ছোট্ট মশার কামড়ে নিভে যাচ্ছে অগণিত স্বপ্ন

রাজধানীর মিরপুরের মধ্য পাইকপাড়ার মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও রাবেয়া আক্তারের সেই সংসার আজও শূন্যতায় ভরা। সাজানো-গোছানো ঘরজুড়ে এখনও পড়ে আছে পুতুল আর শোভাবর্ধক সামগ্রী, কিন্তু নেই দুই শিশু— নয় বছরের আরাফাত জাহান রাউফ ও সাড়ে ছয় বছরের ইসনাত জাহান রাইদা। ২০২৩ সালের আগস্টে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে মৃত্যু হয় এই ভাই-বোনের। মৃত্যুর দুই বছর পার হলেও বাবা-মায়ের চোখের পানি এখনও শুকায়নি।
রাউফ-রাইদার বাবা-মায়ের মতোই বুকভাঙা কান্না থামছে না বাড্ডার আব্দুল আজিজের। এক মাস আগেও হাসি-আনন্দে ভরপুর ছিল তার ঘর। বাবা-মায়ের ভরসা, পরিবারের ভবিষ্যৎ হয়ে উঠছিল ছেলে মাহিন। কিন্তু ডেঙ্গুর কবলে পড়ে সেই প্রাণবন্ত তরুণের মৃত্যু ঘটল হঠাৎ করেই। মশার কামড়ে সন্তানের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না অসহায় বাবা-মা। বুকফাটা কান্নায় তারা বারবার বলছেন, ‘ছোট্ট মশার কামড়ে জোয়ান ছেলের মৃত্যু— কিছুতেই মন মানে না।’
ডেঙ্গুতে সন্তান হারানো এমন অসংখ্য পরিবার এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না, ক্ষুদ্র একটা মশার কারণে তাদের সংসার আজ ছিন্নভিন্ন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ বছর ও চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত পাঁচ লাখ ৫৫ হাজার ৫৭ জন, আর প্রাণ হারিয়েছেন দুই হাজার ৮৩৬ জন। এই সময়ে সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল ২০২৩ সাল, যেখানে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিন লাখেরও বেশি মানুষ এবং মৃত্যু হয়েছিল এক হাজার সাতশোর বেশি রোগীর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গু এখন আর মৌসুমি আতঙ্কে সীমাবদ্ধ নয়, বরং প্রতি বছর ঘুরে আসা এক ভয়াবহ স্বাস্থ্য-সংকটে রূপ নিয়েছে।

চোখের পানি শুকায়নি রাউফ-রাইদার বাবা-মায়ের
২০২৩ সালের ২৬ আগস্ট প্রথমে বড় ছেলে রাউফের ডেঙ্গু ধরা পড়ে। দ্রুত তার প্লাটিলেট কমতে থাকে। হাসপাতালে নেওয়ার পরও আর ফিরিয়ে আনা যায়নি। ভাইয়ের মৃত্যুর শোক না সামলাতেই ছোট বোন রাইদা আক্রান্ত হয়। বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও সেও এক সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সন্তান হারানোর বেদনা সহ্য করতে না পেরে বাবা-মা ছেড়ে দেন সেই বাসা।
২০২৩ সালের ২৬ আগস্ট প্রথমে বড় ছেলে রাউফের ডেঙ্গু ধরা পড়ে। দ্রুত তার প্লাটিলেট কমতে থাকে। হাসপাতালে নেওয়ার পরও আর ফিরিয়ে আনা যায়নি। ভাইয়ের মৃত্যুর শোক না সামলাতেই ছোট বোন রাইদা আক্রান্ত হয়। বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও সেও এক সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সন্তান হারানোর বেদনা সহ্য করতে না পেরে বাবা-মা ছেড়ে দেন সেই বাসা
প্রতিবেশীরা জানান, দুই বছর পার হলেও এখনও শোকে আচ্ছন্ন পুরো এলাকা। সেই ফ্ল্যাটের বারান্দা, যেখানে দুই শিশু খেলে বেড়াত, এখন তালাবদ্ধ।
যোগাযোগ করা হলে বাবা মোহাম্মদ ইব্রাহিম তার কলিজা ছেঁড়া আদরের দুই সন্তানকে নিয়ে প্রথমে কথা বলতে রাজি হননি। পরে তিনি বলেন, ‘আমার এখনও বিশ্বাস হতে কষ্ট হয়, ছোট্ট একটা মশার কামড়ে আমার দুটি সন্তান না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছে। যখনই তাদের কথা মনে হয়, আমার বুকে কাঁপন শুরু হয়ে যায়। নিজেকে তখন আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।’
