রংপুর বিভাগে বাড়ছে অটোরিকশার দৌরাত্ম্য, কাড়ছে প্রাণ

এক দশক আগেও যানজট-কোলাহলমুক্ত নিরাপদ বিভাগের নাম ছিল রংপুর। কিন্তু সময়ের সঙ্গে যান্ত্রিক প্রযুক্তি সংযোজিত ‘দ্রুতগতির তিন চাকার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা’ যেন কেড়ে নিয়েছে সেই সুনাম। শুধু বিভাগীয় নগরী রংপুরই নয় বরং গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম ও পঞ্চগড়সহ বিভাগের অন্য জেলা শহরের চিত্রটাও বদলে গেছে নিয়ন্ত্রণহীন অটোরিকশার দাপটে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি, এমনকি মহাসড়কেও রয়েছে দৌরাত্ম্য।
এতে করে ব্যাটারিচালিত ঝুঁকিপূর্ণ এসব অটো ও চার্জাররিকশার কারণে সড়কে বেড়েছে দুর্ঘটনা। সঙ্গে বেড়েছে মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব। গত কয়েক বছরে রংপুরে আঞ্চলিক সড়ক ও মহাসড়কে ব্যাপক হারে ব্যাটারিচালিত অটো ও চার্জাররিকশার দাপট বেড়েছে। পাশাপাশি বিভাগীয় ও জেলা শহরে অদক্ষ চালকের কারণে যত্রতত্র বেড়েছে ব্যাপক যানজট। যা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। বেড়েছে বিদ্যুতের ওপর চাপ। এসব যানবাহন ঘিরে চুরি, ছিনতাই, খুনসহ সংঘটিত হচ্ছে নানা অপরাধ। শান্তির শহরগুলোতে এখন যেন অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব বাহন।
সড়ক থেকে অলিগলি, ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কে
ঢাকা থেকে সড়ক পথে রংপুর বিভাগের প্রবেশদ্বার গাইবান্ধা জেলা। এই জেলা শহরে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলিয়ে ব্যাটারিচালিত অন্তত ৩০ হাজার অটোরিকশা (ইজিবাইক) চলাচল করছে। এর মধ্যে অনিবন্ধিত অর্ধেকেরও বেশি। আর চার্জার রিকশার সংখ্যা যেন হিসাব ছাড়া। এমনটাই জানিয়েছে গাইবান্ধা পৌরসভার লাইসেন্স শাখাসহ বিভিন্ন সূত্র। উপজেলাগুলোতেও সহজলভ্য বাহন হিসেবে পরিচিত দ্রুতগতির এসব অটো, ভ্যান ও চার্জাররিকশা।

এদিকে কুড়িগ্রাম জেলায় ৪০ হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (ইজিবাইক), ভ্যান, মিশুক ও চার্জাররিকশা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই রেজিস্ট্রেশনবিহীন। চালকেরও নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। তারপরও বেপরোয়া দ্রুতগতিতে চলছে অলিগলি থেকে সড়ক-মহাসড়কে। এসব যানবাহনের লাগাম টানতে নেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ। এ কারণে সড়কে নেই শৃঙ্খলা। যত্রতত্র পার্কিং আর যানজট নিত্যদিন বাড়াচ্ছে ভোগান্তি। প্রতিদিন ঘটছে ছোট-বড় নানা দুর্ঘটনাও।
জেলায় ব্যাটারিচালিত এসব বাহনের সংখ্যা ৪০ হাজার ৫০০টি। এর মধ্যে ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় প্রায় ৯ হাজার, নাগেশ্বরীতে ৭ হাজার, কুড়িগ্রাম সদরে ৮ হাজার, উলিপুরে ৮ হাজার, রাজারহাটে ৪ হাজার, চিলমারীতে ২ হাজার, রৌমারীতে ২ হাজার এবং রাজিবপুর উপজেলায় প্রায় ৫০০টি ব্যাটারিচালিত বাহন রয়েছে।
কুড়িগ্রামে প্রতিদিন ১৩টি শো-রুমে নতুন করে গড়ে অন্তত অর্ধশত ব্যাটারিচালিত বাহন বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া জেলার বাইরের শো-রুম থেকেও ক্রয় করে আনা হচ্ছে নিত্যনতুন অটোরিকশা।
সারা দেশের মতো উত্তরাঞ্চলের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়েও লাগাম ছাড়া বেড়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। পঞ্চগড় পৌরসভার তথ্যমতে, পৌর এলাকায় বর্তমানে নিবন্ধিত অটোরিকশার সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। তবে প্রতিদিন শহরের বাইরে থেকে আরও দুই হাজার ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার প্রবেশ করে ২০টাকা ফি দিয়ে। এ ছাড়াও জেলার অনিবন্ধিত অটোরিকশার সংখ্যা ৫ হাজারের অধিক। এসব যানবাহনের কারণে প্রতিদিন শহরে তীব্র যানজট দেখা দিচ্ছে।
অন্যদিকে ঠাকুরগাঁও পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন শহরে প্রায় ১০ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। এর মধ্যে পৌরসভা থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজারের মতো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে সড়কে চলাচল করার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর বাহিরে ৭ হাজার অটোরিকশা অবৈধভাবে চলাচল করে শহর এলাকায় যানজট সৃষ্টি করছে।
