বিনামূল্যে জরায়ুমুখ ক্যান্সার টিকা পাবেন ৬২ লাখ কিশোরী
• টিকা পেতে করতে হবে নিবন্ধন
• এক দিনে হয়েছে দুই লাখের বেশি নিবন্ধন
• বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে বিশেষ ক্যাম্পেইন
জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে কিশোরীদের হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকার বিশেষ ক্যাম্পেইন করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা বাদে সাতটি বিভাগে এই কার্যক্রম শুরু হবে, যার মাধ্যমে ৬২ লাখ ১২ হাজার ৫৫৯ কিশোরীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য সরকারের।
সোমবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত এইচপিভি টিকার বিশেষ ক্যাম্পেইন সংক্রান্ত এক কর্মশালায় এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ।
তিনি বলেন, স্কুলে পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রী এবং স্কুলের বাইরে থাকা ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীরা বিনা মূল্যে পাবে এই টিকা। এক ডোজের টিকার ক্যাম্পেইন চলবে ১৮ দিন। এই ক্যাম্পেইনে ৬২ লাখ ১২ হাজার ৫৫৯ কিশোরীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য আমাদের। এই মুহূর্তে সরকারের হাতে টিকার মজুত রয়েছে ৭৯ লাখ ৪৭৮ লাখ।
ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, ভ্যাকসিনটির নাম সার্ভিক্স (জিএসকে), যা বেলজিয়ামে তৈরি। প্রতি ভায়ালে ডোজ সংখ্যা ২টি। ভ্যাকসিনটি +২° সে. থেকে +৮° সে. তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ সুপারিশ অনুযায়ী দেশের ন্যাশনাল ইমুনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি গ্রুপ অব এক্সপার্ট (নাইট্যাগ) কর্তৃক প্রদত্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়া জরুরি।
তিনি আরও বলেন, ২০১৬-১৭ সালে এইচপিডি টিকাদান কার্যক্রমের পাইলটিং হিসেবে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর, কালীগঞ্জ, কাপাসিয়া, শ্রীপুর উপজেলা এবং সিটি কর্পোরেশন জোন-০১ এর ৫ম শ্রেণির ছাত্রী ও ১০ বছর বয়সী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত কিশোরীদের এইচপিভি টিকা প্রদান করা হয়। প্রথম ধাপে ঢাকা বিভাগে ২০২৩ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে যেখানে প্রায় ২০ লাখ কিশোরীর মধ্যে ১৫ লক্ষাধিক কিশোরীকে ১ ডোজ এইচপিভি টিকা দেওয়া হয়, যা উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭৫ শতাংশ। মাইক্রোপ্ল্যান অনুযায়ী নির্ধারিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান/টিকাদান কেন্দ্রে এইচপিভি টিকা দেয়া হয়েছে। ঢাকা বিভাগের অভিজ্ঞতার আলোকে অবশিষ্ট ৭টি বিভাগে অক্টোবর-নভেম্বের ২০২৪ সালে এইচপিভি ক্যাম্পেইন শুরু হতে যাচ্ছে।
ডা. সাজ্জাদ আরও বলেন, টিকা নেওয়ার জন্য https://vaxepi.gov.bd/registration ওয়েবসাইটে গিয়ে ১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। তবে যাদের অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ নেই, তাদেরও বিশেষভাবে তালিকাভুক্ত করে টিকা দেওয়া হবে। এরইমধ্যে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত রোববার এক দিনে দুই লাখের বেশি কিশোরী নিবন্ধন করেছেন।
ইপিআইয়ের তথ্য অনুসারে, গত বছর ১৫ লাখ ৮ হাজার ১৮৩ জনকে এইচপিভি টিকা দেওয়া হয়। অর্জন হয় ৭৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা। দেশে প্রতিবছর জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত প্রায় ৫ হাজার নারী মারা যান। আর প্রতিবছর লাখে ১১ জন নারী এ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। দেশে নারীরা যত ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, তার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হচ্ছে জরায়ুমুখ ক্যান্সার।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সুফী জাকির হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম।
টিআই/জেডএস