সংসারের হাল ধরার বয়সে চলে গেলেন মাহিন
মাত্র ২৪ বছর বয়সী মাহিন রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। পড়াশোনা শেষ করে পরিবারকে স্বস্তি দেওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। অথচ এক সাধারণ মশার কামড় সেই স্বপ্ন, সেই প্রাণ কেড়ে নিল। শোকে কাতর মাহিনের বাবা কেঁদে কেঁদে বললেন, ‘আমার ছেলে তো একেবারেই সুস্থ ছিল। একটু জ্বর হলো, ভাবলাম সামান্য ঠান্ডা-জ্বর। কিন্তু ডেঙ্গু ধরা পড়ার পরও বিশ্বাস করতে পারিনি এভাবে শেষ হয়ে যাবে। হাসপাতাল নেওয়ার আগেই সব শেষ।’
৬০ বছর বয়সী আব্দুস সামাদ জানান, সংসারের ভরসা ছিল তার একমাত্র ছেলে, যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিল। মাসখানেক আগে হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হয় মাহিন। প্রথমে সাধারণ জ্বর ভেবে চিকিৎসা চলছিল, কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। ডাক্তাররা জানান, প্লাটিলেট দ্রুত কমে যাচ্ছে— এটি মারাত্মক ডেঙ্গু। সব চেষ্টা ব্যর্থ করে মাত্র তিন দিনের মাথায় চলে যায় মাহিন।
আরও পড়ুন
মাহিনের বাবা সামাদ বলেন, ‘ভেবেছিলাম ছেলে পড়াশোনা শেষ করে সংসারের দায়িত্ব নেবে। এখন ঘরে ঢুকলেই শূন্য মনে হয়। বয়সে আমরা বুড়ো হয়েছি, কিন্তু ছেলেকে হারিয়ে যেন আরও ভেঙে পড়েছি।’
ডেঙ্গুর ছোবলে পাঁচ বছরে মৃত্যু ২৮৩৬, আক্রান্ত সাড়ে ৫ লাখ
২০২০ সালে করোনার প্রভাবে সংক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম ছিল। ওই বছর আক্রান্ত হয় মাত্র ১,৪০৫ জন এবং মৃত্যু হয় তিনজনের। পরের বছর ২০২১ সালে আক্রান্ত সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৮,৪২৮ এবং মৃত্যু হয় ১০৫ জনের। ২০২২ সালে আক্রান্ত হয় ৬২,৩৮২ জন এবং মৃত্যু হয় ২৮১ জনের। ২০২৩ সালে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। আক্রান্তের সংখ্যা ৩,২১,০২৭ জনে পৌঁছে যায় এবং মৃত্যু হয় ১,৭০৫ জনের। যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ২০২৪ সালে আক্রান্ত হয় ১,০১,৩৫৪ জন এবং মৃত্যু হয় ৫৭৫ জনের।
চলতি ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৪২,৫০৯ জন এবং মারা গেছেন ১৮১ জন। মাসভিত্তিক হিসাবে দেখা যায়, জানুয়ারিতে আক্রান্ত হয় ১,১৬১ জন এবং মৃত্যু হয় ১০ জনের। ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ৩৭৪ জন, মৃত্যু তিনজন। মার্চে আক্রান্ত ৩৩৬ জন হলেও কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। এপ্রিলে আক্রান্ত হয় ৭০১ জন, মৃত্যু হয় সাতজনের। মে মাসে আক্রান্ত ১,৭৭৩ জন এবং মৃত্যু হয় তিনজনের। জুনে আক্রান্ত ৫,৯৫১ জন এবং মৃত্যু হয় ১৯ জনের। জুলাই মাসে আক্রান্ত হয় ১০,৬৮৪ জন এবং মৃত্যু হয় ৪১ জনের। আগস্টে আক্রান্ত হয় ১০,৪৯৬ জন এবং মৃত্যু হয় ৩৯ জনের।
সেপ্টেম্বরের প্রথম ২২ দিনেই আক্রান্ত হয়েছে ১১০৩৩ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৫৯ জনের। অন্যদিকে, চলতি বছরে এক দিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যু হয়েছে গত ২১ সেপ্টেম্বর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে বরিশাল বিভাগে। একই সঙ্গে এই ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নতুন করে ৭৪০ জন ভর্তি হয়েছেন।