দুর্ঘটনা ও হতাহতের চিত্র
গত এক বছরে গাইবান্ধায় অটোরিকশার কারণে ছোট-বড় মিলিয়ে শতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় শিশুসহ প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৫ জন। আর পঙ্গুত্ববরণ করেছেন প্রায় ২০ জন। এছাড়াও এক বছরে অটোরিকশা (ইজিবাইক) ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৩০টি। এসব ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিন চালক।
কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, কুড়িগ্রামে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত এক বছরে ৩০টি সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসব দুর্ঘটনার বেশির ভাগ অটোরিকশার কারণে সংঘটিত হয়েছে।
আরও পড়ুন
পঞ্চগড় বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত জেলায় ২৭টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ২৮ জন, আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ দুর্ঘটনার বেশির ভাগই ঘটেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার কারণে।
বিভাগের অন্য জেলার মতো ঠাকুরগাঁওয়ে প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। তবে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা কারণে কি পরিমাণ দুর্ঘটনা ঘটেছে, কতজন এর শিকার তার কোনো সঠিক তথ্য জানা নেই পৌরসভা ও পুলিশের কাছে।
যা বলছেন চালক ও যাত্রীরা
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ায় দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। এসব যানবাহনের বেপরোয়া চলাচল ও সড়কে যত্রতত্র পার্কিংয়ের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ট্রাফিক আইন অমান্য করে যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানামা ও প্রশিক্ষণ ছাড়াই নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গাড়ি চালানোর কারণে প্রায় ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। আর এসব দুর্ঘটনায় কখনো প্রাণহানি নয়তো শারীরিক ক্ষতির হচ্ছে যাত্রীসহ সাধারণ পথচারীদের।
গত মে মাসে গাইবান্ধা-নাকাইহাট সড়কের হাওয়া দিঘির মোড় এলাকায় দ্রুতগতির একটি অটোরিকশার (ইজিবাইক) ধাক্কায় কাসেম মিয়া নামে এক পথচারী গুরুতর আহত হন। প্রথমে তাকে সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
নিহত পথচারীর বড় ছেলে শাহজামাল মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বাবা ছিলেন আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সেদিন তিনি বাজার করে ইজিবাইক থেকে নেমে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ দ্রুত গতিতে ছুটে আসা আরেকটি ইজিবাইক বাবাকে সজোরে ধাক্কা দেয়। পরে রংপুর মেডিকেলে তিনি মারা যান। এই ইজিবাইক আমাদের জীবনটা শেষ করে দিয়েছে। সরকারের উচিত বেপরোয়া গতির ঝুঁকিপূর্ণ এসব ইজিবাইক বন্ধ করে দেওয়া।

ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের সরকারপাড়ার বাসিন্দা রুবেল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অদক্ষ চালকরা শহরজুড়ে অবৈধ ইজিবাইক নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। শহরে যে পরিমাণ অটো ও চার্জাররিকশা বেড়েছে তা হিসাব ছাড়া এদের মধ্যে অধিকাংশ চালকের বয়স কম, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা নেই। এমনকি বেশির ভাগ চালকেরও ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। তারা আইন-কানুন মানেন না। যাত্রী হাত তুললেই যেখানে-সেখানে ব্রেক দিচ্ছে, যাত্রী ওঠানামা করছে। এসব তো পুরোপুরি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। কিন্তু প্রশাসন এসব দেখেও না দেখার ভান করে।
পথচারী আকলিমা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেখানে-সেখানে অটোরিকশাগুলো পার্কিং করা হচ্ছে। এতে করে শহরজুড়ে যানজট বাড়ছে। শান্তিপ্রিয় ঠাকুরগাঁও শহর এখন যানজটের শহরে পরিণত হয়েছে। এসব অবৈধ অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ভূমিকা নেই বললেই চলে। আমরা চাই সবকিছু একটা সুন্দর ও পরিকল্পিত সিস্টেমের মধ্যে আসুক।
