কলেবর বাড়ছে বিজিবির, নিয়োগ পাচ্ছে ১৫ হাজার সদস্য
বীরত্ব আর শৃঙ্খলায় আধা-সামরিক বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) রয়েছে ২২৭ বছরের ঐতিহ্য। স্বাধীনতা যুদ্ধে এ বাহিনীর উজ্জ্বল ভূমিকা ছিল। বর্তমানে বিজিবি জলে, স্থলে ও আকাশপথের সুরক্ষা নিশ্চিত করে ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে রূপ নিয়েছে।
সীমান্ত রক্ষা, চোরাচালান, নারী ও শিশু পাচার এবং মাদক চোরাচালান প্রতিরোধ ছাড়াও অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পেশাদারিত্বের পরিচয় দিচ্ছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। বৈশ্বিক মহামারি করোনার মধ্যেও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে এবং সরকারি বিধিনিষেধ পরিপালনে রাজধানীসহ সারাদেশে কাজ করছে এ বাহিনী।
সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি সময়ের প্রয়োজনে বহুমুখী ভূমিকা ও দায়িত্বের কারণে বিজিবির কলেবর বাড়ছে। অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে বাড়ানো হচ্ছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। আগামী পাঁচ বছরে নিয়োগ দেওয়া হবে আরও ১৫ হাজার সদস্য
আধা-সামরিক এ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি সময়ের প্রয়োজনে বহুমুখী ভূমিকা ও দায়িত্বের কারণে বিজিবির কলেবর বাড়ছে। অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে বাড়ানো হচ্ছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। আগামী পাঁচ বছরে নিয়োগ দেওয়া হবে আরও ১৫ হাজার সদস্য।
বিজিবির কলেবর বাড়ছে
বিজিবিকে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা বাস্তবায়নে সরকার ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১’ গ্রহণ করেছে। এর আলোকে বিজিবির কমান্ড স্তর বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি কলেবর বৃদ্ধি, সীমান্তে পাকা রাস্তা তৈরি, বিজিবিতে নারী সৈনিক নিয়োগ, স্মার্ট ডিজিটাল বর্ডার গার্ড সার্ভিলেন্স অ্যান্ড ট্যাকটিক্যাল বর্ডার রেসপন্স সিস্টেমের সাহায্যে আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন, বিজিবিতে অল টেরেইন ভেহিকল (এটিভি), আর্মার্ড পার্সোন্যাল ক্যারিয়ার (এপিসি), রায়ট কন্ট্রোল ভেইকেল (আরভি), হাই স্পিড বোট (সিলভার ক্র্যাফট, হারিকেন সান ওয়েপন ১৮৭) এবং অত্যাধুনিক অ্যান্টি ট্যাংক গাইডেড ওয়েপন সংযুক্ত করা হয়েছে।
বিজিবি এখন ত্রিমাত্রিক বাহিনী
রাশিয়া থেকে কেনা দুটি এমআই- ১৭১ অ্যাটাক হেলিকপ্টারসহ বিজিবির স্বতন্ত্র অপারেশনাল এয়ার উইং উদ্বোধনের মাধ্যমে এটি পূর্ণাঙ্গ ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। নবগঠিত এয়ার উইংয়ের সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে এ বছরই প্রথম হেলিকপ্টার থেকে রেপেলিং অ্যান্ড ফাস্ট রোপিং প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেছে বিজিবি। এটি কুইক রি-অ্যাকশন ফোর্স হিসেবে সীমান্ত এলাকা, পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম এলাকাসহ যেকোনো স্থানে তড়িৎ ডেপ্লয়মেন্টের সক্ষমতা বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ
বাহিনীটি তাদের সদস্যদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। সীমান্ত ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ, চোরাচালান দমন প্রশিক্ষণ, নারী ও শিশুপাচার রোধে প্রশিক্ষণ, বিওপি কমান্ডার প্রশিক্ষণ, এনসিওস প্রশিক্ষণ, পটেনশিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর কোর্স (পিএডিসি), মর্টার কোর্স, মেশিন গান কোর্স, ক্ষুদ্রাস্ত্র ও স্নাইপার কোর্সের মতো বিশেষ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড স্কুলের (বিজিটিসি) অ্যাডভান্স ট্রেনিং ব্যাটালিয়ন। বিজিবির প্রশিক্ষণের বর্ধিত চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে চুয়াডাঙ্গায় আরও একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিদেশেও ট্রেনিং নিচ্ছেন বিজিবি সদস্যরা
বর্তমানে বিজিবি সদস্যরা বিদেশেও প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। একইসঙ্গে বিদেশি প্রশিক্ষকরা বিজিটিসিতে এসে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। প্রশিক্ষকদের মান উন্নয়নের জন্য ‘ট্রেন দ্য ট্রেনার’ কার্যক্রমও চালু রয়েছে। বাড়ানো হয়েছে প্রশিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা।
বিজিটিসির রিক্রুট ট্রেনিং আধুনিকায়ন