তথ্যগুলো স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করছে যে ২০২৫ সালও ডেঙ্গুর দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ায় আশঙ্কা করা হচ্ছে। মৌসুম শেষে এ বছরের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া মৃত্যুর এই গ্রাফ থামানো সম্ভব নয় : আব্দুল হামিদ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরায়ণ ও জলাবদ্ধতা, এডিস মশা দমনে স্থায়ী উদ্যোগের অভাব এবং আবহাওয়ার পরিবর্তন— সবকিছু মিলিয়েই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ছে। তাদের মতে, সমাধান শুধু মৌসুমি অভিযান নয়, বরং সারা বছরব্যাপী সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া মৃত্যুর এই গ্রাফ থামানো সম্ভব নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘ডেঙ্গু শুধু স্বাস্থ্য খাতের সংকট নয়, এটি জাতীয় অর্থনীতির জন্যও এক বড় ক্ষতির কারণ। একটি রোগীর চিকিৎসায় গড়ে কয়েক হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত খরচ হয়, আবার অনেক সময় পরিবারকে ঋণগ্রস্ত হতে হয়। আক্রান্ত রোগী সুস্থ হলেও অনেক দিন কর্মক্ষম থাকে না, এতে উৎপাদনশীলতা কমে যায়। ডেঙ্গুতে অল্প বয়সীদের মৃত্যুর ঘটনা একদিকে যেমন পরিবারকে শোকে ডুবিয়ে দেয়, পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।’
আরও পড়ুন
‘আমরা এখনও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সফল হতে পারিনি। এর কারণ— প্রথমত, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য খাত আর পরিবেশ বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। দায়িত্ব ভাগাভাগি স্পষ্ট নয়, ফলে কার্যকর পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হয় না। দ্বিতীয়ত, আমাদের শহুরে জীবনযাপন, বিশেষ করে নির্মাণাধীন ভবন, ছাদে পানির ট্যাংক, জমে থাকা বৃষ্টির পানি এডিস মশার জন্য আদর্শ প্রজননক্ষেত্র তৈরি করছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত তদারকি হয় না। তৃতীয়ত, জনসচেতনতার ঘাটতি। মানুষ এখনও ভাবে ডেঙ্গু কেবল বর্ষার সমস্যা, অথচ এখন শীতকালেও সংক্রমণ হচ্ছে।’
সৈয়দ আব্দুল হামিদ আরও বলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলায় আমাদের মৌসুমি নয়, সারা বছরব্যাপী স্থায়ী উদ্যোগ নিতে হবে। স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে ব্যক্তি পর্যায় পর্যন্ত সবাইকে সমানভাবে দায়িত্ব নিতে হবে। তা না হলে প্রতি বছর নতুন করে একই শোক, একই ক্ষতি দেখতে হবে।
বর্ষায় নয়, শীতকালেও ডেঙ্গুর বিস্তার
বাংলাদেশে ডেঙ্গু এখন কেবল বর্ষার রোগ নয়, শীতকালেও তা ছড়াচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহুরে জীবনে অনিয়মিত পানি সরবরাহ, নির্মাণাধীন ভবনে জমে থাকা পানি কিংবা অব্যবহৃত ট্যাংক— এসব জায়গা এডিস মশার জন্য সবসময় উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করছে। ফলে বৃষ্টি থাকুক বা না থাকুক, প্রজনন বন্ধ হচ্ছে না।
অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশারের মতে, ‘ডেঙ্গুর বিস্তার আর শুধু ঋতুর ওপর নির্ভর করছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মশার প্রজননকাল দীর্ঘ হয়েছে। হালকা বৃষ্টিপাত নতুন করে প্রজনন ক্ষেত্র সক্রিয় করে তোলে। আবার গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া মশার জীবনকাল ও ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। তবে অতিরিক্ত ভারী বৃষ্টি কখনও কখনও ডিম বা লার্ভা নষ্ট করে দিতে পারে। এই জটিলতা বোঝার জন্য আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে পূর্বাভাস ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি।’