অটোচালক রবি, সুজন, সোহেল ও মানিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঠাকুরগাঁও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সড়কে অটোরিকশা চলাচলের জন্য লাইসেন্স দিয়েছে। আমাদের দাবি- পৌর কর্তৃপক্ষ আমাদের একটা স্ট্যান্ড করে দিক। তাহলে আমরা রাস্তায় না দাঁড়িয়ে নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডে দাঁড়াব।

পঞ্চগড় শহরে প্রতিদিন অটোরিকশা নিয়ে দাপিয়ে বেড়ান চালক আব্দুর রহিম। তার সাথে কথা হলে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে ভ্যান চালিয়ে সংসার চালানো কঠিন ছিল। এখন অটোরিকশা চালিয়ে দিনে ৭০০-৮০০ টাকা আয় করতে পারি। তবে দুর্ঘটনার ঝুঁকি সবসময় থাকে।
অন্যদিকে যাত্রী নাজমা বেগম বলেন, ভাড়া কম বলে অটোতে যাতায়াত সহজ। কিন্তু চালকদের বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর কারণে সবসময় দুর্ঘটনার ভয় থাকে।
অটোরিকশার লাগাম টানতে ব্যর্থ প্রশাসন
সুশীল সমাজের প্রতিনিধি টিএম মনোয়ার হোসেন বলেন, পঞ্চগড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে অবশ্যই অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। নিবন্ধনহীন যানবাহন বন্ধ না করলে দুর্ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা আরও বাড়বে। কিন্তু অটোরিকশার লাগাম টানতে ট্রাফিক পুলিশ ও পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্টরা পুরোপুরি ব্যর্থ। আমরা চাই নিরাপদ সড়ক, যান চলাচলে সচেতনতা এবং সড়কে শৃঙ্খলা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও এখন সচেতনতার অভাবে সাথে ঘন ঘন দুর্ঘটনার কারণে অনিরাপদ হয়ে উঠেছে সড়কগুলো।
গাইবান্ধা ট্রাফিক বিভাগের ইনচার্জ আলতাফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শহরে যানজট সৃষ্টির জন্য বেশিরভাগ দায়ী এই ইজিবাইক। একদিকে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে ছোটখাটো দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আমরা ইজিবাইকের কারণে যানজট নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, যে সড়কে ধারণক্ষমতা ৩ হাজার, সেখানে যদি ৫ হাজার যানবাহন চলে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই যানজট লেগে থাকবে। লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালক, ইজিবাইকের সহজলভ্যতা এবং কোনো নির্ধারিত দপ্তরের কার্যকর তদারকি না থাকায় এর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
ঠাকুরগাঁও শহরে অটোরিকশার নিয়ন্ত্রণে পৌরসভাকে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে মনে করছে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। এই শহরে যাত্রী ছাউনি ও অটোরিকশা স্ট্যান্ড তৈরি করা গেলে যানজট সহনীয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঠাকুরগাঁও ট্রাফিক পুলিশের শহর ও যানবাহন বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক হাসান আসকরী।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সবসময় চেষ্টা করি শহরকে যানজটমুক্ত রাখতে। পৌরসভা সড়কে চলাচল করার জন্য অটোরিকশার ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে। তারপর অসংখ্য অবৈধ অটোরিকশা চলাচল করছে। আমরা চাই পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এসব অটোরিকশার জন্য যাত্রী ছাউনি ও স্ট্যান্ড করে দিক। তাহলে যানজটমুক্ত করা সম্ভব।
অটোরিকশার কারণে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক বিদ্যুৎ সরবরাহ
এসব অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ করতে গিয়ে বিদ্যুতের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করা হয়, যা বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনাকে আরও জটিল করে তুলছে।
গাইবান্ধা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (নেসকো-২) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আসিফ বলেন, প্রতিটি ইজিবাইক একবার পূর্ণ চার্জ দিতে ১০ থেকে ১২ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। ব্যাটারি ভেদে এটি কিছুটা কম-বেশি হতে পারে। জেলায় যদি ৩০ হাজার ইজিবাইক থাকে, সে হিসেবে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয়। যদিও ইজিবাইকের জন্য সরকার ইউনিট প্রতি ৭ টাকা ট্যারিফ নির্ধারণ করে দিয়েছে, তবুও বিদ্যুতের ওপর চাপ তৈরি করে এই ইজিবাইক।