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১-কে সামনে রেখে বিজিটিসির রিক্রুট ট্রেনিং আধুনিকায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে রিক্রুট ট্রেনিংয়ের অগ্রগতি বিশ্লেষণ ও মূল্যায়নের জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়া তাদের নানাবিধ শারীরিক, রণকৌশল ও তাত্ত্বিক বিষয়াদি সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ আধুনিকায়ন করা হয়েছে। একইসঙ্গে নৈতিক ও নেতৃত্বের গুণাবলী শিক্ষা এবং মানবাধিকার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বিজিবিতে যুক্ত হয়েছে অ্যান্টি ট্যাংক গাইডেড ওয়েপন
বিজিবিতে অতি সম্প্রতি ইউক্রেন থেকে কেনা সিওআরএসএআর অ্যান্টি ট্যাংক গাইডেড ওয়েপন (এটিজিডব্লিউ) সংযোজন হয়েছে। এটির মাধ্যমে দূর থেকে শত্রুপক্ষের ট্যাংক সহজে ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে ধ্বংস করা সম্ভব। বিজিটিসি অত্যাধুনিক এ অ্যান্টি ট্যাংক ব্যবহারের প্রশিক্ষণ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করছে।
নবমবারের মতো বিজিবিতে নারী সদস্য নিয়োগ
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে পুলিশ বাহিনীতে প্রথম নারী সদস্যের পথচলা শুরু হয়। তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বিজিবিতে প্রথম নিয়োগ পান নারীরা। সর্বশেষ গত ১৭ জুলাই বিজিবির ৯৬তম রিক্রুট ব্যাচের সৈনিকদের চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড স্কুলের (বিজিটিসি) প্যারেড গ্রাউন্ডে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। ৯৬তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ গত ৩১ জানুয়ারি শুরু হয়। সেখানে প্রশিক্ষণ নেওয়া ৭৮৪ জনের মধ্যে ১২৮ জনই নারী সদস্য।
এ বিষয়ে বিজিটিসি কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মু. হাসান-উজ জামান বলেন, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিজিবি সদস্যদেরকে সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে গড়ে তোলার মানসে কাজ করে যাচ্ছে বিজিটিসি। রিক্রুট ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি এ প্রতিষ্ঠানে বিজিবি সদস্যদের পেশাগত দক্ষতা ও উৎকর্ষতা বৃদ্ধির জন্য নানা প্রশিক্ষণ পরিচালিত হচ্ছে।
বিজিবিতে অতি সম্প্রতি ইউক্রেন থেকে কেনা সিওআরএসএআর অ্যান্টি ট্যাংক গাইডেড ওয়েপন (এটিজিডব্লিউ) সংযোজন হয়েছে। এটির মাধ্যমে দূর থেকে শত্রুপক্ষের ট্যাংক সহজে ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে ধ্বংস করা সম্ভব। বিজিটিসি অত্যাধুনিক এ অ্যান্টি ট্যাংক ব্যবহারের প্রশিক্ষণ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করছে
তিনি বলেন, ২১ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং বিজিবির আধুনিকায়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এ ট্রেনিং সেন্টারকে সম্মান ও গৌরবের স্থান এবং জ্ঞান ও উৎকর্ষতা অর্জনের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে যুগান্তকারী কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আধুনিকায়নসহ প্রশিক্ষণ কারিকুলাম ঢেলে সাজিয়ে যুগোপযোগী করা হয়েছে। এছাড়া নিরাপদ সীমান্তের জন্য কঠোর প্রশিক্ষণের (ট্রেন হার্ড ফর সিকিউরড বর্ডার) পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
বিজিবির অগ্রগতি ও উৎকর্ষতা সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিজিবিকে একটি অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। ইতোমধ্যে সাংগঠনিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন এনে বিজিবিকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে উন্নীত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, স্মার্ট বর্ডার ম্যানেজমেন্টের অংশ হিসেবে সীমান্তে নতুন বিওপি, বিএসপি নির্মাণসহ অত্যাধুনিক সার্ভেইলেন্স ইকুইপমেন্ট স্থাপন, এটিভি ও অত্যাধুনিক এপিসি, রায়ট কন্ট্রোল ভেহিকেল, ভেহিকেল স্ক্যানার ও দ্রুতগামী জলযান সংযোজন করা হয়েছে। সম্প্রতি এ বাহিনীতে অত্যাধুনিক অ্যান্টি ট্যাংক গাইডেড ওয়েপন সংযোজিত হয়েছে। বিজিবির প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ডের কলেবর বাড়ার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে চুয়াডাঙ্গায় আরেকটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিবিকে আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন। এর প্রতিফলনে বিজিবি এখন ত্রিমাত্রিক বাহিনী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনায় বিজিবির সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আধুনিকায়ন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে ১৫ হাজার জনবল অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং ভিশন ২০৪১-এর পরিকল্পনার আওতায় বিজিবির বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের কাজ পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন হবে।
জেইউ/আরএইচ/এমএআর