‘ডেঙ্গু রোগীর উপস্থিতি আর এডিস মশার ঘনত্ব সরাসরি সম্পর্কিত। কোনো এলাকায় মশা ও রোগী একসাথে থাকলে সংক্রমণ দ্রুত ছড়ায়। কিন্তু রোগী থাকলেও মশা না থাকলে বা মশা থাকলেও রোগী না থাকলে রোগ বিস্তার পায় না। তাই এই চক্র ভাঙাই নিয়ন্ত্রণের মূল উপায়। এজন্য রোগীকে সবসময় মশারির ভেতরে রাখা দরকার, যাতে ভাইরাস নতুন করে মশায় ছড়াতে না পারে। পাশাপাশি আক্রান্ত রোগীর আশপাশ অর্থাৎ প্রায় ২০০ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে ফগিং ও স্প্রে করা জরুরি। কারণ এডিস মশা সচরাচর এর বাইরে যায় না।’
প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্নার চালু হয়েছে : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (হসপিটাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট) ডা. জয়নাল আবেদীন টিটো বলেন, ডেঙ্গু এখন জাতীয় পর্যায়ের একটি চ্যালেঞ্জ। আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিতে প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে আলাদা ডেঙ্গু কর্নার চালু আছে। সেখানে পর্যাপ্ত শয্যা সংযোজন ও ওষুধ সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রোগীদের দ্রুত সেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসক-নার্সদের বিশেষ প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। তবে মশা নিধন ও প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করা আমাদের সরাসরি দায়িত্ব নয়, এটা মূলত স্থানীয় সরকার সংস্থার কাজ।
‘জনসচেতনতা ও ব্যক্তিগত উদ্যোগ ছাড়া ডেঙ্গুর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তাই সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি নাগরিকদেরও নিজ বাড়িঘর ও আশপাশ পরিষ্কার রাখা জরুরি।’

ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন নির্দেশনা
ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা আরও সুশৃঙ্খল ও কার্যকর করতে সরকারি হাসপাতালগুলোর জন্য নতুন নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দেশের সব হাসপাতালকে অবিলম্বে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বিশেষ ওয়ার্ড চালু করতে হবে এবং একটি নির্দিষ্ট চিকিৎসা টিম গঠন করতে হবে। অধিদপ্তরের ধারণা, এ ব্যবস্থার ফলে চিকিৎসার মান বাড়বে, রোগীর ঝুঁকি কমবে এবং হাসপাতালে সেবার গুণগত মান উন্নত হবে।
নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রতিটি ডেঙ্গু রোগীর জন্য আলাদা কক্ষ বা ওয়ার্ড নির্ধারণ করতে হবে। প্রয়োজন হলে আইসিইউতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এছাড়া এনএস–১ পরীক্ষাসহ জরুরি চিকিৎসা ও পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

চিকিৎসকদের দায়িত্বও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য মেডিসিন, শিশু ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি বোর্ড গঠন করতে হবে। ওই বোর্ডের তত্ত্বাবধানে মেডিকেল অফিসার, রেসিডেন্ট চিকিৎসক এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা শুধু এ ধরনের রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত থাকবেন। পাশাপাশি হাসপাতালের বহির্বিভাগে আগত সন্দেহভাজন রোগীদের জন্যও আলাদা কক্ষ নির্ধারণ করতে হবে, যেখানে একই বোর্ড ও চিকিৎসকরা তাদের চিকিৎসা দেবেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ পদক্ষেপগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হলে চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর চাপ কমবে এবং রোগীরা আরও দ্রুত ও মানসম্মত সেবা পাবেন।
টিআই/এমএআর/
