চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে রিয়াজুল হাসানের তোড়জোড়

আসছে ২৮ জানুয়ারি, নিয়মিত চাকরির মেয়াদ শেষ করে অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাচ্ছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের হাত ধরে বোর্ডে আসা এ কর্মকর্তা পাঁচ বছর ধরে আছেন এ দপ্তরে। কাজ করেছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সময়ও। তবে, তার সাবেক এক চেয়ারম্যান ও এক সদস্যের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে হয়েছিলেন ওএসডি।
অভিযোগ রয়েছে, সেই ওএসডির ঘটনাকে পুঁজি করে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন— এমন দাবি করে ‘আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী’ শিক্ষক ৫ আগস্টের পর ভাগিয়ে নেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান পদ। এখন তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিতে তোড়জোড় শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসানের দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ফাইল ইতোমধ্যে চালাচালি শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে, তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকেরা তৎপরতা শুরু করেছেন।
জানা গেছে, গত ৩১ আগস্ট চেয়ারম্যান পদে আসীন হওয়ার পর আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তাদের আগলে রাখা, সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের ভাইকে প্রায় দেড় কোটি বই ছাপানোর সুযোগ করে দেওয়া এবং আওয়ামীপন্থি ছাপাখানার মালিকদের বই ছাপানোর কাজ দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া নিজের পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ছাপানোর কাজ তদারকি করাতে গিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে টেন্ডার কার্যক্রমে বিলম্ব করা, ফলে ৮০ ভাগ শিক্ষার্থীর হাতে এখনও পাঠ্যবই পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে সমালোচনার মুখে শিক্ষা উপদেষ্টা সরাসরি তার নাম উচ্চারণ না করলেও ‘বই ছাপাতে এবার নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে’ বলে অভিযোগ করেছেন।
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের হাত ধরে ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ এনসিটিবিতে সদস্য (প্রাথমিক) পদ পান। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সময়ে এ পদে চাকরি করেন সাড়ে চার বছর। ২০২৩ সালে এপ্রিল মাসে ওএসডি হন তৎকালীন চেয়ারম্যান ও সদস্য (কারিকুলাম) মশিউজ্জামানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে। সেই ওএসডির ঘটনাকে পুঁজি করে চেয়ারম্যান পদ বাগিয়ে নেন ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান। এখন আবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে জোর তদবির শুরু করেছেন তিনি
আওয়ামীপন্থি হয়েও যেভাবে ভাগিয়ে নেন চেয়ারম্যান পদ
এনসিটিবি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এনসিটিবির চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজার চাচা। ভাতিজার লবিংয়ে চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও দুই বছরের চুক্তিতে নিয়োগ পান ফরহাদুল ইসলাম। তিনি পদত্যাগ করলে ৩১ আগস্ট ওএসডিতে থাকা রিয়াজুল হাসানকে এনসিটিবির চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। তিনি বিগত সরকারের সময়ে ‘বৈষম্যের শিকার’ হয়েছেন— এমন দাবি করে এ পদ ভাগিয়ে নেন। এ নিয়ে তখন শিক্ষা প্রশাসনে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
একাধিক সূত্রমতে, অধ্যাপক রিয়াজুল হাসান আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী কর্মকর্তা। তিনি শেরপুর সরকারি কলেজ ও ঢাকার মিরপুর বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ এবং এনসিটিবির সদস্য হিসেবে ১০ বছরের বেশি সময় শিক্ষা প্রশাসনে লোভনীয় পদে চাকরি করেছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাম ছাত্ররাজনীতি করা রিয়াজুল হাসান এনসিটিবিতে সদস্য (প্রাথমিক) পদ পান সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের হাত ধরে ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ। পরে আরেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সময়ে এ পদে চাকরি করেছেন সাড়ে চার বছর। ২০২৩ সালে এপ্রিল মাসে ওএসডি হন তৎকালীন চেয়ারম্যান ও সদস্য (কারিকুলাম) মশিউজ্জামানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে। সেই ওএসডির ঘটনাকে পুঁজি করে চেয়ারম্যান পদ বাগিয়ে নেন তিনি। এখন আবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে জোর তদবির শুরু করেছেন।
শিক্ষা ক্যাডারের বিএনপিপন্থি শিক্ষকেরা বলছেন, তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হলে সেটি হবে বর্তমান সরকারের স্পিরিটের (চেতনা) সঙ্গে বেইমানি। ৫ আগস্টের পর তিনি হয়তো লবিং করে চেয়ারম্যানের পদ বাগিয়েছেন। এখন তাকে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হলে শিক্ষা ক্যাডারে অসন্তোষ তৈরি হবে
যদিও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে ‘কোনো চেষ্টা করছেন না’ বলে ঢাকা পোস্টের কাছে দাবি করেছেন রিয়াজুল হাসান। বলেন, ‘আমি গবেষক ও শিক্ষক মানুষ। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি ঠিক করে রেখেছি। অবসরে যাওয়ার পর সেখানে পড়াব। চাকরির মেয়াদ বাড়ানো বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নেওয়ার কোনো চেষ্টা আমি করছি না।’