কুড়িগ্রামে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে অটোরিকশার চার্জে ব্যবহৃত বিদ্যুৎকে দুষছেন সংশ্লিষ্টরা। নেসকো সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম পৌর শহরে পিক আওয়ারে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ১৪ মেগাওয়াট। অথচ সরবরাহ আছে ১০ থেকে ১১ মেগাওয়াট। এই শহরে বিভিন্ন গ্যারেজ ও বাড়িতে অটোরিকশা চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
এই জেলার চিলমারী, উলিপুর, নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ি, ভূরুঙ্গামারী, রাজারহাট ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের চাহিদা ১০৮ মেগাওয়াট, এখন সরবরাহ ৮০ থেকে ৮৫ মেগাওয়াট। ঘাটতি ও চাহিদার সমন্বয়ে কখনো কখনো হচ্ছে লম্বা লোডশেডিং।

ঠাকুরগাঁও পৌর এলাকার অটোরিকশার গ্যারেজ মালিকরা জানান, রিকশার ব্যাটারি চার্জ করতে তারা ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা নেন। এছাড়াও ব্যাটারিচালিত রিকশার চালককে দৈনিক ৩০০ টাকা দিতে হয় মালিককে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই (নেসকো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অটোরিকশার কারণে বিদ্যুতের ওপর অনেকটা প্রভাব পড়েছে। দিন-রাতের চাহিদা অনুযারী বিদ্যুৎ সাপ্লাই দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এখন চারপাশে অটোরিকশা চার্জ দেওয়ার গ্যারেজ দেখা যায়। একটা অটোরিকশা প্রায় ১২-১৩ ঘণ্টা চার্জ দিতে হয়। আবার সময় মতো বিদ্যুৎ বিল পাওয়া যায় না। বিদ্যুৎ বিল না পেয়ে আমাদের লাইনম্যানরা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে ঝামেলার সৃষ্টি হয়।
লাগাম টানার দায়সারা আশ্বাস দিয়ে নীরব কর্তৃপক্ষ
ব্যাটারিচালিত এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হলেও তেমন কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় কমেনি জনভোগান্তি। বরং যত দিন যাচ্ছে ততই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়সারা আশ্বাসে সচেতন মহলসহ যাত্রী সাধারণের মনে বাড়ছে বিরক্তি। যদিও নিয়মিত অভিযান ও জরিমানা আদায়সহ নানান রকম সচেতনতামূলক কার্যক্রম করার কথা বলছে ট্রাফিক বিভাগ।
ঠাকুরগাঁও পৌরসভার প্রশাসক সরদার মোস্তফা শাহিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, যানজট নিরসনের জন্য আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। সেই সাথে অনুমোদন দেওয়া অটোরিকশার জন্য আমরা স্ট্যান্ড করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আর যেসব অটোরিকশার অনুমোদন নেই সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পঞ্চগড় পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুর রহমান বলেন, নিবন্ধিত অটোর বাইরের যানগুলোই মূল সমস্যা তৈরি করছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা কাজ করছি।
গাইবান্ধা পৌরসভার লাইসেন্স পরিদর্শক আবদুল আহাদ মিয়া জানান, গাইবান্ধা পৌরসভা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিষয়টি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। আমরা জানি যে, এই অটোরিকশাগুলো একদিকে যেমন স্বল্প আয়ের মানুষের জীবিকার উৎস, তেমনি অন্যদিকে এটি শহরের জন্য এক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনিবন্ধিত গাড়িগুলো নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। আমরা বারবার চালকদের সচেতন করার চেষ্টা করছি, নির্দিষ্ট রুটে চলাচলের জন্য উৎসাহিত করছি, কিন্তু জনবল ও আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা পুরোপুরি সফল হতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, এই সমস্যার সমাধান রাতারাতি সম্ভব নয়। আমাদের একটি সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার। ট্রাফিক পুলিশ, বিআরটিএ এবং পৌরসভাসহ সবার একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
বিভাগের লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলায়ও অটো ও চার্জার রিকশার একই চিত্র বলে জানা গেছে।
এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন রিপন আকন্দ (গাইবান্ধা), রেদওয়ান মিলন (ঠাকুরগাঁও), নুর হাসান (পঞ্চগড়) ও মমিনুল ইসলাম বাবু (কুড়িগ্রাম)।
আরএআর