রাজধানীতে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ যে দুই এলাকা
দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় দ্বিতীয় ঢেউ অধিকতর শক্তিশালী, এমনকি দ্রুত গতিতে সংক্রমণ ছড়াতেও বেশ সক্রিয়। এদিকে সংক্রমণ বৃদ্ধি ও শনাক্ত বিবেচনায় রাজধানীর দুটি এলাকাকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
শনিবার (১০ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) তথ্যসূত্রে এ খবর জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।
এমআইএস-এর তথ্যমতে, রাজধানীর রূপনগর ও আদাবর এলাকায় করোনাভাইরাস শনাক্তের হার সবচেয়ে বেশি। কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়েছেন এমন মানুষের মধ্যে রূপনগরে ৪৬ শতাংশ এবং আদাবরে ৪৪ শতাংশ মানুষের করোনা পজিটিভ এসেছে। এছাড়া আরও ১৭টি থানায় করোনা শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের ওপর।
গত ২৭ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত থানাভিত্তিক শনাক্তের হার জানাতে গিয়ে আইইডিসিআর জানায়, ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় কোভিড পরীক্ষা হয়েছে ১৪ হাজার ৩৩২ জনের। এর মধ্যে কোভিড শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ১০৩ জনের। শনাক্তের হার ৩৬ শতাংশ। আর উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় কোভিড পরীক্ষা হয়েছে ৩৬ হাজার ৭৭১ জনের। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৮৪৩ জন। শনাক্তের হার ২৯ শতাংশ।
তথ্য বলছে, উত্তর সিটির রূপনগর থানা এবং আদাবর থানা এলাকায় করোনার ‘ডেঞ্জার জোন’। এই দুই এলাকার যারা কোভিড পরীক্ষা করিয়েছেন তাদের মধ্যে আক্রান্তের হার অন্যান্য সব এলাকার চেয়ে বেশি। এর মধ্যে রূপনগরে শনাক্তের হার ৪৬ শতাংশ, আদাবর এলাকায় ৪৪ শতাংশ।
এছাড়া ঢাকার অন্য থানাগুলোর মধ্যে ১৭টি এলাকায় করোনা শনাক্তের হার ৩১ শতাংশের বেশি। ২৩টি থানায় ২০ শতাংশের ওপর এবং ৭টি থানায় ১১ শতাংশের ওপরে শনাক্তের হার বলে জানায় আইইডিসিআর।
পরীক্ষা বিবেচনায় ৩১ শতাংশের ওপরে শনাক্তের হার রূপনগর, আদাবর, শাহ্ আলী, রামপুরা, তুরাগ, মিরপুর, কলাবাগান, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, মুগদা, গেন্ডারিয়া, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, নিউমার্কেট, চকবাজার, সবুজবাগ, মতিঝিল, দারুসসালাম, খিলগাঁও থানা এলাকায়।
শনাক্তের হার ২১ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে শাহবাগ, বংশাল, লালবাগ, শাহজাহানপুর, রমনা, কামরাঙ্গীরচর, শ্যামপুর, বাসাবো, বনানী, উত্তরখান, শেরেবাংলা নগর, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী, পল্লবী, কাফরুল, ডেমরা, ওয়ারী, ভাটারা, দক্ষিণখান, খিলক্ষেত, কদমতলী, উত্তরা পূর্ব থানা ও পল্টন থানা এলাকায়।
আর শনাক্তের হার ১১ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে তেজগাঁও ডেভেলপমেন্ট ও শিল্পাঞ্চল থানা, উত্তরা পশ্চিম থানা, ভাসানটেক, গুলশান, ক্যান্টনমেন্ট থানা ও বিমানবন্দর থানা এলাকায়।
শনিবার (১০ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে , গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে দেশে নতুন করে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৩৪৩ জন। সবমিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৯৩৭ জনে। মোট মৃত্যু হয়েছে ৯ হাজার ৬৬১ জনের।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনামুক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৮৩৭ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৮ জন।
এ সময়ে ২৫ হাজার ১৮৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা করা হয়েছে ২৬ হাজার ৭৭টি। মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৯ লাখ ৭৩ হাজার ৪৮৯টি। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। মোট পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৭৭ জনের মধ্যে ৫৩ জন পুরুষ, বাকি ২৪ জন নারী। এদের সবাই হাসপাতালে মারা গেছেন। মোট মারা যাওয়া ৯ হাজার ৬৬১ জনের মধ্যে পুরুষ ৭ হাজার ২২৬ জন, নারী ২ হাজার ৪৩৫ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৭৭ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগেরই রয়েছেন ৫১ জন। এছাড়া চট্টগ্রামে ১৫, রাজশাহীতে ৩, খুলনায় ২, বরিশালে ১, সিলেটে ১ এবং রংপুরে ৪ জন মারা গেছেন।
টিআই/এইচকে