আরও পড়ুন
কে এই রিয়াজুল হাসান
এনসিটিবিতে আওয়ামী শাসনামলের সুবিধাভোগীদের একজন রিয়াজুল হাসান। তার ডাক নাম সম্রাট। তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুর মামাতো ভাই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় তিনি বামপন্থি ছাত্রসংগঠন করতেন। পরে হয়ে যান খাস আওয়ামী লীগ। আওয়ামী অনুসারী পরিচয়ে শেরপুর সরকারি কলেজ ও মিরপুর বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষও হন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক এমপি ও হুইপ আতিউর রহমান আতিকের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন রিয়াজুল হাসান। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত মতিয়া চৌধুরীর সঙ্গে রাজনৈতিক বৈরী সম্পর্ক ছিল আতিকের। সেই কারণে রিয়াজুল হাসানকে শেরপুর থেকে অন্যত্র বদলির জন্য তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে সুপারিশ করেন মতিয়া চৌধুরী। পরে বাম রাজনীতি করা— এমন পরিচয় দিয়ে ২০১৮ সালে ২৫ মার্চ প্রাইজ পোস্টিং নিয়ে এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক) হয়ে আসেন তিনি। পরে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া দীপু মনির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ান রিয়াজুল হাসান। তারা একসঙ্গে একাধিকবার বিদেশ ভ্রমণেও যান। একপর্যায়ে এনসিটিবির সাবেক চেয়ারম্যান ফরহাদ ও সদস্য (শিক্ষাক্রম) মশিউরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন তিনি। তারা লবিং করে ২০২৩ সালে ২৭ এপ্রিল রিয়াজুল হাসানকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করান।
এনসিটিবিতে এখনও বহাল আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তারা
৫ আগস্টের পর প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে থেকে আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়া হলেও ব্যতিক্রম এনসিটিবি। সাবেক ছাত্রলীগনেত্রী ও দীপু মনির ক্যাশিয়ার খ্যাত সচিব নাজমা আক্তারকে সরানো হলেও তার জায়গায় বসানো হয় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ভাগনে ফিরোজ আল ফেরদৌসকে। জানা যায়, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং তার পিএস শাহগীর আলমের সঙ্গেও তার ছিল গভীর সখ্য। তিনি শিক্ষা ক্যাডারের শাহেদুল খবির, রতন কুমার মজুমদার ও নিজামুল করিম সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে পরিচিত। ২০২১ সালে এনসিটিবি সচিব হওয়ার আবেদনে ১৩ জন আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীর সুপারিশ আনা ফেরদৌস এখন নিজেকে বৈষম্যবিরোধী প্রমাণে মরিয়া।
এ ছাড়া চেয়ারম্যানের সুপারিশে এখনও বহাল আছেন সাবেক ছাত্রলীগনেতা ও সংস্থাটির উপসচিব (কমন) সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি সর্বশেষ আওয়ামীপন্থি বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সমিতির কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার বদলির জন্য মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল তোলা হলে সেটি তদবির করে আটকে দেন চেয়ারম্যান। অন্যদিকে, চেয়ারম্যানের সুপারিশে এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) হিসেবে পদায়ন পান ড. রিয়াদ চৌধুরী। নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির আত্মীয় রিয়াজ চৌধুরী লম্বা সময় মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রকাশনা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন।
আরও পড়ুন
পাঠ্যবইয়ে ব্যাপক ভুলে বিতর্কিত চেয়ারম্যান
২০২৫ সালের পাঠ্যবই ছাপানো হয়েছে ২০১২ সালের পরিমার্জিত কারিকুলামে। কয়েক দফা পরিমার্জন করার পরও এবার বইয়ে ব্যাপক ভুল ধরা পড়েছে। নতুন বছরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ে গল্প-কবিতা, সংকলন এবং ছবি ও গ্রাফিতির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নানা বিষয়বস্তু। সেখানে নানা ভুল ও অসংগতি ধরা পড়েছে। বিশেষ করে শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যুর তারিখ ভুল লেখা এবং নবম শ্রেণির একটি বইয়ের গ্রাফিতিতে আদিবাসী শব্দ ব্যবহার সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সম্প্রতি আদিবাসী ইস্যুতে এনসিটিবির সামনে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় বিতর্কের মুখে পড়েছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) পতিত কর্তৃত্ববাদী সরকারের পুনর্বাসনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে কি না, সেটি ভেবে দেখতে হবে।’
“নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি বাদ দিয়ে নিজেকে পতিত কর্তৃত্ববাদের দোসর ও পুনর্বাসনকেন্দ্র হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন এনসিটিবি চেয়ারম্যান। এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এনসিটিবি প্রমাণ করতে চেয়েছে যে, বাংলাদেশে গত ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদের পতন হলেও এ সংস্থায় কর্তৃত্ববাদের চর্চার পরিবর্তন হয়নি। বরং যৌক্তিক প্রশ্ন উঠেছে যে, এনসিটিবি কি বাস্তবে পতিত কর্তৃত্ববাদের অ্যাজেন্ডা বহাল রাখার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে?”
