠ্যবই স্কুলে-স্কুলে পৌঁছানোর আগেই বাজার ও লাইব্রেরিতে পাওয়া যাচ্ছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বই খোলাবাজারে বিক্রি ও মজুতকারী চক্রের দুই সদস্যকে আটক করেছে। সেই সঙ্গে তাদের কাছে রক্ষিত দুই ট্রাক বই জব্দ করা হয়েছে।
এর আগে চলতি সপ্তাহে বাংলা বাজারে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেখানে ৫ হাজার বই জব্দ করা হয়। এখন প্রশ্ন উঠেছে— খোলা বাজারে বই যায় কীভাবে?
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তুক বোর্ড (এনসিটিবি) ও মুদ্রণকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বইগুলো মূলত দুই উপায়ে খোলা বাজারে যায়। এর মধ্যে প্রথমটি হলো উপজেলা শিক্ষা অফিস, দ্বিতীয়টি হলো প্রেস থেকে। তবে এর আগে যতগুলো ঘটনা প্রমাণ মিলেছে বেশিরভাগ ছিল উপজেলা শিক্ষা অফিসের। শিক্ষা অফিস মূলত বেশি বইয়ের চাহিদা পাঠায়। বই বিতরণের পর অতিরিক্ত বইগুলো খোলা বাজারের চক্রের কাছে বিক্রি করে। এ ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে ছোট ছোট প্রেসগুলো অতিরিক্ত বই ছাপিয়ে খোলা বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি করে।
আরও পড়ুন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা যেমন- সাভার উপজেলা, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও পার্বত্য তিন জেলার বিভিন্ন উপজেলার শিক্ষা অফিসাররা এই কাজ করেন। তবে বড় বড় প্রিন্টার্স প্রতিষ্ঠানের কোনো সম্পৃক্ততার পায়নি। এসব বইয়ের চাহিদা হলো মূলত কিন্ডার গার্টেনগুলোতে। এসব প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যের বই পায় না, পেলেও সরকারি-বেসরকারি স্কুলে দেওয়ার পর তাদের দেওয়া হয়। বছরের শুরুতেই বই না পাওয়ায় তাদের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটছে। এজন্য স্কুল ও অভিভাবকরা বিনামূল্যের পাঠ্যবই খোলা বাজার থেকে কিনতে চায়। সেই সুযোগে এই চক্রটি বই খোলা বাজারে বিক্রি করে।
মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাউছার উজ জামান রুবেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে মুদ্রণকারীরা কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়। কারণ, প্রেস মালিকদের বই ছাপিয়ে বিক্রি করতে হবে। সুতরাং বই ছাপাতে খরচ হচ্ছে, আমরা কেন অল্প লাভের জন্য দুই চার হাজার বই খোলা বাজারে বিক্রি করতে যাব? আর এ পর্যন্ত যত বই ধরা পড়েছে বিভিন্ন প্রেসের অল্প অল্প বই। যদি প্রেস মালিকরা খোলা বাজারে বিক্রি করতো তাহলে একই প্রেসের লটে লটে বই পাওয়া যেত।
তার ধারণা, অতীতে খোলা বাজারে যেসব বই পাওয়া গেছে বেশিরভাগ বই বিভিন্ন উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে এসেছে।
জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, খোলা বাজারে বই বিক্রি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। যারা এসব কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করতে কাজ করছে এনসিটিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব বই কীভাবে খোলা বাজারের যাচ্ছে তা তদন্ত করা হচ্ছে। এক শ্রেণির প্রিন্টার্স প্রতিষ্ঠান ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার মিলে এই বইগুলো বাজারে বিক্রি করছে।
বাংলাবাজার ও শেরপুর থেকে বিনামূল্যের বই উদ্ধার
এদিকে বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) ভোরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শেরপুর উপজেলার ধাতিয়াপাড়া এলাকা থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে বিতরণের প্রায় ১০ হাজার বই জব্দ করেছে পুলিশ। মাধ্যমিকের ৮ম, ৯ম ও ১০ম শ্রেণির ৯ হাজার বই ছিল।
এর আগে ২০ জানুয়ারি রাজধানীর বাংলা বাজারে অভিযান চালিয়ে পাঁচ হাজার বই জব্দ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে দুটি প্রিন্টার্স প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে সতর্ক করা হয়। ওইদিন অভিযানে বাংলাবাজার বই মার্কেটের ২টি দোকান ও ১টি গোডাউনে সরকারি বই পাওয়া যায়।
এনএম/এমজে