বছরের প্রথম দিন বই না পাওয়ার নেপথ্যে চেয়ারম্যানের ‘ষড়যন্ত্র’
জানুয়ারি মাসের ১৮ তারিখ পার হয়েছে। এখনও ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দিতে পারেনি সরকার। এজন্য সরকারের বিভিন্ন মহল নানা ষড়যন্ত্রের কথা বললেও বাস্তবে মিলেছে এনসিটিবির চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড। শিক্ষার্থীরা যাতে বছরের শুরুতে বই না পায় সেজন্য প্রথমে কোনো কারণ ছাড়াই বইয়ের দরপত্র বাতিল করানো হয়। এতে সরকারের অতিরিক্ত ৭৮৩ কোটি টাকার বেশি অর্থ গচ্চা যায়।
আরও পড়ুন
এনসিটিবির একাধিক সূত্র বলছে, কোনো কারণ ছাড়াই ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বইয়ের টেন্ডার বাতিল করা হয়। যে টেন্ডার আগস্ট মাসে শেষ হওয়া কথা সেই টেন্ডারের প্রক্রিয়া জানুয়ারি পর্যন্ত টেনে নেন চেয়ারম্যান। মাধ্যমিকের দরপত্র ওপেন ও (নোট অব অ্যাওয়ার্ড) নোয়া দেওয়ার মাঝখানে এক থেকে দেড় মাস সময় নষ্ট করেন কোনো কারণ ছাড়াই। যেমন– ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বইয়ের টেন্ডার দেওয়া হয় ২ অক্টোবর। টেন্ডার ওপেন হয় ২০ অক্টোবর। এর এক মাস পাঁচ দিন পর ২৫ নভেম্বর মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে নোয়া দেওয়া হয়। এক সপ্তাহে যে কাজের চুক্তিপত্র সম্পন্ন হয়, সেই চুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে এক মাস পর। মাঝে তিনি নিজের পছন্দের তদারকি সংস্থা (ইন্সপেকশন এজেন্সি) নিয়োগ দিতে গিয়ে এক মাস সময় নষ্ট করান।
এরপর প্রথম চুক্তি হয় ২৩ ডিসেম্বর। নতুন বছর শুরুর সাত দিন আগে চুক্তি করে এক সপ্তাহের মধ্যে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির অর্ধেক বই ছাপানোর চাপ দিতে থাকেন চেয়ারম্যান। অথচ পিপিআর অনুযায়ী, চুক্তির পর মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ৪০ দিন সময় পাওয়ার কথা। কিন্তু সেই সময় না দিয়ে বৈষম্যবিরোধী কিছু ছাত্রকে দিয়ে ছাপাখানার মালিকদের চাপ দিতে থাকেন।
অন্যদিকে, কাগজের কারখানাগুলোতে কাগজ সরবরাহ করার ক্ষেত্রে নানা ধরনের শর্ত জুড়ে দেন চেয়ারম্যান। এভাবে তিনি কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বই ছাপা বিলম্বিত করেন। সংশ্লিষ্টদের মতে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতেই এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ড করেন তিনি। তিনি সরকারকে বোঝাতে চেয়েছেন যে, তাকে নিয়োগ না দিলে এবার পাঠ্যবই নিয়ে ঝামেলা তৈরি হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সর্বশেষ অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপাতে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যাদেশ (নোটিশ অব অ্যাওয়ার্ড বা নোয়া) দেওয়া হয় ১৯ ডিসেম্বর। কার্যাদেশ দিতে সবচেয়ে বেশি দেরি করা হয় নবম শ্রেণির বইয়ের ক্ষেত্রে। যে বইয়ের টেন্ডার প্রক্রিয়া জুন-জুলাই মাসে শেষ করার কথা, সেটি করা হয় ডিসেম্বরের শেষে।
আরও পড়ুন
দরপত্র চুক্তি অনুযায়ী, টেন্ডার আহ্বান করে নোয়া পাওয়ার ২৮ দিনের মধ্যে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে কাজের চুক্তি করতে হয়। সেই হিসেবে তারা ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত চুক্তি করতে পারে। এরপর বই ছাপার জন্য নিয়মিত ৪০ দিন সময় অর্থাৎ ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জরিমানা ছাড়াই বই সরবরাহ করার কথা। আর জরিমানাসহ আরও ২৮ দিন ধরলে মার্চের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় পাওয়া যাবে। এমন শর্ত প্রযোজ্য হলেও মুদ্রণকারীদের দ্রুত বই দেওয়ার চাপ দেন চেয়ারম্যান। শুধু চাপই নয়, আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই ছাপিয়ে মাঠে সরবরাহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘চাপ নয়, শিক্ষার্থীদের বইয়ের মতো জাতীয় ইস্যুতে সবার কমিটমেন্ট (দায়বদ্ধতা) থাকা উচিত। সেই জায়গা থেকে প্রিন্টার্সদের বলেছি, জানুয়ারির মধ্যেই যেন সব বই দেওয়া হয়। এখানে চাপের কোনো বিষয় নেই।’
এনএম/এসএসএইচ